দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের আলোচিত নেতা এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকে লড়াই করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। এ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে এমপি শামীম ওসমান। কারন এ আসনে বিএনপির প্রার্থী নয় ধানের শীষ প্রতীকটাই ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। গিয়াসউদ্দীন নির্বাচনী মাঠে থাকলে যে সুযোগটি শামীম ওসমানের ছিল সেটা আর রইলো না। যদিও এখানে বিএনপির হেভিওয়েট বেশ কজন মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে কাউকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দিতে পারেনি বিএনপি।
আগের দিন ৮ ডিসেম্বর শনিবার ঐকফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে মনির হোসাইন কাসেমী নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে তার চূড়ান্ত মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর তিনি প্রতীক ধানের শীষ বরাদ্ধ পেয়েছেন।
মনোনয়ন জমা দিয়ে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী সাংবাদিকদের বলেন, এখানে বিএনপির অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিল। কিন্তু জোটের স্বার্থে দেশের স্বার্থে সকলে গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করব। দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হতে হবে। গণতন্ত্রের সুফল ঘরে ঘরে পৌছতে হবে। আমাদের সুযোগ দেয়া হলেই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে, প্রমান করতে পারব জনগণ কাকে বেছে নেয়। অনেক দিন নির্বাচন হয়নি। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত ছিল।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপির উপর থেকে সব স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। নির্বাচনী মাঠে আপনারা সকলকে দেখতে পাবেন। কারন আমি রক্তে মাংসে সবকিছুতে বিএনপির। আমি ইসলামী একটি সংগঠন করি। কিন্তু আমি বিএনপির।
তিনি বলেন, যদি ৮০ ভাগ নির্বাচন সুষ্ঠ হয় তাহলে আমি এখানে জয়ী হবে আশা করি।’ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান সহ কয়েকশ আলেম ওলামা। তিনিও মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। পিছনে জামায়াত ইসলামী ও হেফাজত ইসলামের সমর্থন এই নেতার পক্ষে রয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন।
এদিকে রবিবার বিকেলে এ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গিয়াসউদ্দীনের পক্ষে অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মাসুম মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দল ও দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
২০ দলীয় জোট এ আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছাড় দেয়। ফলে এ আসনটিতে বিএনপির দুইজনকে মনোনিত করা হলেও তাদের মধ্যে কাউকে চূড়ান্তভাবে মনোনিত করা হয়নি। এমনকি প্রাথমিকভাবেও চিঠি পাননি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তবে তিনি বলেছিলেন তিনি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবেন। কিন্তু রবিবার তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন পত্র দাখিল করে পরবর্তীতে শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিক উন্নয়ন কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ।
সূত্রমতে, এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান এবং বিএনপির মনোনিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাদের মনোনিত করা হলেও চূড়ান্তভাবে বিএনপির দুই নেতাকে বাদ দিয়ে জোটের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনিত করা হয়।
এ আসনে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিমাংসু সাহা, ন্যাপের প্রার্থী ওয়াজিবুল্লাহ অজু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী সেলিম মাহামুদ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ইকবাল মাহামুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্র্টির প্রার্থী মাহামুদ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় জাতীয়পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দীন খোকা মোল্লার ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিমউদ্দীনের মনোনয়ন গত ২ ডিসেম্বর বৈধ ঘোষণা করে জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়া। তবে এখানে জোটের শরীক দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের খবর পাওয়া যায়নি।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এখানে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন একেএম শামীম ওসমান। এর আগের নির্বাচনে যখন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ছিল ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের চাচী চলচিত্র নায়িকা সারাহ বেগম কবরী এখানে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছিলেন মুহাম্মদ শাহআলম।
এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে এমপি শামীম ওসমান ছাড়াও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রম কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদা হাসনাত ও আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য কামাল উদ্দীন মৃধা। কিন্তু এখানে শামীম ওসমানকে এককভাবে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ।
অন্যদিকে এ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা জোর দিয়েই বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে থাকছি এটাই সত্য।’ তিনি ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে বিএনপিতে যোগদান করে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি সফর আলী ভুইয়াকে দেয়া হলেও তার মনোনয়ন বাতিল করে শামীম ওসমানকে পরাজিত করতে আওয়ামীলীগ থেকে আসা গিয়াসউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ওই সময় শামীম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা গিয়াসউদ্দীন শামীম ওসমানকেই পরাজিত করেন। পরবর্তীতে শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে চলে যান এই গিয়াসের ভয়েই। গিয়াসউদ্দীন ৯ম সংসদ নির্বাচনে কারাগারে থাকায় মনোনয়ন পাননি।
এখানে ৯ম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তিনিও কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বিএনপিতে এসে মনোনয়ন পেলেও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন। তবে এ আসনে গিয়াসউদ্দীন ও শাহআলম দুজনের কেউই গত দশ বছরে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। শাহআলমের নেতাকর্মীরা দাবি করেন শাহআলম কেন্দ্রীয় বিএনপির ডোনার এবং গিয়াসের নেতাকর্মীরা দাবি করেন গিয়াস যখন এমপি ছিলেন তখন যা কামিয়েছেন তার সিংহভাগ হাওয়া ভবনে পাঠিয়েছিলেন। যে কারনে এইদুজনের কেউই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন না। একটি মানববন্ধনেও ছিলেন না এই দুই নেতা।
তবে মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ একাধিকবার রাজপথে পুলিশের লাঠিপোটার শিকার হয়েছিলেন। বেশকবার তিনি মাসের পর মাস কারাভোগ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি তিন মাস কারাভোগ শেষে জামিনে বের হয়েই মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাক্ষাতকার দিতে যান। এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হাই রাজু ও পারভেজ আহমেদ।
গত নির্বাচনের আগে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে বেশ প্রচারণায় ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক পৌর প্রশাসক আবদুল মতিন প্রধান। মতিন প্রধান ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। সেন্টু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেননি। তিনি এখন শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন নিয়মিত। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন।’ এ নির্বাচনেও সেন্টু মনোনয়ন চেয়েছিলেন।