রোকেয়া দিবসের সমাপনী উপলক্ষে মহিলা পরিষদের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সান নারায়ণগঞ্জ

রোকেয়া দিবসের সমাপনী উপলক্ষে মহিলা পরিষদের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সুলতানার স্বপ্ন পূরণ অভিযাত্রা (সাইকেল রান) অনুষ্ঠিত হয়।

৫ ডিসেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ জেলার শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের উদ্যোগে রোকেয়া দিবসের সমাপনী অনুষ্ঠান দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম পর্বে সকাল ৮ টায় সুলতানার স্বপ্ন পূরণে অভিযাত্রা (সাইকেল রান) অনুষ্ঠিত হয়।নারায়ণগঞ্জ সিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে উদ্বোধনী ঘোষণা করেন জেলা সভাপতি রীনা আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন জেলার সাবেক সভাপতিদ্বয়- আনজুমান আরা আকসির ও লক্ষ্মী চক্রবর্তী। সাইকেল রান শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রদক্ষিণ করে খানপুর হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন নভেরা সাইকেলিং গ্রুপ।

দ্বিতীয় পর্বে জেলা সভাপতি রীনা আহমেদের সভাপতিত্বে “আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান” নারায়ণগঞ্জ সিটি পার্কের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বরেণ্য লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, নারায়ণগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আতিয়া সুলতানা, নভেরা’র প্রতিষ্ঠাতা ডা: ফারজানা হোসাইন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুন। পরিচালনা করেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক শাশ্বতী পাল। আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, কেন্দ্রীয় সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগমসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং জেলা ও পাড়া সদস্যরা।

সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সদস্যবৃন্দ। কবিতা আবৃত্তি করেন জেলা সদস্য ফাহমিদা আজাদ। রচনা প্রতিযোগিতা ১ম, ২য় ও ৩য় হয়েছেন যথাক্রমে পুজা সাহা, সামন্তী রায় ও ফাতেমা মোস্তফা। সুলতানার স্বপ্ন পূরণ অভিযাত্রায় (সাইকেল রান)১ম, ২য় ও ৩য় হয়েছেন যথাক্রমে খাদিজা আক্তার শিখা, সামিয়া আলী ও নীলিমা মল্লিক। তাদের রোকেয়া রচনাবলী ও সুলতানার স্বপ্ন বই উপহার দেয়া হয়।

এবছর আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সারা দেশব্যাপী রোকেয়া দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে। নারায়ণগঞ্জ জেলাও বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা, তাঁর বিখ্যাত লেখনি “সুলতানার স্বপ্ন” নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা, পাঠচক্র, রচনা প্রতিযোগিতা, সাইকেল রান, পত্রিকায় লেখা প্রকাশসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকের এই অনুষ্ঠান।

বক্তারা বলেন- বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী জাগরণ ও নারী শিক্ষার অগ্রদূত। তাঁর জন্ম না হলে এই উপমহাদেশে নারী জাগরণ তথা।সামাজিক উন্নয়ন ঘটতে আরো সময় লাগতো। বেগম রোকেয়া ছিলেন একাধারে বাঙালি লেখক, সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাগরণের অগ্রদূত।তার জন্ম ও শৈশব কাটে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এবং তিনি নারীশিক্ষা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম নারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম ‘সুলতানার স্বপ্ন’, “অবরোধবাসিনী” গ্রন্থের মধ্য দিয়ে নারীর শিক্ষা ও অধিকার তুলে ধরেছেন। অবাক বিস্ময়ে ভাবতে হয়, ঐ সময়ে তিনি কিভাবে এই স্বপ্ন দেখেছেন? মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া বুঝেছিলেন- নারীকে বাদ দিয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নত হতে পারে না। নারী ও পুরুষ উভয়েই শিক্ষা লাভ করে মিলেমিশে কাজ করলে একটি জাতি একটি রাষ্ট্র উন্নত হবে। সেই সময় শিক্ষার আলোকবর্তিকা বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন আমরা আজও দেখি, কিন্তু সেই তুলনায় সুযোগ সৃষ্টি হয় না। সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। আজ এই ক্রান্তিকালে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই দেশ উন্নত হবে।