সান নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপি থেকে গঠিত মহানগর বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্ব সামনে থেকে দিয়েছেন ১৩টি বছর। ২০০৯ সালে তৎকালীন শহর বিএনপির সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন এটিএম কামাল। ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলেও এরপর টানা ২০১৭ সাল পর্যন্ত একই পদে তিনি দায়িত্ব পালন করে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজনীতিকে সচল রেখেছেন। ২০১৭ সালে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে বলা যায় আওয়ামীলীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে এটিএম কামাল সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে ১৩টি বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
দীর্ঘ এই ১৩টি বছরে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে এক অগ্রদূত ছিলেন এটিএম কামাল। পুলিশি হামলা লাঠিপেটাতেও বিএনপির ব্যানার ছেড়ে কখনো পালিয়ে যাননি তিনি। রাজপথ থেকে একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিএনপির ডাকা প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে কারনে আন্দোলন সংগ্রাম আসলেই পুলিশের টার্গেটে ছিলেন এটিএম কামাল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে পুলিশ সরাসরি ঘোষণা দেয় এটিএম কামালকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই গুলি করা হবে।
ওই সময় এটিএম কামালকে ধরিয়ে দিতে তার স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের লোকজনের উপর অত্যাচার শুরু করে দেয় পুলিশ। আড়ালে আবডালে আত্মগোপনে থেকে যখন এটিএম কামাল আন্দোলন করে আসছিলেন তখন তার সাদাসিদে অরাজনৈতিক কলেজ পড়ুয়া একমাত্র ছেলে নাহিন মুজতোবা সোহানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় সদর থানা পুলিশ। ছেলেকে থানায় আটকে রেখে পরিবারের লোকজনকে চাপ দেন যেনো এটিএম কামালকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এটিএম কামালের স্ত্রীর আর্তনাদের কারনে এবং তৎকালীন মিডিয়ার সমালোচনায় পড়ে পুলিশ সোহানকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
দীর্ঘ ১৩ বছরের মধ্যে ৩ বছরের কাছাকাছি বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন এটিএম কামাল। এটিএম কামাল যতবার গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে সেই সময় ততবার মিছিলও করেননি। ফলশ্রুতিতে নিজ দলের হিংসাপরায়ন লোকজন বলতে শুরু করলো এটিএম কামাল স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু একজন নেতার সবচেয়ে বড় গুণ কর্মীদের ফেলে পালিয়ে না যাওয়া। সেই কাজটি করতেন তিনি। তিনি কখনো রাজপথে কর্মীদের বিপদে ফেলে পালিয়ে যাননি, দলের ব্যানার ছেড়ে পালিয়ে যাননি। পুলিশ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করলেও কামাল সেই ব্যানার বুকে চেপে ধরতেন। পুলিশের বেদম পিটুনি খেতেন তবুও তিনি ব্যানার ছাড়েননি, নেতাকর্মীদের রাজপথে রেখে পালিয়ে যাননি। কর্মীদের গ্রেপ্তার থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিকবার। শত লাঞ্ছনা বঞ্চনা অপবাদ নিয়েও দলের হাল ধরে রেখেছিলেন এই এটিএম কামাল।
সেই এটিএম কামালকে ২০২২ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করায় তৈমূর আলমের সঙ্গে তাকেও বহিষ্কার করে দেয় বিএনপি। কিন্তু তবুও তিনি বিএনপির ছায়াতল থেকে কোনো দলে যাননি। এটিএম কামালকে ২৬ নভেম্বর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে ফিরে আবারো নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি কাঁপাবেন রাজপথের এই নেতা।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে অন্যদিকে আরো জানাগেছে, ১৭ বছর পূর্বে দেশ, দল ও জিয়া পরিবারের চরম দুঃসময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দলের প্রথম যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর সু-চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবীতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছিলেন এটিএম কামাল।
১/১১ পরবর্তি মঈনুদ্দীন-ফকরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে ২১ আগষ্ট ২০০৮ সালে জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন এটিএম কামাল সহ বিএনপি ও এর অঙ্গদলের ১০ নেতাকর্মী।
সে সময় টানা ১২ দিন অনশন করে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা এটিএম কামাল। তার এই আমরন অনশন বাংলাদেশের ইতিহাসে কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। শহীদ জিয়ার পরিবার ও দলের প্রতি এটিএম কামালের আনুগত্যের সেই ঘটনাটি এখনো নারায়ণগঞ্জবাসী সহ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে স্মরনীয় হয়ে আছে।
উল্লেখ্য, তৎকালিন সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জীবনের ঝুকি নিয়ে দল ও জিয়া পরিবারের দুঃসময়ে ২০০৮ সালের ২১ আগষ্ট শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এটিএম কামাল আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। সেই সময় তার এই আমরণ অনশন কর্মসূচি চলে টানা ১২ দিন ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
সে সময় এই কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে অনশনে অংশগ্রহন করেন তৎকালীন জাসাসের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ স্বপন, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সদস্য ও জেলা শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নজরুল ইসলাম, নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী দীপু, ছাত্রদল নেতা দিদার খন্দকার, আমির হোসেন কামাল, কামরুজ্জামান, হাফেজ মামুন, হাফেজ শিবলী ও মহিলা দল নেত্রী ডলি আহমেদ।
টানা ১২ দিন আমরণ অনশনের ওই সময় বেশ কয়েকবার এটিএম কামালের শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটে। ২০০৮ সলের ২ সেপ্টেম্বর থেকে রোজা শুরু হবে বিধায় ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় আলেম-ওলামাগণ, বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও চারদলীয় ঐক্যজোটসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুরোধে এটিএম কামাল তার মা প্রবীণ মহিলা দল নেত্রী শাহানা খানম চৌধুরীর হাতে ফলের রস পান করে অনশন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন।
আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিতের দুই দিন পরেই ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান ও ১১ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সেনা সমর্থিত অবৈধ সরকারের কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেলা বিএনপির প্রয়াত নেতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এই আমরণ অনশন কর্মসূচি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।


