সান নারায়ণগঞ্জ
মডেল ডি ক্যাপিটাল লিমিটেডের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ। স্থানীয়দের মাঝে তিনি মডেল মাসুদ পরিচিত। একইভাবে প্রাইম গ্রুপের কর্ণধার আবু জাফর আহমেদ বাবুল। তিনিও স্থানীয়দের মাঝে প্রাইম বাবুল নামে পরিচিত। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তারা বিএনপি নেতা বনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ভাগিয়ে নিতে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির ধানের শীষ মার্কাটি। বিগত সাড়ে ১৫ বছর যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেইসব নেতাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরপাক খাচ্ছে মডেল মাসুদ ও প্রাইম বাবুলের অঢেল টাকার নিচে। কিছু কিছু নেতারাও ব্যক্তিস্বার্থে শিল্পপতির ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। যদিও অনেকে মনে করছেন মহানগর বিএনপির নেতৃত্বের দূর্বলতাও অন্যতম এর কারন।
শুরুতেই মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা যখন মাসুদকে বিএনপির নেতা হিসেবে অস্বীকার করে আসছিলেন, ঠিক সেই সময় গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের হাত থেকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম নেন মাসুদ। তবে প্রাইম বাবুল সেটাও পারেননি। মাসুদ দুই যুগ পূর্বে যুবদলের ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে পারলেও প্রাইম বাবুল কোন জনমে বিএনপির রাজনীতি করেছেন সেই স্বপক্ষে তার কোনো যুক্তি তর্ক উক্তি প্রমাণ নাই। উল্টো তিনিই বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছেন। উনার হাতে বিএনপির সদস্য ফরম ওঠলো কিভাবে সেটাও জানেনা স্থানীয় নেতারা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্টের পূর্বে ‘আমি বিএনপি করি কিংবা বিএনপির সমর্থক’ এমন কোনো উক্তিও দেখাতে পারবেনা মডেল মাসুদ ও প্রাইম বাবুল। অথচ এখন তারা বিএনপির শীর্ষ নেতা বনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও নেতাকর্মীদের মাঝে তারা বিএনপি হয়ে ওঠতে পারেননি। নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাদেরকে বিএনপি নেতা নন, তাদেরকে মডেল মাসুদ ও প্রাইম বাবুল নামে চিনেন। তাদের নামের আগে এটাই বিশেষণ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন যখন কাছাকাছি সময় চলে আসছে, তখন নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেদের জাহির করছেন মাসুদ ও বাবুল। একই সঙ্গে প্রাইম বাবুল দাবি করে যাচ্ছেন তাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তার বিএনপির রাজনীতি করার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন হলে তিনি জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি তিনি তদবির করে ঘোষণা করিয়েছেন। এই আসনে বেশকটি শোডাউনও করেছেন প্রাইম বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর মিশনপাড়া এলাকায় পূর্বের ফার্নিচারের দোকানগুলোকে উচ্ছেদ করে বিএনপির ব্যানার লাগিয়ে ব্যক্তিগত কার্যালয় বানিয়েছেন ৪ মাসের জন্য। অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন, যদি তিনি মনোনয়নই পাবেন দাবি করছেন এবং এমপি হবেন, তাহলে কার্যালয় কেন ৪ মাসের জন্য নিলেন? সুতরাং তিনি নিজেও জানেন তিনি মনোনয়ন পাবেন না। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়েই বিএনপি নেতা বনে যাওয়ার চেষ্টা মাত্র। ১৭ অক্টোবর বন্দরে প্রাইম বাবুলের শোডাউনে দেখা গেলো বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা, মহানগর বিএনপির সদস্য হাবিবুর রহমান দুলাল ও বরকত উল্লাহর মত নেতাদের।
বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান না করলেও প্রাইম বাবুলের কার্যালয় ঘুরে গেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল সালাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী শফু। ১৮ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহামুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিকেও দেখা গেছে তার কার্যালয় ঘুরে যেতে।
অন্যদিকে মডেল মাসুদ কোনো কার্যালয় না খুললেও তার ফ্যাক্টরীটিই হয়ে ওঠেছে কার্যালয়। যদিও সেখানে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তবে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, আনোয়ার হোসেন আনু, সদস্য বিল্লাল হোসেন, ফারুক হোসেন, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ, ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কু, ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, যুবদল নেতা সরকার আলমের মত বিএনপির বহু প্রভাবশালী নেতাদের নিজ বলয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন মাসুদ।