যে অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার, সেই অভিযোগ আদালতে মিথ্যা প্রমানিত!

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ সহ যুবদলের সকল পদ থেকে আশরাফ ভুঁইয়াকে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারী বহিষ্কার ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। অথচ যেই অভিযোগে যুবদল নেতা আশরাফ ভুঁইয়াকে বহিষ্কার করা হলো, সেই অভিযোগ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। যুবদল নেতার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন এবং গণমাধ্যমে মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পর তাদের অপরাধের বিষয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন আদালত। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এই ঘটনায় স্বস্তি ফিরেছে সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের রাজনীতিতে। নেতাকর্মীরা আশা প্রকাশ করে বলছেন, নির্দোষ প্রমানিত হওয়ায় আশরাফ ভুঁইয়াকে স্বপদে দায়িত্ব ফিরিয়ে দিবে কেন্দ্রীয় যুবদল।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন সংগ্রাম করে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে ও যুবদলের রাজনীতিতে সরব ছিলেন আশরাফ ভুঁইয়া। যুবদলের আহ্বায়ক যখন উপজেলা যুবদলের রাজনীতি থেকে দূরে সরেছিলেন, তখন সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলকে একাই নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুবিধাভোগী জাতীয়পার্টি ও আওয়ামীঘেষা ব্যক্তিরা হালুয়ারুটি খেতে বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে দলের ত্যাগী কর্মী আশরাফ ভুঁইয়াকে মাইনাসের ষড়যন্ত্রে নামেন। যেই ষড়যন্ত্রের ফলে তাকে যুবদল থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। অবশেষে যুবদল নেতার পক্ষে সত্যের জয় হয়েছে আদালতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে।

ঘটনা সুত্রে, ১৭ জানুয়ারী স্থানীয় ও জাতীয় বেশক’টি পত্রিকায় ‘যুবদল নেতার বিরুদ্ধে কোটি টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ১৫ জানুয়ারী এ এন্ড জেড টেক্সটাইল মিলসের কোটি টাকার মালামাল লুট ও মিথ্যা চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে পুজি করে যুবদল নেতা আশরাফ ভুঁইয়াসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মিথ্যা লিখিত অভিযোগ দেন এ এন্ড জেড টেক্সটাইল মিলসের মালিক আনোয়ার হোসেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন ও গোলজার হোসেন সহ তাদের বাহিনী চাঁদা দাবি করায় তাদের বাহিনীর ৭জনের বিরুদ্ধে ২২ জানুয়ারী আদালতে মামলা দায়ের করেন এমদাদুল হক দিপু। চাঁদাবাজির মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই দিনেই আনোয়ার হোসেন, আওয়ামীঘেষা গোলজার হোসেন ও শহিদুল্লাহ মিথ্যা অভিযোগ তুলে সোনারগাঁয়ে আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এই ঘটনায় গোলজার হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের পক্ষে একতরফা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পরদিন ২৩ জানুয়ারী কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক লিখিত বিবৃতিতে আশরাফ ভুঁইয়াকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানান।

অন্যদিকে আনোয়ার হোসেনের মিথ্যা অভিযোগে সোনারগাঁও থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করলেও আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখেন গোলজার ও আনোয়ার বাহিনী। পরবর্তীতে ২১ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোনারগাঁও আমলী আদালতে আশরাফ ভুঁইয়াকে ১নং আসামী করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মিলের কোটি টাকার মালামাল লুট ও ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন আনোয়ার হোসেন। যার মামলা নং পিটিশন-২৮/২৫। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হলে দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই তদন্তে আশরাফ ভুঁইয়ার কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদনে আশরাফ ভুঁইয়া সম্পর্কে লেখা হয়েছে, মামলার বাদী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে রূপগঞ্জ থানাধীন মাসাবো এলাকার নজরুল টেক্সটাইল মিলের পেছনের জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় আশরাফ ভুঁইয়াকে লুটপাট ও চাঁদাবাজির মামলায় মিথ্যাভাবে আসামী করেছেন বাদী। আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল ‘ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যাচেষ্টা’ শিরোনামে একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় গোলজার হোসেনের বিবৃতিতে আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হলে ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রূপগঞ্জ আমলী আদালতে গোলজার হোসেনকে আসামী করে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন আশরাফ ভুঁইয়া। যার মামলা নং পিটিশন-১৭৮/২৫। মামলাটির তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালত। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে গোলজার হোসেনের মিথ্যা বিবৃতিতে মিথ্যা সংবাদের সত্যতা পেয়ে গোলজার হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অন্যদিকে এর আগে বিগত ১৬ ফেব্রুয়ারী অপরাধমুলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির অভিযোগে শহিদুল্লাহ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোনারগাঁও আমলী আদালতে ইয়ামিন ভুঁইয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। যার পিটিশন মামলা নং ৬৪/২০২৫। এই মামলাটিও পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ তদন্ত শেষে শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এই মামলায় আদালত শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারি করেছেন।

এই ঘটনার পর সোনারগাঁও উপজেলায় যুবদলের নেতাকর্মীরা প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় আশরাফ ভুঁইয়ার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে গেল। নেতাকর্মীরা দাবি তুলেছেন, অবশেষে আদালতে প্রমানিত হয়েছে রাজপথের সক্রিয় নেতা আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নেতাকর্মীদের দাবি- আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সহ স্বপদে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হোক নেতৃত্বে। আওয়ামীলীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আশরাফ ভুঁইয়া তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। একজন পরিচ্ছন্ন নেতাকে নেতৃত্বের বাহিরে দেখতে চায়না সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা।