বিএনপির দুই নেতার মাধ্যমে সোনারগাঁয়ে খাল ভরাট করছে আল-মোস্তফা গ্রুপ কোম্পানী

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নদী ও সরকারী খাস জমিতে আল-মোস্তফা কোম্পানির পক্ষে বালু ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ারচর এলাকায় মেঘনা নদীর শাখা মারীখালি রাতের আধারে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ফেলে এ জমিগুলো দখল করেছে।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ ও তার ছোট ভাই পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিএনপি নেতা দাবি, তারা নিজের ও আল- মোস্তফা কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করেছেন। সেখানে কোন নদীর জায়গা নেই।

জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ার চর ব্রীজ এলাকায় মেঘনা নদীর শাখা মারীখালি নদীর জায়গা ও সরকারী খাস জমি দখল করে আল-মোস্তফা কোম্পানিকে বালু ভরাট করে দেন আব্দুর রউফ ও তার ভাই আব্দুল জলিল। ওই কোম্পানি পক্ষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জমির বালু ভরাট করেন। ফলে এ নদীতে বিভিন্ন নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এ নদীতে গোসল করা থেকে শুরু করে রান্নাবান্নার পানি নেওয়ার জন্য এ স্থান ব্যবহার করতো। বর্তমানের বালু ভরাট করে ফেলার কারনে তা আর সম্ভব হবে না। মানুষের মাছ ধরার জীবিকাও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। নদীর জমির পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা জায়গাও দখল নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে তারা দুই ভাই ওই এলাকায় দখলের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সড়ক জনপথের জায়গা দখল করে দোকান পাট নির্মাণ, অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করে চুনা কারখানা নির্মাণ, জমি দখল, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করে লুটপাট থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রথম সারির এক নেতা জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে আব্দুর রউফ ও তার ভাই আব্দুল জলিল তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে উৎপাত ও লোকজনকে মারধর শুরু করেন। এক সময় আল-মোস্তফা কোম্পানির বিরোধীতা করলেও এখন তারা ওই কোম্পানির পক্ষেই অবস্থান নিয়ে নদীর জায়গায় বালু ভরাটের মাধ্যমে দখল করে দেয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আষাঢ়িয়ার চর ব্রীজের পূর্ব পাশে বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে শাখা নদীতে বালু ভরাট করে রাখা হয়েছে। মারীখালির নদীর মধ্যভাগে বাঁশের খুটি ও বেড়া দিয়ে বালু ভরাট করে। সেখানে গেলে তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। তবে বালু ভরাট কাজ করতে আসা এক ব্যক্তি জানান, আব্দুর রউফ ও জলিল আল-মোস্তফা নামের কোম্পানির বালু ভরাট করেছেন।

আষাঢ়িয়ার চর গ্রামের মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ নদী ভরাট প্রতিদিন রাতে বেলায় হয়েছে। দিনের বেলায় কোন কাজ করা হয়নি। এ অঞ্চলের সকল প্রকার দখলে এখন আব্দুর বউফ পরিবার জড়িত। বর্তমানে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

অভিযুক্ত সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ স্থানীয় গণমাধ্যমে দাবি করেন, এখানে কোন নদীর জায়গা নেই। আমার জায়গা ও কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করা হয়েছে। নদী আরো এক প্লট পরে রয়েছে।

কোম্পানীর চেয়ারম্যান আল-মোস্তফা স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দাবি করেন, এলাকাবাসী জায়গা ভরাট করছে। আমাদের কোম্পানীর জমি রয়েছে। আমাদের জমি ভরাট হচ্ছে। আমাদের জমি থেকে আড়াইশ’ ফুট দুরে হচ্ছে খাল। বিআইডব্লিউটিএ লোকও মাপছে। এখন যেহেতেু বর্ষাকাল, সব জায়গায় খাল দেখা যায়। আমরা ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।

হোসেনপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু ভরাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দখলদারদের তাদের স্বপক্ষের কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ড কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌফিকুর রহমান স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, সরকারি খাস সম্পত্তি ও নদীর জায়গা কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। ঘটনা স্থলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। দখলের প্রমাণ পাওয়া গেলে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআইডব্লিউটিএ মেঘনা ঘাট নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বলেন, শাখা নদীগুলো বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেখবাল করবেন। কেউ নদীর জায়গা দখল করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।