সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও নির্বাচনী প্রচারণায় পুরোদমে নামতে পারেনি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ ৭ জন প্রার্থী। মুলত এখানে মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের সমর্থিত ও দলীয় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আরও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়া বাকি প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পারেনি। বর্তমান পরিস্থিতি অনুমেয় তাদের পরাজয় এখন অভিসম্ভাবী। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগেই তারা নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাড়িয়েছে। নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় ব্যর্থ হয়ে তারা নারায়ণগঞ্জে এসে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে মন্ত্রী গাজীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। এখন তাদের নেতাকর্মীরা পরাজয়ের দিন গুণছেন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ ৭ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে পাট ও বস্ত্র গাজী গোলাম দস্তগীরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন। ২৩ মার্চ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন। তবে যারা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন নির্বাচনে তারা সকলেই মন্ত্রী গাজীর অনুগামী নেতাকর্মী হিসেবে রাজনীতি করে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীর অভিযোগ করেন- মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তসীর নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামীলীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আরও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান পক্ষে প্রভাব বিস্তার করছেন। ওই তিনজন প্রার্থীর বাহিরে অন্যান্য প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করতে গেলে হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। এতে নির্বাচনী প্রচারণা বাধাগ্রস্থ করছেন মন্ত্রী গাজী। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের তাবিবুল কাদির তমাল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তালা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজ, টিয়া পাখি প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ স্বপন ভূঁইয়া, টিউবওয়েল প্রতীকে মোতাহের হোসেন নাদিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকে নাসরিন আক্তার চম্পা, সেলাই মেশিন প্রতীকে হ্যাপী বেগম ও কলস প্রতীকের প্রার্থী শায়লা তাহমিন সিথী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগে জানান, পাট ও বস্ত্রী মন্ত্রী গাজীর হস্তক্ষেপে নির্বাচনী প্রচারে ৩ জনের একটি প্যানেল করা হয়েছে। এই প্যানেলে তিন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীকে সোহেল আহম্মেদ ভূঁইয়া ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসঁ প্রতীকের প্রার্থী ফেরদৌসী আক্তার নীলা রয়েছেন। এই তিন প্রার্থী ছাড়া বাকি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা, গণসংযোগ ও মাইকিং করার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে অন্য প্রার্থীরা কোন প্রচার প্রচারণা চালাতে পারছেনা এবং প্রার্থীদের প্রকাশ্যে ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতি দেয়া হচ্ছে। প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মী সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। প্রার্থীদের পোস্টার ছিড়ে ফেলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে আইনশঙ্খলা বাহিনী কোন সহযোগিতা করছেননা।
সংবাদ সম্মেলনে বেশকটি ছবি দেখিয়ে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তমাল অভিযোগ করেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ৭টি মাইক ও মাইকের মেশিন ভেঙে ফেলে তাঁর গাড়ির চালককে মারধর করা হয়েছে। এছাড়া তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি তাঁর নিজের গাড়িতেও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আক্রমন করা হয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান হারেজ অভিযোগ করেন, গত ১৫ মার্চ মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ইছাপুরা এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে সোহেল আহম্মেদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হামলা করেছে। নির্বাচনী সকল প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ স্বপন ভূইয়া অভিযোগ করেন, তাকে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সিথি অভিযোগ করে বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়াম্যান পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ উন্মুক্ত থাকলেও মন্ত্রী বিভিন্ন গোপন বৈঠক করে আমাদের বাধা দিচ্ছেন। এটি নির্বাচনী আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি ওই তিন প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার ব্যাপারেও নির্দেশনা দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর মনোনিত তিন প্রার্থীর নাম ও প্রতীক খচিত প্রচারপত্র তুলে ধরেন তিনি।