সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিউিটশন স্কুল এন্ড কলেজের গেটে লাগানো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাঙ্গার নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের মহাজোটের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকেই দায়ী করে এমপি খোকাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হয়তো এমপি খোকা আমার নামফলকটি ভাঙ্গোনি, কিন্তু হয়তো তুমি (এমপি) নির্দেশ দিয়েছো তোমার লোকজন ভেঙ্গেছে। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।’ একই সঙ্গে এই ঘটনায় সমস্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন প্রবীণ এই আওয়ামীলীগ নেতা।
২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদের তিনদিন ব্যাপী কর্মবিরতির কর্মসূচির শেষ দিনে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জে গত ১৭ নভেম্বর একটা দুঃখজনক ঘটনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ১৭ তারিখ থেকে আজকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত আমার পক্ষ থেকে মুখ খোলা হয়নি। তার নিন্দাও আমি জানাইনি। নিন্দা জানিয়েছে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা যারা আমাকে ভালবাসে দলকে ভালবাসেন।
তিনি আরও বলেন, পুরো জেলায় জেলা পরিষদের উন্নয়ন বিস্তৃত লাভ করেছে। তারই উন্নয়নের অংশ হিসেবে সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজে ২০ লাখ টাকার বরাদ্ধ দিয়েছিলাম। সেই বরাদ্দের নামফলকটি আমার নামে ছিল। ইর্ষান্বিত হয়ে খোকা সাহেব এই কাজটি করলেন। খোকা আমার অন্তত ছোট। আজকে নারায়ণগঞ্জে যতগুলো এমপি রয়েছে সবাই আমাকে গুরু বলে সম্বোধন করে। অনেককেই আমি রাজনীতিতে হাতেখড়ি দিয়েছি। রাজনীতি কাকে বলে সেই শিক্ষা আমি তাদেরকে দিয়েছি। সন্ত্রাস মস্তান ভুমিদস্যূতার আদর্শের শিক্ষা আমি দেইনি। আজকে এটাই আমার দুঃখ যাদেরকে আমি রাজনীতিতে শিক্ষা দিলাম তারাই আজকে আমার উপর চড়াও হয়, তারাই আমার নামফলক ভাঙ্গে। এক সময় যারা আমাকে গুরু হিসেবে আখ্যায়িত করতো তারাই আজকে এসব কাজগুলো করছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, যাদেরকে আমি রাজনীতিতে শিক্ষা দিয়েছি, যাদের রাজনীতি আমার হাতেখড়ি, তাদের হাতেই আমি নিগৃহিত হয়েছি। এ কারনেই হয়েছি, কারন আমি মানুষের কথা বলেছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে শিখিয়েছেন মানুষের জন্য রাজনীতি। বয়সে খোকা আমার অনেক ছোট। নারায়ণগঞ্জের সকল এমপিরাই বয়সে আমার ছোট।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি কাউকে কোন খাটো করতে চাইনা। কাউকে কোন দোষ দিতে চাইনা। যার দোষ সে নিশ্চয় তার কৃতকর্ম ভোগ করবে। আমরা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। ওই পৃথিবীতে গিয়ে একদিন আমাদের এই কৃতকর্মের জবাব দিতে হবে। আমি যদি ভাল কাজ করে যাই তাহলে আল্লাহ আমার জন্য ভাল কিছ্ইু রাখবেন। আর যদি খারাপ কাজ করে যাই তাহলে আমার ভাগ্যে খারাপের জবাব দিতে হবে। আজকে লিয়াকত হোসেন খোকা ছোট মানুষ, খোকা আমার বয়সে অন্তত ছোট। তোমাকে আমি সেই ছোটকাল থেকে দেখেছি। আজকে তুমি এমপি। হয়তো তুমি নিশ্চয় ভাল কাজ করেছিলে যার আশীর্বাদে তুমি হয়তো এমপি হয়েছো। সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান। সেখানে মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার কারনেই তুমি এমপি হয়েছো, শুধু জাতীয়পার্টির প্রার্থী হিসেবে তুমি সেখান থেকে পাশ করতে পারতে কিনা আমার সন্দেহ হয়। তারপরেও তোমাকে আল্লাহ হেদায়েত করুক এই প্রার্থনা করছি। তুমি ভুল করেছো তোমার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। কারন ক্ষমাই পরম ধর্ম। আমার কাছে আর ক্ষমা চাওয়ার দরকার নাই। তুমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চাও। আল্লাহর কাছে বলো ‘আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দেও কারন আমি আমার গুরুর নামফলকটা ভেঙ্গেছি বা ভাঙ্গাইছি।’ খোকা হয়তো তুমি নির্দেশ দিয়েছো ভাঙ্গছে তোমার লোকজন। আজকে আমি মুখ খুললাম, আমি খোকাকে অভিশাপ দিচ্ছিনা, খোকাকে খারাপও বলছিনা। তার কৃতকর্মের জন্য সংশোধনের সময় আসবে। কারন অনেকেই আমার সঙ্গে বেয়াদবী করে আবার বাসায় গিয়ে পায়ে ধরে ক্ষমা চায়, বলে ‘গুরু ভুল হয়ে গেছে আপনি ক্ষমা করে দিন।’ হয়তো একদিন সেও ক্ষমা চাইবে। আল্লাহকে বিশ^াস করি। আল্লাহতাআলা বলেছেন ক্ষমাই পরম ধর্ম। আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দেই। আমি খোকাকেও ক্ষমা করে দিলাম। খোকা তোমার অনুশোচনা যদি কোনদিন আসে তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেও।
এরপর তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, করোনার কারনে এই আন্দোলন আর সামনে নিতে চাই না। সামনে করোনা ভয়াবহ হতে পারে। অনেকেই করোনায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। যারা এই বিষয়ে আন্দোলন করেছেন তাদেরকে জানাই সমস্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করলাম।
বক্তব্যের শুরুতে আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১৭ নভেম্বর একটা দুঃখজনক ঘটনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ১৭ তারিখ থেকে আজকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত আমার পক্ষ থেকে মুখ খোলা হয়নি। তার নিন্দাও আমি জানাইনি। নিন্দা জানিয়েছে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা যারা আমাকে ভালবাসে দলকে ভালবাসে।
যারা তার পক্ষে আন্দোলন করেছেন তাদেরকে আনোয়ার হোসেন ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ এই ঘটনায় নিন্দা না জানানোর কারনে আমি জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারছিনা বিধায় আমি দুঃখিত।
এ ছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেয়ায় আনোয়ার হোসেন জেলা আওয়ামীলীগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক হোসেন ভুঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, আলাউদ্দীন আহাম্মেদ, রোমান হোসেন ভুঁইয়া সহ জেলা পরিষদের অন্যান্য সদস্য ও জেলা পরিষদের কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ।