ছাত্রদলে রনি মাইনাসে সজীবের নীল নকশা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে মাইনাস করতে নীল নকশা তৈরি করেছেন সংগঠনটির সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাদের নিয়ে পরিকল্পনাও করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে রনিকে ছাড়াই জেলা ছাত্রদলের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে কর্মসূচি পালন করছেন সজীব। আবার সজীবের নির্দেশনায় অন্যান্য থানা এলাকায়ও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যেখানে মুল টার্গেট জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দেয়া। এ বিষয়ে একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকিরা অবস্থান নিয়েছেন সজীবের পক্ষেই।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, জেলা কমিটি যাতে নতুন করে সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলে ছাত্রদলের নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী কমিটিতে মশিউর রহমান রনি সভাপতি হতে পারবেন না। এক্ষেত্রে সজীব হবেন সভাপতি ও সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান কমিটির একজন হবেন সেক্রেটারি। সেই লক্ষ্যেই দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। আরও জানাগেছে, যে কোন দিন চূড়ান্তভাবে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়ে সজীবের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ইতিমধ্যে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে।

তবে ছাত্রদলের ওই নেতা দাবি করেছেন- রনি ছাত্রদলকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। থানা কমিটিগুলো দেয়ার কথা থাকলেও একাই নিজের মত করে কমিটি দিতে চায়। অন্যান্য যুগ্ম সম্পাদক ও সহ-সভাপতিদের মতামত আমলেই নিতে চায়নি। যেহেতু তাদের কোন মতামত গ্রহণই করছে না রনি। তাই রনিকেই সভাপতির পদ থেকে সরানোর পরিকল্পনা।

এদিকে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের কমিটি দুটি কমিটি গঠন করা হলেও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি তাদের কেউই। পূর্বের আহ্বায়ক কমিটির পর পরবর্তীতে ১২ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হলেও সেই কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীবও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেনি। অনেক নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের একটি পদের আশায় বিয়ে করে সংসারিও হননি। অনেকেই সেই সম্ভাবনার আশাও বাদ দিয়ে অন্যান্য সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িয়েছেন।

এদিকে এক বছর পেরিয়ে গেলেও জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি রনি ও সজীব। এমনকি থানা পর্যায়ের কোন কমিটিই দিতে পারেনি তারা। এর মধ্যে দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরোধ বিভক্তি দ্বন্ধ মতপাথর্ক্য। এখন সরাসরি দুটি ভাগে বিভক্ত এখন জেলা ছাত্রদল। অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে সংগঠনটি বিশৃঙ্খল সংগঠনে পরিনত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে।

৯ অক্টোবর বুধবার কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতেও দেখা গেল নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের বিভক্তি। ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে বাদ দিয়ে অধিকাংশ নেতারা অবস্থান নিয়েছেন সেক্রেটারির পক্ষে। এরপর দিনেও সজীবের নির্দেশনায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন থানায় কর্মসূচি পালন করেন। আবার এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতেও জেলার সভাপতি ও সেক্রেটারি তাদের নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে সেখানে গিয়েছেন।

নেতাকর্মীদের সূত্রে আরও জানাগেছে, ১২ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে ইতিমধ্যে দু’চারজন নেতা পুরোদস্তর রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কমিটি গঠনের পর সভাপতি ও সেক্রেটারি দুজনই কারাভোগ করেছেন। দুজনেরই যথেষ্ট ত্যাগ রয়েছে সংগঠন করতে গিয়ে। কিন্তু কমিটি গঠনে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়েও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চরম ক্ষোভ এখন তাদের উপর। থানা পর্যায়ের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রত্যাশায় ছিলেন কমিটি গঠন করা হবে।

কমিটি গঠনের পর সাংগঠনিক নিয়ম মাফিক দু’চারটি মিটিং করতেও দেখা যায়নি তাদের। বর্ধিত সভাও করতে পারেনি ছাত্রদল। বলয় ভিত্তিক কমিটি গঠন করার চেষ্টা এবং ব্যক্তি স্বার্থের কারনে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েও আটকে গেছে বারংবার। সংগঠনের মধ্যে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। সংগঠনের সভাপতি রনির নেতৃত্বের প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে একাংশের নেতাদের। আবার দু’একজন রনির পক্ষেই রয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশরা চাচ্ছেন এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে রনির খবরদারি বন্ধ করে দিতে।

এরি মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন রনি। সেখানে তিনি পরাজিত হওয়ার পর জেলা ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীরাই এখন তার সঙ্গ থেকে সটকে পড়েছেন। এখন কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন সামনে রনিকে বাদ দিয়ে সজীবের হাতেই তুলে দেয়া হতে পারে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটিও। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সজীব কেন্দ্রে যথেষ্ট চেষ্টাও করছেন বলেও জানাগেল। যদিও সজীব এ বিষয়ে এখনও মুখ খুলেননি।

সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে আহ্বায়ক ও আনোয়ার সাদাত সায়েম, মাহাবুব রহমান, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মশিউর রহমান রনি, মঞ্জুর হোসেন ও হারুন উর রশিদ মিঠুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি।

ওই কমিটির পর গত বছরের ৫ জুন দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন।

এই কমিটিতে আগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও খায়রুল ইসলাম সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সিয়ির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এবং আরিফুর রহমান মানিককে সহ-সভাপতি, ইসমাইল মামুন, মেহেদী হাসান, মঈনুল ইসলাম রবিন, নাজমুল হাসান বাবু, মশিউর রহমান শান্ত, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম রফিককে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোহেল মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।