পুুলিশ পুলিশ খেলা ছোটবেলা থেকেই খেলি: শামীম ওসমান

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে উদ্দেশ্যে করে এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই পুলিশের লগে খেলি। এই আগডুম বাগডুম পুলিশ পুলিশ খেলা আমরা ছোটবেলা থেকেই খেলি। বাপ দাদার আমল থেকেই পুলিশ পুলিশ খেলা খেলি।’ এসময় সামনে উপস্থিত পুলিশকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, পুলিশ ভাইয়েরা আপনারা কিছু মনে কইরেন না।

শামীম ওসমান বলেন, কিছুদিন পর হয়তো দাদা হয়ে যাবো। বয়স হয়ে গেছে। সেজন্য অনেকের অনেক কিছু সহ্য করি তা নয় কিন্তু।

নারায়ণগঞ্জের পুুলিশকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, গুজবে ছেলে ধরা সন্দেহে সিদ্ধিরগঞ্জে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। কিন্তু আসামি করা হলো ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামীলীগের ৭৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি বলছেন নিরাপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবেনা, মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। আর যে পুলিশ কর্মকর্তা এটা করেছেন তার বিরুদ্ধে এসপি সাহেব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমি এসপি সাহেবের কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই।

এক এগারোর সময় শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ওই সময় একজন এএসপি ও সদর থানার ওসি আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে, আমাকে মেরে ফেলা হবে। তাদের মত পুুলিশ কর্মকর্তা এখন দেখি না। এখণ তো সবাই আওয়ামীলীগ।

নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে বলেন, প্রশাসনকে বলি কারো ইশারায় খেইলেন না। আমরা কিন্তু খেলতে জানি না। এই নারায়ণগঞ্জে জিয়াউর রহমান পারেনি, এরশাদ পারেনি, খালেদা জিয়াও পারেনি, আর এখন তো শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, তাই কেউ খেলতে গেলে আমাদের সঙ্গে পারবেন না।

এ সময় শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের বলেন, আমরা যদি চাই নারায়ণগঞ্জের সকল রাস্তা ঘাট অচল করে দিব তাহলে কি আমরা সেটা পারবো? নেতাকর্মীরা শ্লোগান তুলে বলেন ‘হ্যা’। শামীম ওসমান আবার বলেন, যদি চাই ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক বন্ধ করে দিব, যদি বলি ঢাকা-সিলেট সড়ক বন্ধ করে দিব আমরা কি এসব করতে পারবো? তখন নেতাকর্মী হ্যা সূচক শ্লোগান দেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশের একজন মধ্যম সারির পুুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের কাছে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠান আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য এমনটা অভিযোগ তুলে শামীম ওসমান বলেন, একজন মধ্যম সারির পুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে বলেন আমার লোকজনদের বিরুদ্ধে নিউজ করতো। এর বিরুদ্ধে করেন, ওর বিরুদ্ধে নিউজ করেন। আরে পুুলিশ ভাই নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকেরা নারায়ণগঞ্জের সন্তান। আপনি তাদের ম্যাসেজ পাঠান আর সেই ম্যাসেজ তারা আমাকে দেখায় এইযে দেখেন আপনার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিউজ করতে বলছে। এ বিষয়ে আমি এসপিকে বলেছি- এসপি বলেছেন ব্যবস্থা নিবেন।

৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় ‘রুখে দাড়াও স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে’ এই শ্লোগানে অনুষ্ঠিানে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। শামীম ওসমান নিজেই এই সমাবেশের ডাক দেন।

সমাবেশে শামীম ওসমান তার প্রধান প্রতিদ্বন্ধি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমার মতই একজন জনপ্রতিনিধি। তার গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত থেকে হকারদের লাথি মেরে নামিয়ে দিচ্ছেন। লাথি দেয়ার আগে একবারও চিন্তা করছেন না হকারদের পেটে লাথি মারছেন। তারা কিভাবে সংসার চালাবে? তারা কি ইয়াবা বিক্রি করে সংসার চালাবে? আমার নেত্রী আপনাকে নৌকা প্রতীক এ কারনে দেয়নি আপনি হকারদের আয়ের ব্যবস্থা না করেই তাদের পেটে লাথি মারবেন। গরীব দুঃখী মানুষের পেলে লাথি মারতে আমার নেত্রী আপনাকে নৌকা প্রতীক দেয়নি।

ব্যঙ্গ করে শামীম ওসমান বলেন, আপনি নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে এখন বলছেন আপনি কোন দল করেন না। দল বুঝেন না। আবার নির্বাচন আসলে নৌকার জন্য ভে ভে ভে করে কাঁদবেন নৌকার জন্য। সামনে আর তা হবে না। নৌকার জন্য কাঁদলেও আর পাবেন না।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ড. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি ইয়াসিন মিয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল, সেক্রেটারি শওকত আলী, সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম সহ বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

এর আগে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা পৃথক পৃথকভাবে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেন।
তবে সকাল থেকেই চাষাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়। এমনকি শামীম ওসমানের মঞ্চের সামনে ও পেছনেও পুলিশ অবস্থান নেয়। সেই সঙ্গে পুলিশের জল কামান, সাজোয়া যান, এপিসি মোতায়েন করতেও দেখা যায়। সচারাচর এমন কঠোর ব্যবস্থা পুুলিশ বিএনপি জামাতের কর্মসূচিতে নিয়ে থাকেন। সমাবেশে শামীম ওসমান ১ ঘন্টা ১৭ মিনিট বক্তব্য রাখেন।

এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন রয়েছে। ইতিমধ্যে শামীম ওসমানের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শামীম ওসমানের আপন শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর বিরুদ্ধেও একটি মামলায় মাদক ব্যবসায়ীর কথা উল্লেখ করে পুুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বেশকজন কাউন্সিলরকেও মাদক ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। শামীম ওসমান তাদের ছাড়াতে এসপি অফিসে গেলেও পুলিশ তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠান। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগের পরিবারকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ফতুল্লার বাংলা ভবনে প্রতিবাদ সভাও করেছিলেন শামীম ওসমান। যেখানে এসপি হারুনের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিয়েছিলেন। এর তিন দিন পর এসপি অফিসে যান শামীম ওসমানের আরেক ভাই জাতীয়পার্টির এমপি একেএম সেলিম ওসমান। ওইদিন এক মতবিনিময় সভায় এসপি হারুন সেলিম ওসমানকে সাফ জানিয়ে দেন, কোন মাদক ব্যবসায়ী, জুয়ারী, সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যূকে গ্রেপ্তারের পর যদি দেখা যায় লোকটি আপনাদের তাহলে কোন সমস্যা নেই। আপনারা আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন কেউ জানবে না। আমরা গ্রেপ্তার করবো অ্যাস পার ল’ আপনারা জামিন করিয়ে নিবেন।’

গত ৩১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সমাবেশে শামীম ওসমান বলেছিলেন, এখন ডাক্তার পুলিশ সবাই আওয়ামীলীগার। সবাই এখন আওয়ামীলীগ হয়ে গেছেন। তাদের ধাক্কায় আসল আওয়ামীলীগার পিছিয়ে।

ওই দিন রাতেই শামীম ওসমানের একমাত্র ছেলে অয়ন ওসমানের স্ত্রীর আপন বড় ভাই ভিকিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একজন সিএনজি চালককে মারধর ও সিএনজি ভাংচুরের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুুলিশ।

এর পরদিন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে ই-ট্রাফিকিং সেবা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে এসপি হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমরা রাজনীতি করতে নারায়ণগঞ্জে আসিনি। আমরা যাদেরকে গ্রেপ্তার করছি তাদের অনেকেই হয়তো কারো আত্মীয় স্বজন কিংবা নেতাকর্মী। যে কারনে কেউ কেউ আমাদের প্রতি রাগ হতে পারেন। আমরা এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের সেবার মানসিকতা নিয়েই কাজ করছি।

৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের বাসায় সদর থানা পুলিশ, ফতুল্লা থানা পুুলিশ ও জেলা ডিবি পুলিশ ব্লক রেইড দেয়। ওই সময় আজমেরী ওসমান পালিয়ে যায়। আজমেরী ওসমানের বাসা থেকে জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি শাহাদাত হোসেন রুপু ও মোখলেছুর রহমান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুুলিশ। ওই দিন রাতেই বাচ্চু নামের একজন ঠিকাদারের কাছে ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি ও তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় আজমেরী ওসমানকে প্রধান আসামি করা হয়। আজমেরী ওসমান হলেন জাতীয় পার্টির প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে।