শৃঙ্খলা ভঙ্গে আজাদ: আড়াইহাজারে চাচা ভাতিজায় বিএনপি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির রাজনীতি নিয়ে শুরু হয়েছে ধুম্রজাল। এখানে আড়াইহাজার বিএনপির ব্যানারে পৃথকভাবে দুটি পক্ষ কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে আসল বিএনপি কোনটি? গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেলেও নেতাকর্মী শূণ্যতায় ভুগেছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর মত নেতাকর্মীও পাননি তিনি। আড়াইহাজারে তার রাজনৈতিক অবস্থান নড়বড়ে। যেখানে আড়াইহাজার বিএনপির নেতৃত্বে এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন।

এদিকে নেতাকর্মীদের দাবি- দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠেছে নজরুল ইসলাম আজাদ ও তার চাচা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান আব্দুর বিরুদ্ধে। একজন কেন্দ্রীয় নেতা ও আরেকজন জেলা বিএনপির নেতা হয়ে তারা ‘আড়াইহাজার বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন’ ব্যানারে আড়াইহাজারে কর্মসূচি পালন করছেন। যা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ। কারন তাদের দুজনেই কেউই আড়াইহাজার বিএনপির দায়িত্বশীল কোন নেতা নন।

জানাগেছে, ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে আড়াইহাজার উপজেলাধীন সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচরুখী এলাকায় ‘আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন আয়োজনে’ ব্যানারে একটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করেন চাচা লুৎফর রহমান আব্দু ও ভাতিজা নজরুল ইসলাম আজাদ। অনুষ্ঠানের মুল বিষয় ছিল ‘৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম আজাদ ও সভাপতিত্ব করেন লুৎফর রহমান আবদু।

নজরুল ইসলাম আজাদের চাচা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান আব্দুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার, জেলা বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল আহমেদ, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন অনু, সদস্য সাদেকুর রহমান, সদস্য আফজাল হোসেন ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা মতিউর রহমান মতি, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সহ বেশকজন নেতাকর্মী।

অন্যদিকে আগের দিন সোমবার বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে শোডাউন করে কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে যোগদান করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন। আড়াইহাজারের বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় তিনি শোডাইন করেছেন। শোডাউনে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্লোগান দেন এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির শপথ। উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই ছেলে মাহামুদুর রহমান সুমন।

ঢাকায় মাহামুদুর রহমান সুমনের নেতৃত্বে এই শোডাউনে অংশগ্রহণ করেন আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাশেম ফকির, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দীন চৌধুরী সালামত, সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাকির মেম্বার, ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ ফারুক, যুবদল নেতা আশ্রাফুল ইসলাম আশ্রাফ, মোহাম্মদ ইয়ামিন সহ ছাত্রদল, শ্রমিকদল, ওলামাদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, যুবদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী।

একই দিন ঢাকায় নজরুল ইসলাম আজাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ঢাকায় আজাদের বলয়ের লোকজন যোগদান করেছেন। সেদিনও আড়াইহাজার বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে ঢাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির র‌্যালিতে যান নেতাকর্মীরা। যারা মঙ্গলবার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে আরও জানাগেছে, এক বছর হয়ে গেছে গত হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। তার মৃত্যুর পর আড়াইহাজার বিএনপির অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহামুদুর রহমান সুমন। উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মাহামুদুর রহমান সুমনকেই দায়িত্ব দেন নেতাকর্মীরা। তার পর থেকে তিনি আড়াইহাজার বিএনপির হাল ধরেছেন।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল ইসলাম আজাদ ও মাহামুদুর রহমান সুমন প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে আজাদকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি মাঠেই নামতে পারেননি। প্রচার প্রচারণা চালানোর মত কোন নেতাকর্মীও তিনি পাননি। আড়াইহাজারের বাহিরের মহানগরী ও অন্যান্য এলাকার কিছু নেতাকর্মী নিয়ে আড়াইহাজারে তিনি প্রচারণা চালিয়েছিলেন যেসব নেতাকর্মীরা মুলত পদ পদবীর লোভে নিজের এলাকা ছেড়ে আড়াইহাজারে গিয়ে আজাদের পেছনে রাজনীতি করেছেন। নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিলেন আজাদ।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আড়াইহাজার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাশেম ফকির। এর আগে এর আগে আড়াইহাজার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবু যিনি বর্তমানে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সাংগঠনিক নিয়ম ভঙ্গের দায়ে হাবিবুর রহমান হাবুকে অব্যাহতি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব কাশেম ফকিরকে এবং এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুর পর আড়াইহাজার বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে থাকা পদাধিকার বলে মাহামুদুর রহমান সুমনই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

দলীয় নিয়ম অনুযায়ী আড়াইহাজার বিএনপির ব্যানার একমাত্র মাহামুদুর রহমান সুমন ও কাশেম ফকিরই ব্যবহার করতে পারবেন। এর বাহিরে যারা বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি করবেন সেটা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ। এখন সেই কাজটিই করছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। তবে একই ব্যানারে যখন দুটি কর্মসূচি পালিত হয় তখন বিএনপির সাংগঠনিক নিয়মটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

তবে মঙ্গলবার বিএনপির ব্যানারে কর্মসুচি পালনের বিষয়ে নজরুল ইসলাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান আব্দু সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, খসরু সাহেব মারা যাওয়ার পর তার ছেলে হিসেবে সুমনকে কিছু নেতাকর্মী নিজেরা নিজেরাই বসে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করছে। এটা তো জেলা থেকে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। সে হিসেবে আড়াইহাজারে বিএনপির কমিটিই নাই। আর যেহেতু কমিটি নাই তাই আমরা কর্মসূচি পালন করতে গেলে তো একজনকে সভাপতিত্ব করতে হবে। সে কারনে আমিই সভাপতিত্ব করেছি।

তবে দুটি পৃথক ব্যানারে কর্মসূচি পালন করায় তাহলে আসল বিএনপি কোনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন পাইছে আজাদ সাহেব। তাই এতেই বুঝা যায় আসল বিএনপি কোনটা। তাই আজাদের নেতৃত্বেই সকলকে রাজনীতি করা উচিত।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হয়ে আড়াইহাজার বিএনপির ব্যানারের কর্মসূচিতে আপনি সভাপতিত্ব করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা তো আসেনা। তাই আমি করেছি।

যদিও এ বিষয়ে বর্তমানে পরিস্থিতিতে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি মাহামুদুর রহমান সুমন।

অন্যদিকে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদের কাছে জানতে চাওয়া হয় আড়াইহাজারে বিএনপির কমিটি কয়টি? এ বিষয়ে তিনি বলেন, আড়াইহাজারে প্রয়াত বিএনপি নেতা এএম বদরুজ্জামান খান খসরু সভাপতি ও হাবিবুর রহমান হাবু সেক্রেটারি করে যে কমিটি হয়েছিল সেটাই বৈধ। পরবর্তীতে কে কোন পদ বা কমিটি বা ব্যানার ব্যবহার করে সেটা বৈধ নয়। কমিটি তো এখন একটিভ তেমনটা নেই। তবে যেহেতু কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে সেহেতু যে যার মত করে ব্যানার ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন করছে বিষয়টি তেমনি।