সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর ও পিরোজপুুরে কোটি টাকার চাঁদাবাজি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন এলাকা হলো কাঁচপুর ও পিরোজপুুর। যেখানকার বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে অহরহ। বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন দুটি ইউনিয়নের দুজন ব্যক্তি যারা সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে এই চাঁদাবাজির টাকা চলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সহ বিভিন্ন পেশার লোকজনের পকেটেও। জেলায় নিয়মিত চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হলেও এখানকার চাঁদাবাজরা রয়েছে অধরা। বুক ফুলিয়ে তুলছে চাঁদা। মাস শেষে হচ্ছে ভাগ বাটোয়ারা।

জানাগেছে, সোনারগাঁয়ের পিরোজপুুর ইউনিয়নটি মেঘনা নদী ঘেষা একটি ইউনিয়ন। এখানে রয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত শীর্ষ বেশকটি শিল্প কারখানা। সেই সঙ্গে এই নদীর পাড় ব্যবহার করে ইট বালি পাথরের ব্যবসা করছে অবৈধভাবে। কোন রকম ইজারা ছাড়াই নদী ও নদীর পাড় দখল করে চলছে অবৈধ বালু ইট পাথরের ব্যবস্থা। যেখান থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করছে প্রভাবশালীরা। যে চাঁদার ভাগের টাকা চলে যায় জেলার বড় বড় রাজনীতিকদের পকেটেও। এখানকার ব্যবসায়ী শিল্প কারখানার মালিকেরাও প্রতি মাসে চাঁদা দিয়ে আসছে। কিন্তু নিজের ব্যবসায় জামেলা এড়াতে তারা নীরবে চাঁদা দিয়ে থাকলেও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার সাহসটুকু পাচ্ছেনা। আবার অবৈধভাবে নদী ও নদীর পাড় দখল করে ব্যবসায়ীরাও প্রভাবশালীদের চাঁদা দিয়ে আসছে।

এদিকে সোনারগাঁয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন হলো কাঁচপুর বিসিক এলাকা। এটি শিল্প এলাকা হওয়ায় এখানে জনবসতিও বেশি। প্রতি মাসে অনেক শিল্প কারখানা থেকে চাঁদাবাজি করছে একটি মহল। সেই সঙ্গে এখনকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইতিমধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল বেশকবার। সেই সঙ্গে ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান বসিয়ে সেখান থেকেও চলছে দৈনিক চাঁদাবাজি। ইতিমধ্যে সেখান থেকে পরিবহন চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করলেও অবৈধ দখলদার চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। অবৈধভাবে ঝুট ও কাচরার ব্যবসা নিয়েও একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এখানেও প্রতি মাসে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে চলছে ভাগ বাটোয়ারা।

সেই সঙ্গে পিরোজপুুর এলাকাটি মাদকের চালানের বর্ডার। এখান দিয়ে নিরাপদে মাদকে জেলায় প্রবেশেও প্রভাবশালীদের সহযোগীতা রয়েছে। দুটি ইউনিয়ন এলাকায় মাদকের ব্যবসায়ীদের শেল্টারদাতাও প্রভাবশালীরা। একইভাবে মাদকের স্বর্গরাজ্য বলা চলে এখন কাচপুর। কিন্তু ছোট খাটো খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করলেও রাঘব বোয়ালরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। যারা মাসিক ও দৈনিক কোটি কোটি চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে। দুটি ইউনিয়নে ড্রেজার ব্যবসা, বালুর ব্যবসা, পাথর ব্যবসা সহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছে দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

তবে জেলা পুুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। তবে দুটি ইউনিয়নের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রকদের এখনও আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুুলিশ। কারা এই চাঁদাবাজি করছে সেটাও সাহস করে মুখ খুলছে না ভুক্তভোগীরা। আর অবৈধ ব্যবসায়ীরাও দখলবাজি করে প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ব্যবসা করছে। ফলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির অর্থ কার পকেটে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে জানাগেছে, কাঁচপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোশারফ হোসেন ওমর। তার ছোট ভাই সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু। পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামীলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম।