সোনারগাঁয়ে সন্ত্রাসী গিট্টু হৃদয় বাহিনীর খুটির জোর কোথায়?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের মানুষ এখন শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু হানিফ বিশাল ও গিট্টু হৃদয় বাহিনীর কাছে জিম্মি। এই বাহিনী যাকে তাকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে আসছে। থানায় মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা। প্রায় প্রতিদিনিই কাউকে না কাউকে মারধর করছে বাহিনীর সদস্যরা। ফলে প্রশ্ন ওঠেছে তাহলে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর খুটির জোর কোথায়? এই সন্ত্রাসী গিট্টু হৃদয় এর আগে মাদক সহ গ্রেপ্তার হয়েছিল।

এখানে উল্লেখ্যযে, এই মার্কেটটি স্থানীয় মহাজোটের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার মালিকাধীন। এখানে এমপির কার্যালয় রয়েছে। সার্বক্ষনিক এই কার্যালয়ের নিচে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়। যাকে তাকেই এই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা মারধর করে থাকে। বেপরোয়া এই সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশু সন্তানের সামনে পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে রাসেল ভূঁইয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী বিশাল ও গিট্টু হৃদয় বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন আহতের বাবা।

আহত রাসেলের বাবা সিরাজুল হক ভূঁইয়া বাদী হয়ে ২৯ জুন শনিবার সকালে সোনারগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু হানিফ ওরফে বিশাল, হৃদয় ওরফে গিট্টু হৃদয়, ইউসুফ আলী, আরাফাত, ইমরান, রূপচাঁন মোল্লা ও রাসেল মাহমুদ সহ আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী সিরাজুল হক ভূঁইয়া দাবি করেন, আমার বড় ছেলে রাসেল ভূঁইয়া তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইফা ও চার বছর বয়সী ভাতিজা সানজিদকে নিয়ে ২৮ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তার আইয়ুব প্লাজায় অবস্থিত এনএফসি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খেতে যান।

মামলায় বাদী আরও দাবি করেন- ওইদিন আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা স্থানীয় ১০/১২জন সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে আমার ছেলের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলের সামনে থেকে আমার নাতনি রাইফা ও নাতি সানজিদকে অপহরণ করার চেষ্টা করে।

এসময় আমার ছেলে বাধা দিলে আবু হানিফ ওরফে বিশাল, হৃদয় ওরফে গিট্টু হৃদয়, ইউসুফ আলী, আরাফাত, ইমরান, রূপচাঁন মোল্লা ও রাসেল মাহমুদসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন সন্ত্রাসী আমার ছেলে রাসেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ সময় তার কাছে থাকা ১ লাখ ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
খবর পেয়ে আহত রাসেল ভূঁইয়াকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই মামলার বিষয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, রাসেল ভূঁইয়াকে আহত করার ঘটনা মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে এখানে উল্লেখ্যযে, গত ১৯ জুন উপজেলার মঙ্গলেরগাঁও এলাকার ইঞ্জিনিয়ার মুক্তার হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার মেয়েকে তুলে আনতে যায় এই সন্ত্রাসী বাহিনী। ওইদিন বাধা দিতে গেলে মুক্তার হোসেনের ছোট ভাই মোশারফ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। এ ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পিটিয়ে আহত করেছিল। বাড়িঘর ভাংচুর ও নগদ ৪৭ হাজার টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণ এবং ৫টি মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায়। ওইদিন মোশারফ হোসেনকে রক্তাক্ত জখম হন।

কিন্তু এ বিষয়ে মুক্তার হোসেন সোনারগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি রহস্যজনক কারনে। দ্বিতীয়বার যখন বৃহস্পতিবার অন্য আরেক ঘটনায় রাসেল ভূঁইয়াকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা চালায় সেদিন রাতেই আগের ওই ঘটনায় মামলাটি গ্রহণ করে পুুলিশ। যে কারনে স্থানীয়রা বলছেন- মঙ্গলেরগাঁওয়ের ঘটনায় মামলা নেয়া হলে রাসেলকে হত্যা চেষ্টা করার সাহস করতো না সন্ত্রাসীরা। শুধুমাত্র বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে হত্যার ঘটনা আলোচিত হওয়ার কারনেই সোনারগাঁয়ের ঘটনায় এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। নতুবা এটাও হতো না।

তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করে সোনারগাঁও থানা পুুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ওই ঘটনায় বাদী পক্ষ অভিযোগ দিলেও মামলা করতে আসতে চায়নি। দ্বিতীয় বারের ঘটনার পর ভিকটিমের পরিবারকে ডেকে এনে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।

তাহলে কি বাদী পক্ষ আসামিদের ভয়ে মামলা করতে চায়নি এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা বলতে পারছি না। কিন্তু তারা বেশি আগ্রহ দেখায়নি। রাসেলকে কুপানোর ঘটনার বিষয়েও পরিবারের লোকজনকে কয়েকবার খরব দিয়ে এনে মামলা দায়ের করাতে হয়েছে। এখন তারা কি সাহস পাচ্ছিল বা পাচ্ছিল না কিনা সেটা বলতে পারবো না।’