কাজী মনিরের হাতে ধানের শীষ, বিএনপিতে কলঙ্কজনক অধ্যায়!

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকায় বিজেএমইএ এর প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। মাসদাইরে তৈমূর আলমের বাসায় এক অনুষ্ঠানের পূর্বে ঘরোয়াভাবে নেতাকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, বিএনপির কবর হয়ে গেছে, জানাযা বাকি। যা পরদিন মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে দিপু ভুইয়ার লোকজন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে তার কুশপুত্তালিকাদাহ করেছিলেন। তাকে জেল খাটতে হয়নি। পুলিশের লাঠি পেটা খেতে হয়নি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে হয়নি। অথচ বিএনপির কাছে সেই কাজী মনিরুজ্জামান মনিরই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন!

বিপরীত দিকে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠি পেটা খেয়েছেন। জেল খেটেছেন। তারেক জিয়ার মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২৬ মাস জেল খেটেছেন। জেলা বিএনপির রাজনীতিকে একাই সচল রেখেছিলেন। রাজপথে গুলি খেয়েছেন। সেই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারই বিএনপির কাছে মনোনয়নের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলেন। ন্যাক্কাজনক এই দৃষ্টান্তের কারনে নারায়ণগঞ্জে বিএনপিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে দিল বিএনপি। ভবিষৎে রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রামে কেউ ঝাপিয়ে পড়ার চেয়ে পকেট ভারি মনোনয়নের জন্য নেমে পড়বেন সেটাই হবে তাদের জন্য শ্রেয়। রাজনীতি না করে তৈমূর আলম খন্দকার তার আইন পেশায় ফুলটাইম সময় ব্যয় করে অঢেল টাকার মালিক হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পকেট ভারি করে মনোনয়ন কিনে আনতে পারতেন। এমনটাই অভিমত নেতাকর্মীদের।

ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন- সেই ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তৈমূর। ওইদিন নিহত হয়েছিলেন তার পাশেই দাড়িয়ে থাকা যুবদল কর্মী ইব্রাহীম। ১/১১ এর সময় তারেক জিয়ার পক্ষে যখন কেউ মামলা পরিচালনা করতে সাহস করে এগিয়ে যায়নি তখন মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তৈমূর। তাকে নেয়া হয় রিমান্ডে। রিমান্ডে নিয়ে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে দেয়া হয় কয়েক হাজার বোল্ডের বাতির নিচে তৈমূর আলমের মাথা। তবুও স্বাক্ষী দেয়ার কথা মেনে নেয়নি। জেল খেটেছিলেন ২৬ মাস। বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজপথে বুক উচিয়ে পুলিশের লাঠির সামনে, গুলির সামনে যিনি ছিলেন তিনি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। পুলিশের লাঠির আঘাত পেঠে সহেছিলেন তিনি। গলা চেপে পুলিশ তাকে টেনে হেছড়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আবারও জেল খেটেছেন। কিন্তু যেখানে একক প্রার্থী হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকারকে ঘোষণা করা উচিত সেখানে আরো দুজন রাজপথের আন্দোলন বিমুখী নেতাদের মনোনয়ন চিঠি দেয়াটাও তৈমূর আলম খন্দকার ও তার নেতাকর্মীদের জন্য ছিল অপমানজনক। যেখানে ওই দুই মনোনিত নেতাকে কখনও কারাগারে যেতে হয়নি। পুলিশের মার খেতে হয়নি। গুলি খেতে হয়নি। সবশেষ নাটক করে বাদ দেয়া হলো তৈমূরকে। মনোনয়ন ওঠলো কাজী মনিরের হাতে যিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিজেএমইএর প্রতিবাদ সভায় খালেদা জিয়াকে আগুন সন্ত্রাস সহ নানা ধরনের অভিযোগ করা হয়।

এমনকি গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরেও তার মুক্তির দাবিতে শ্লোগানই ধরতে হয়নি আজকে তাদের একজনকে দেয়া হলো ধানের শীষ। আবারো কুরবানী তৈমূর আলম খন্দকার।

নেতাকর্মীরা বলছেন- দলের প্রতি তৈমূর আলমের কমিটমেন্ট রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনের সাত ঘন্টা আগে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তৈমূর।

নেতাকর্মীরা আরও বলেন- সাধারণ মানুষের নেতা তৈমূর আলমকে ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় যে কোন নেতাকর্মী সমর্থক ফোন করলে নিজ হাতে রিসিভ করে কথা বলেন তিনি। হাটে ঘাটে মাঠে রাস্তায় বসেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে খাওয়া ধাওয়া করতে পারেন। অথচ কাজী মনির নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাত মুছে নেন। অনেক সময় তার হাতে টিস্যূ বা রুমাল রেখেই মানুষের সঙ্গে হাত মিলান। যে কারনে এখানে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে তৈমূর এগিয়ে। এখানে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়া মুলত নিজেরা দলের কমিটি ও কমিটির পদ পদবীতে নিজেদের চাটুকার শ্রেণির নিস্ক্রিয় কর্মীদের পদে বসিয়ে নেতা বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে তারা অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর শহর কেন্দ্রীয় একটি কর্মসূচিতেও ছিলেন না দিপু ভুইয়া। কাজী মনিরকে দু’একটি কর্মসূচিতে দেখা গেলেও তাকে ছাড়াই বাকী কর্মসূচিগুলো পালন করেছে জেলা বিএনপি। রূপগঞ্জে কাজী মনিরের পক্ষে নেতাকর্মীরা থাকলেও দিপু ভুইয়ার এমপি নির্বাচন করার মত অবস্থান নেই।

অন্যদিকে তৈমূর সম্পর্কে নেতাকর্মীরা বলছেন- বিআরটিসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নিজ জিম্মায় রূপগঞ্জের কয়েকশ মানুষকে বিনা পয়সায় চাকুরী দিয়ে তিনি জেল খেটেছেন ২৬ মাস। সেই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। যে কারনে রূপগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার হাটা শুরু করলে স্থানীয় লোকজনের সমাবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়। তৈমূর নেতাকর্মীদের বলেছিলেন আবারো কোন দায়িত্ব পেলে কয়েক হাজার মানুষকে তিনি চাকুরী দিবেন।

২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি হন তিনি। তারপর থেকে রাজপথের আন্দোলনে ছিলেন একমাত্র তিনিই। কাজী মনির জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে আসলেও তিনি হয়ে যান নিষ্ক্রিয়। ২০১১ সালের ৬ জুন তৈমূর শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় সদর মডেল থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই আতিয়ার রহমানের লাঠির মার পিঠে নিয়েছেন। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ কোর্টের সামনে থেকে তাকে অপমানজনকভাবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময়কার ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ওসি কামালউদ্দীন তৈমূরের গলা চেপে ধরেন। তৈমূর আলমের গলা চেপে ধরে টেনেহেছড়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তৈমুর আলমের জিব্বাহ বের হয়ে আসলেও তাকে ছাড়েনি পুলিশ। ওসি কামাল উদ্দীনকে এএসপি পদে পদোন্নতি করা হয়েছে। তৈমূর আলম খন্দকার পুলিশি নির্যাতন, হামলা মারধর ও কারাভোগ করলেও রহস্যজনক কারনে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়াকে জেল খাটতে হয়নি এবং রাজপথে পুুলিশের মার খেতে হয়নি।

রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার একজন আমজনতার নেতা, মেহনতি, খেটে খাওয়া, দিন মজুরের নেতা। তৈমূর আলমই পারতেন এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে। এখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না এমন নেতাকে মানুষ ভোট দিবে না। যারা মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূ দিয়ে হাত মুছেন এমন নেতাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিবে না।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন- তৈমূর আলমের কাছে খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালকসহ সাধারণ মানুষের গুরুত্ব বেশি। তিনি রিক্সা চালক ভ্যান চালকদের নেতা ছিলেন। ছিলেন কাজের বুয়া ঝিদের নিয়েও সংগঠন করেছেন। রয়েছেন বধির সংস্থার চেয়ারম্যান। কয়েক যুগ ধরে অন্ধ প্রতিবন্ধিদের জন্য কাজ করে আসছেন। লুঙ্গি পড়া খেটে মানুষকেও তৈমূর আলম খন্দকার তার গাড়িতে ডেকে তুলেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ কিংবা রূপগঞ্জের কোন সাধারণ মানুষকে দেখলেও গাড়ি থামিয়ে তার গাড়িতে তুলে নেন। কারো সাথে একবার কথা হলে কয়েক বছর পর দেখলেও তৈমূর নাম সহ চিনতে পারেন। গভীর রাতে ফোন করলেও সাধারণ মানুষের ফোন রিসিভ করেন নিজে। এসব নিয়ে অনেক নেতা নাক ছিটকালেও তৈমূর কর্ণপাত করেন না।

রূপগঞ্জের খাদুন গ্রামবাসীর পক্ষে আন্দোলনে ছিলেন তিনি। আবাসন ব্যবসায়ীরা যখন মানুষের কৃষি জম দখলে নিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করছিল তখন আন্দোলনে নামেন তৈমূর আলম। ছিলেন না কাজী মনির কিংবা দিপু ভুইয়া। গ্রামবাসীর পক্ষে মামলার পরিচালনা ও আন্দোলন করার দায়ে তিনি মামলার আসামীও হয়েছিলেন। তবুও ভুমিদস্যুদের সাথে কোন আপোষ করেননি। কিন্তু সেই তৈমূর আলম খন্দকারই বিএনপির কাছে অযোগ্য! তার গলায় বারবার কড়াত দিয়ে ছুরি চালানোর মত করে জবাই করা হচ্ছে তার রাজনীতি।