তৈমূরের পিঠে পুলিশের ডান্ডা, কাজী মনিরের হাতে ধানের শীষের ঝান্ডা

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

এবারও গোসল ছাড়াই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে জবাই করা হলো। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের লাঠি পেটার শিকার হয়েছেন। জেল খেটেছেন। মামলা খেয়েছেন। রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। কিন্তু সেই তৈমূর আলমকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। যিনি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মাত্র সাত ঘন্টা আগে বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছিলেন। ১/১১ এর সময় নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসন থেকে প্রথমে তৈমূর আলম মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে ১/১১ এর কারনে পিছিয়ে গেলে তিনি পরে অনুুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় জেলে থাকায় ওই নির্বাচনে মনোনয়ন পান কাজী মনিরুজ্জামান মনির। এবারও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেন কাজী মনিরুজ্জামান। ফলে নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে আবারো তৈমূর আলমকে গোসল ছাড়াই কুরবানী দেয়া হলো।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সেই ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ওইদিন নিহত হয়েছিলেন তারই পাশেই দাড়িয়ে থাকা যুবদল কর্মী ইব্রাহীম। ১/১১ এর সময় তারেক জিয়ার মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। নেয়া হয় রিমান্ডে। রিমান্ডে নিয়ে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে দেয়া হয় কয়েক হাজার বোল্ডের বাতির নিচে তার মাথা। তবুও স্বাক্ষী দেয়ার কথা মেনে নেয়নি। জেল খেটেছিলেন ২৬ মাস। বিএনপি ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজপথে বুক উচিয়ে পুলিশের লাঠির সামনে গুলির সামনে যিনি ছিলেন তিনি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। পুলিশের লাঠির আঘাত পেঠে সহেছিলেন তিনি। গলা চেপে পুলিশ তকে টেনে হেছড়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। জেল খেটেছেন। কিন্তু যেখানে একক প্রার্থী হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকারকে ঘোষণা করা উচিত সেখানে আরো দুজন রাজপথের আন্দোলন বিমুখী নেতাকে মনোনয়ন চিঠি দেয়াটাও তৈমূর আলম খন্দকার ও তার নেতাকর্মীদের জন্য অপমানজনক। যেখানে ওই দুই মনোনিত নেতাকে কখনও কারাগারে যেতে হয়নি। পুলিশের মার খেতে হয়নি। গুলি খেতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়লেন তৈমূর আলম খন্দকারই।

নেতাকর্মীদের দাবি- নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের একজমাত্র ঝান্ডা ধরার যোগ্য হিসেবে নেতাকর্মীরা বলেছিলেন তৈমূর আলম খন্দকারকেই। এ আসনে জয় নিশ্চিত করতে তৈমূর আলমই একমাত্র ভরসা। নেতাকর্মীরা এও বলেছিলেন- কেন্দ্রীয় নেতারা আপাতত এ আসনে তিনজনকে মনোনয়নের চিঠি দিয়ে রাখলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় একমাত্র একক প্রার্থী হিসেবে তৈমূর খন্দকারই থাকবেন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে তৈমূর আলম খন্দকারকে মনোনিত করা হয়নি।

নেতাকর্মীরা আরও বলেছিলেন- দলের প্রতি তৈমূর আলমের কমিটমেন্ট রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনের সাত ঘন্টা আগে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তৈমূর আলম খন্দকার। এখানে তিন জনের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়াকেও মনোনিত করা হয়েছিল প্রাথমিকভাবে।

নেতাকর্মীরা বলেন- সাধারণ মানুষের নেতা তৈমূর আলমকে ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় যে কোন নেতাকর্মী সমর্থক ফোন করলে নিজ হাতে রিসিভ করে কথা বলেন তিনি। হাটে ঘাটে মাঠে রাস্তায় বসেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে খাওয়া ধাওয়া করতে পারেন। এখানে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে তৈমূর আলম খন্দকার এগিয়ে। অন্যদিকে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়া মুলত নিজেরা দলের কমিটি ও কমিটির পদ পদবীতে নিজেদের চাটুকার শ্রেণির নিস্ক্রিয় কর্মীদের পদে বসিয়ে নেতা বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে তারা অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। এদিকে আবার গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর শহর কেন্দ্রীক একটি কর্মসূচিতেও ছিলেন না দিপু ভুইয়া। কাজী মনিরকে দু’একটি কর্মসূচিতে দেখা গেলেও তাকে ছাড়াই বাকী কর্মসূচিগুলো পালন করেছে জেলা বিএনপি। রূপগঞ্জে কাজী মনিরের পক্ষে নেতাকর্মীরা থাকলেও দিপু ভুইয়ার এমপি নির্বাচন করার মত অবস্থান নেই।

অন্যদিকে তৈমূর সম্পর্কে নেতাকর্মীরা বলছেন- বিআরটিসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নিজ জিম্মায় রূপগঞ্জের কয়েকশ মানুষকে বিনা পয়সায় চাকুরী দিয়ে তিনি জেল খেটেছেন ২৬ মাস। সেই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। যে কারনে রূপগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার হাটা শুরু করলে স্থানীয় লোকজনের সমাবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়। তৈমূর এখনও দাবি করেন আবারো কোন দায়িত্ব পেলে কয়েক হাজার মানুষকে তিনি চাকুরী দিবেন।

২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি হন তিনি। তারপর থেকে রাজপথের আন্দোলনে ছিলেন একমাত্র তিনিই। ২০১১ সালের ৬ জুন তিনি শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় সদর মডেল থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই আতিয়ার রহমানের লাঠির মার পিঠে নিয়েছেন। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ কোর্টের সামনে থেকে তাকে অপমানজনকভাবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময়কার ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ওসি কামালউদ্দীন তৈমূর আলম খন্দকারের গলা চেপে ধরেন। তৈমূর আলমের গলা চেপে ধরে টেনেহেছড়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তৈমুর আলমের জিব্বাহ বের হয়ে আসলেও তাকে ছাড়েনি পুলিশ। ওসি কামাল উদ্দীনকে এএসপি পদে পদোন্নতি করা হয়েছে। তৈমূর আলম খন্দকার পুলিশি নির্যাতন, হামলা মারধর ও কারাভোগ করলেও রহস্যজনক কারনে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়াকে জেল খাটতে হয়নি এবং রাজপথে পুুলিশের মার খেতে হয়নি।

রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার একজন আমজনতার নেতা, মেহনতি, খেটে খাওয়া, দিন মজুরের নেতা।।তিনি পারবেন একমাত্র এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে। এখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না এমন নেতাকে মানুষ ভোট দিবে না। যারা মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূৗ দিয়ে হাত মুছেন এমন নেতাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিবে না।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেছিলেন- তৈমূর আলমের কাছে খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালকসহ সাধারণ মানুষের গুরুত্ব বেশি। তিনি রিক্সা চালক ভ্যান চালকদের নেতা ছিলেন। ছিলেন কাজের ভুয়াদের সহযোগীতায়। রয়েছেন বধির সংস্থার চেয়ারম্যান। কয়েক যুগ ধরে অন্ধ প্রতিবন্ধিদের জন্য কাজ করে আসছেন। লুঙ্গি পড়া খেটে মানুষকেও তৈমূর আলম খন্দকার তার গাড়িতে ডেকে তুলেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ কিংবা রূপগঞ্জের কোন সাধারণ মানুষকে দেখলেও গাড়ি থামিয়ে তার গাড়িতে তুলে নেন। কারো সাথে একবার কথা হলে কয়েক বছর পর দেখলেও তৈমূর নাম সহ চিনতে পারেন। গভীর রাতে ফোন করলেও সাধারণ মানুষের ফোন রিসিভ করেন নিজে। এসব নিয়ে অনেক নেতা নাক ছিটকালেও তৈমূর কর্ণপাত করেন না।

রূপগঞ্জের খাদুন গ্রাামবাসীর পক্ষে আন্দোলনে ছিলেন তিনি। আবাসন ব্যবসায়ীরা যখন মানুষের কৃষি জম দখলে নিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করছিল তখন আন্দোলনে নামেন তৈমূর আলম। আর কেউ ছিল না। গ্রামবাসীর পক্ষে মামলার পরিচালনা সহ আন্দোলন করার দায়ে তিনি মামলার আসামীও হয়েছিলেন। তুবও ভুমিদস্যুদের সাথে কোন আপোষ করেননি। এসব কারনে নেতাকর্মীরা বিচার বিশ্লেষন করে কাজী মনির ও দিপু ভুইয়ার চেয়ে তৈমূর আলমকে এগিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আবারো তৈমূর আলমকে বঞ্চিত করা হলো।