প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগই দেশনেত্রীর উপর সবচেয়ে বেশী অবিচার করেছে: তৈমুর

সান নারায়ণগঞ্জ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগের সিনিয়র এ্যাডভোকেট ড. তৈমুর আলম খন্দকার এক শোক বার্তায় বলেন, “আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক, যার সমকক্ষ নেতৃত্ব আজ পর্যন্ত গড়ে উঠেনি।

তিনি বলেন, আমি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও যে কোন আগ্রাসন ও অধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই; সে সুবাধে বিএনপি’র তৎসময়ের বারবার কারাবরন ও রাজপথের গুলি খাওয়া একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে দেশনেত্রীকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখার ও বুঝার সুযোগ আল্লাহ পাক আমাকে দিয়েছেন।

১/১১ সরকারের সময় জিয়া পরিবারকে ছেড়ে পালিয়ে বা সংস্কারে যাই নাই, এক সাথে জেল খেটেছি। বিএনপি’র মহাসচিব স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা না দিলে আমি মেয়র পদে নির্বাচন অবশ্যই করতাম না। মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর থেকেই দেশনেত্রীর কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং জীবন যাত্রা শুরু হয়।

তিনি ছিলেন গড গিফটেড (আল্লাহপ্রদত্ত) নেতৃত্বের অধিকারী; যার ফলে ধৈর্য্য, অদম্য সাহস ও ইস্পাত কঠিন মানসিকতার কারনে সকল বাধা অতিক্রম করে শত কোটি মানুষের হৃদয়ের আস্থার স্থান করে নিয়েছেন। অভ্যন্তরীন কোন্দলে আমি দল থেকে বহিস্কৃত হওয়া স্বত্বেও দেশনেত্রীর প্রতি পূর্বেও শ্রদ্ধাশীল ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।

আমি বহিস্কার হওয়ার পর র্শীষ নেতাদের তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন “আমার তৈমূর কই? তাকে কেন বহিস্কার করলা, দলের প্রতি তার কি কোন অবদান নাই?” একথা আমি মিডিয়াতে দেখেছি ও শুনেছি। তাই সব সময় বলি “আমার পিঠের চামড়া দিয়ে দেশনেত্রীর জুতা বানিয়ে দিলেও এ-ঋণ শোধ হবেনা”।

দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমৃত্যু স্বৈরাচার সরকার দ্বারা অযাচিতভাবে নির্যাতিত ও নিগৃহিত হয়েছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগ দেশনেত্রীর প্রতি সবচেয়ে বেশী অবিচার করে বিচার অঙ্গনে একটি জঘন্য নজীর স্থাপন করেছে। হে পরম করুনাময় আল্লাহ, আমার নেত্রীকে ইহকাল ও পরকালের সর্বোচ্চ সম্মান ও হেফাজত দান করুন”।

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে জানিয়েছেন, ‘আম্মা আর নেই।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টেও খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং সকলের নিকট তার বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চাচ্ছি।’

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন, যিনি ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান।

১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের ঘরে তার জন্ম। তার বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে দেশভাগের পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তাদের আদি বাড়ি ফেনীতে। তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন।

জিয়াউর রহমান বীর উত্তম রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বেগম জিয়া ফার্স্ট লেডি হিসেবে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে অংশ নেন। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং নেদারল্যান্ডসের রানি জুলিয়ানাসহ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

বেগম জিয়া দেশের রাজনীতিতে একটি অনন্য রেকর্ডের অধিকারী। তিনি কখনো কোনো আসনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাঁচটি পৃথক আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি আসনেই বিজয়ী হন।