৭১’এ যারা রাজাকারের ভূমিকা পালন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে: ফেরদাউসুর রহমান

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেছেন, “আমি যখন যেখানে যাই একটু দেখি। আর কী ভাই দাঁড়ি-পাল্লাগুলি এত লাগাইছেন আপনারা? এগুলো ঠিকঠাক করেন, সবগুলি বেকা হয়ে গেছে। আপনারা বলেন এটা ইনসাফের দাঁড়ি-পাল্লা। কিন্তু এটা তো বেকা। তাহলে বুঝা যায়, ডাল মে কুছ কালা হে।”

১২ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর চাষাঢ়ায় দলীয় কার্যালয়ে কাসেমী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্য প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি জামাতের বিষয়ে বলেন, “হেরা ইনসাফের পাল্লা বলেন, হাশরের পাল্লা, মিজানের পাল্লা, জান্নাতের পাল্লা। মহিলাদেরকে আপনারা নামাইয়া দিছেন মানুষের মগজ ধোলাই করতে। আপনারা এই রাজনৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করবেন না। পরিষ্কার ভাষায় বলি, নির্বাচনের পরে একসাথে থাকবো, নির্বাচনের পরে একসাথে চলবো। এই পরিবেশ নষ্ট করবেন না। আপনারা ইসলামের দোহাই দিয়া জাতির বিবেককে নষ্ট করতে চান। আমরা ইসলামের পক্ষে জাতির মগজকে সঠিক রাস্তায় রাখতে চাই। আপনাদের মুখে ইনসাফ মানায় না।

ফেরদাউসুর বলেন, “যারা বাংলাদেশের শত্রু আমাদের যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ হবে যারা অপশক্তি তাদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ হবে একাত্তরে যাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, যারা রাজাকারের ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আমরা সবাই রাজি আছি।”

এ জমিয়ত নেতা বলেন, “ইসলামকে ডিভাইড করবেন না। ইসলামের পক্ষের শক্তি, ইসলামের বিপক্ষের শক্তি এই কথা বলে বাংলাদেশের জাতিকে দুইটা ভাগ করবেন না। যদি ইসলামকে ডিভাইড করেন তাহলে কিন্তু এর মাশুল আপনাদেরকে একাত্তর সনে দিতে হয় নাই, এইবার কিন্তু আপনাদের রাজপথে এটার মাশুল দিতে হবে। এই দেশের মানুষ ইসলামের প্রতি দুর্বল কথা ঠিক কিন্তু ইসলামকে ব্যবহার করলে এটা দেশের মানুষ বুঝে। ইসলামকে ব্যবহার করতে দিবো না।”

প্রশাসনের কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে নতুন ডিসি-এসপি আসছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ আমাদের ভেতরে সৃষ্টি হয় না। কারণ শুধুমাত্র তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে আবার চলে যায়। আমরা কাঙ্খিত কোনো পদক্ষেপ বাংলাদেশের কোনো ডিসি-এসপিকে নিতে দেখছি না। যদি এইভাবে চলতে থাকে, এইভাবে একের পর এক খুন হতে থাকে, মানুষের জানের নিরাপত্তা যদি বিঘ্নিত হতে থাকে, এই দায়ভার আপনি কাকে দিবেন?” “সেজন্য আমি নারায়ণগঞ্জের এসপি-ডিসি সাহেবকে বলি- গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ করেন, শীতবস্ত্র বিতরণ করেন ঠিকা আছে। কিন্তু আপনারা এখন রাজনৈতিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। পত্রপত্রিকায় আপনাদের নিউজই বেশি। এই কাজগুলি বাদ দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই নারায়ণগঞ্জকে কীভাবে আপনারা রক্ষা করবেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবেন সেদিকে খেয়াল রাখেন”, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “আপনাদেরকে মাদকের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। নারায়ণগঞ্জে আপনারা কোন কাজের জন্য এসেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী এগুলো জানতে চায়। যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় যেইভাবে লালিত পালিত হচ্ছেন আপনারা আপনাদেরকেও একদিন বাংলাদেশের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এগুলোর জবাব দিতে হবে।”

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “একজন আলেম সন্ত্রাসী, মাদক কারবারিকে লালন-পালন করেন এ কথা যেন আমাদের শুনতে না হয়। আমরা এগুলি লালন-পালন করি না। আমরা এগুলি প্রশ্রয় দেই না। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক নাই।”

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই দেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি না করতে পারে সেজন্য দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। ১৯৭১ সালে যেমন যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশ সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ঠিক তেমনিভাবে দুর্নীতি এবং একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে মুক্ত করবার জন্যে চব্বিশের গণঅভ্যুথানে বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর মানুষ দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই।”