৫টি আসনে পাঁচ নেতার জনপ্রিয়তায় পাল্টে যাচ্ছে হিসেব নিকেশ

সান নারায়ণগঞ্জ

তরুণ প্রজন্মের কাছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে আইডল হয়ে ওঠেছেন মাসুকুল ইসলাম রাজীব। একই ধাচে তরুণ প্রজন্মের কাছে জায়গা করে নিয়েছেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও। করোনাকালে অদম্য সাহসী ভুমিকায় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করে খেতাপ পাওয়া করোনা বীর খোরশেদও আসতে পারে ধানের শীষ প্রতীকের ঝান্ডা হাতে। ওইদিকে শক্ত অবস্থানে সোনারগাঁয়ের মাটি ও মানুষের নেতা কারানির্যাতিত নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান। আড়াইহাজারে নিজের ঘাটি গেড়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। তাদের প্রার্থীতা নিয়ে শঙ্কা দেখছেন না নেতাকর্মী সমর্থকেরা। ওদিকে শঙ্কা থাকলেও কাজী মনিরুজ্জামানকে পেছনে ফেলে ধানের শীষের ঝাণ্ডা হাতে আসতে পারেন মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে এই পাঁচ নেতার জনপ্রিতায় পাল্টে যাচ্ছে নানা জটিলতা ও হিসেব নিকেশ। নেতাকর্মী সমর্থক ছাড়াও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিবিসিতে দেয়া দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারটি আশা জাগিয়ে রেখেছে যে, উপরোক্ত পাঁচ বিএনপি নেতার হাতেই ওঠতে পারে বিএনপির ধানের শীষ মার্কা।

নেতাকর্মীদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির দুই হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া ও কাজী মনিরুজ্জামান মনির। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ আহমেদ টুটুল ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিলেও তাদের নিয়ে নেতাকর্মী সমর্থকদের কোনো আশা বা প্রত্যাশা নেই। বিগত সময়ে কাজী মনিরের নানা দূর্বলতার কারনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে দিপু ভুঁইয়াকে এগিয়ে রাখছেন নেতাকর্মীরা। যদিও এই আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুজনই প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত হিসেবে মনোনয়ন পান কাজী মনির।

নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনে চাচা সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও ভাতিজা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদুর রহমান সুমন রাজনীতিতে আছেন ব্যাকফুটে। এখানকার রাজনীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনজনকেই প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন দেয়া হলেও চূড়ান্তভাবে আজাদকে মনোনিত করা হয়। পুলিশি পিটুনি ও কারাভাগ করেছেন আজাদ। সামনের নির্বাচনেও এখানে আজাদের হাতেই ওঠতে যাচ্ছে ধানের শীষ প্রতীকের ঝান্ডা।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের মধ্যে সোনারগাঁও উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি এই আসনে যুক্ত করা হলেও সিদ্ধিরগঞ্জের সিংহভাগ নেতাকর্মী সমর্থকেরা আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের বিরুদ্ধে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহামুদের সঙ্গের নেতাকর্মীরাও গিয়াসের বিরোধীতা করে রাজনীতি করছেন। ফলে সিদ্ধিরগঞ্জে ও সোনারগাঁয়ের কোথাও নেই গিয়াসের উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম, ত্যাগ, জেল জুলুম নির্যাতনের কারনে মান্নানকেই এগিয়ে রাখছেন নেতাকর্মীরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মান্নানকেই চূড়ান্তভাবে মনোনিত করেছিলো বিএনপি।

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা, এনায়েতনগর, কাশিপুর, কুতুবপুর, গোগনগর, বক্তাবলী, আলীরটেক ইউনিয়ন) আসনে তরুণ প্রজন্মের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তবে বর্তমানে নিস্ক্রিয়তা ও শাহআলমের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন গিয়াসউদ্দীন। যদিও জোটগত কারনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত প্রার্থী হোন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। ওই নির্বাচনে এখানে প্রাথমিকভাবে শাহআলম ও মামুন মাহামুদ মনোনয়ন পান। তবে এবারের নির্বাচনে এই আসনে বড় চমক হয়ে ওঠতে পারেন রাজীব।

নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান নাসিকের ৪ বারের নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এই আসনে দীর্ঘদিন রাজনীতি ও রাজপথের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে খোরশেদের। প্রতিটি এলাকায় তার নেতাকর্মী রয়েছে নিজস্ব। রাজনৈতিক কারনে কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও। জোরালোভাবে নির্বাচনী মাঠেও নেমেছেন খোরশেদ। এদিকে বিএনপিতে দুই শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও আবু জাফর আহমেদ বাবুলের মাঝে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আরেকটি গ্রুপ নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম। এমন পরিস্থিতিতে খোরশেদের হাতে ধানের শীষ প্রতীকের ঝান্ডা ২০১৮ সালের মত ওঠে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।