সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা পর্যন্ত যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা যুক্ত করায় সাধুবাদ জানিয়েছে সোনারগাঁও উপজেলা ও সোনারগাঁও পৌর বিএনপি সহ এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সোনারগাঁও উপজেলার মত বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের সক্ষমতা রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সিদ্ধিরগঞ্জকে সোনারগাঁয়ের সঙ্গে যুক্ত করায় সোনারগাঁয়ের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী ও সুবিধাবাদী নেতাকর্মী আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীদের আস্থায় আছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। একইভাবে তিনি সোনারগাঁয়ের আপামর জনতার আস্থা অর্জনেও সফল হয়েছেন ইতিপূর্বে। ২০১৪ সালে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই কঠিন সময়ে। যে কারনে সোনারগাঁবাসী স্বপ্ন দেখছেন দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে আজহারুল ইসলাম মান্নানকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনিত করবে বিএনপি এবং সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জবাসী মান্নানকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবে দুটি থানা এলাকার ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য। এর বিকল্প হিসেবে আর কাউকে দেখতে নারাজ রাজপথের নেতাকর্মীরা।
মান্নানকেই দল মনোনিত করবে এর কারন হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। সেই ১/১১ এর ফখরুদ্দিন মঈনউদ্দীনের আমলেও সোনারগাঁয়ের বিএনপির ঝাণ্ডা ধরেছিলেন। জেল জুলুম হামলা মামলা নির্যাতনের পরেও রাজপথের আন্দোলনে বহাল ছিলেন বিএনপির এই ত্যাগী নেতা। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও চেয়ারে বসতে পারেননি এক বছরও। পুলিশের সাজানো মামলার আসামী চার্জসিটে অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত থেকেছেন প্রায় ৪ বছরেরও বেশি সময়। তবুও সরকারি দল আওয়ামীলীগ কিংবা জাতীয় পার্টির এমপির সঙ্গে আতাত করে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে থাকার চেষ্টাও করেননি মান্নান।
উদাহরণ টেনে নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার আরো দুটি উপজেলা পরিষদের বিএনপির দুই চেয়ারম্যান সরকারি দলের সঙ্গে মিশে চেয়ারম্যানশীপ উপভোগ করলেও মান্নানের কাছে চেয়ারম্যানির চেয়ারের চেয়েও বড় ছিল দল ও দেশ। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সেই চেয়ারকে তুচ্ছ ভেবে দলের নেতাকর্মীদের আগলে রেখে রাজপথে থেকেছেন তিনি। রাজপথে সক্রিয় থাকায় নিজে ও নিজের সন্তানদেরও জেল খাটতে হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে মান্নানের স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলে সাকিবকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। অথচ সাকিব রাজনীতিতে ছিলো না। আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোর অবস্থানে বিএনপির বিগত সময়ের তথাকথিত শীর্ষ নেতা পরিচয়দারী নিজেদের গুটিয়ে নিলেও মান্নান ছিলেন অগ্রভাগে রাজপথে।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ- গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সেই মান্নানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বেধেছিল হটাত বিএনপি হওয়া নেতা হিসেবে সোনারগাঁয়ের মাটিতে নতুন করে উদয় হওয়া ব্যক্তিরা। সামনের নির্বাচনে মান্নানকে ঠেকিয়ে মনোনয়ন ছিনিয়ে নেয়ার দিবা স্বপ্ন দেখছেন হাসিনার সরকারের সঙ্গে আতাতকারীরা। গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে বিএনপি নেতা সাজা ব্যক্তিরা এখন মান্নানের বিরুদ্ধে ওঠে পড়ে লেগেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ স্থানীয় মিডিয়াতে মান্নানের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার। নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর এহেন চেষ্টা করছেন পক্ষটি।
তথ্যমতে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাতের কাছে পরাজিত হোন বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুর্বে পূর্বের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে তৎকালীন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহআলম মুকুল মিলিত হয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের মাঠে নেমেছিলেন। সোনারগাঁয়ে বেশকটি মহড়া ও শোডাউন দিয়ে গিয়াস জানানি দেন তিনি সোনারগাঁয়ের নির্বাচনে আসছেন। কিন্তু পরবর্তীতে আসন এলাকা ভাগ হয়ে গেলে গিয়াস সোনারগাঁও থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। নির্বাচনে বিএনপি না আসায় নির্বাচনের পর রেজাউল ও গিয়াস তাদের দুজনের কাউকেই সোনারগাঁয়ে খুজে পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে নীরব রাজনীতিতে নিজেকে নিরাপদে রাখেন খন্দকার আবু জাফরও।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ে বিএনপির হাল ধরার মত নেতা কেউ ছিল না, একমাত্র মান্নান ছাড়া। নেতাকর্মীরা হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের কোনো খোঁজ খবরও রাখেননি কেউ। নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করা, জেলখানায় খবর নেয়া, জেলখানার খরচ ব্যয় বহন, এমনকি জেলবন্ধি বা আহত নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবরও রেখেছেন মান্নান। এভাবে সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেছিলেন মান্নান। শুধু নেতাকর্মীদের পাশেই থেকেছেন তা নয়, নগরীর ডিআইটি বানিজ্যিক এলাকায় জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি সিটি করপোরেশন থেকে নেয়ার পেছনে মান্নানের বিপুল পরিমান অর্থের অনুদান রয়েছে। যে ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন ভবন করেছে সিটি করপোরেশন।
এদিকে এসবের মাঝে মান্নান ও তার সন্তানদের জেল খাটতে হয়েছে গ্রেপ্তার হয়ে। আন্দোলন সফল করতে বছরের পর বছর ছিলেন আত্মগোপনে। তার স্কুল পড়ুয়া ছোট সন্তান সাকিবকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ছাড়াও মান্নান ও তার আরেক পুত্র জেলা ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজীবও জেল খেটেছেন। পৃথকভাবে ছাড়াও পিতা-পুত্র একসাথে জেল খেটেছেন। মান্নান ও সজীব পিতা পুত্র মিলে ৬০টির বেশি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়েছেন।
২০২৩ সালের মে মাসের ১৫ তারিখেও মান্নান কারাগারে যান। তিনি সহ ১৬ নেতাকর্মীকে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে কারাগারে নেয়ার সময় সেদিন তার অশ্রুসিক্ত চোখে যেনো বুকফাটা আর্তনাদ ভেসে ওঠেছিল। সেবার দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবরেও জেলে গিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। এ ছাড়াও আরো বেশকবার গ্রেপ্তার হোন এবং কারাগারে যান। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ নগরীর ২নং রেলগেটের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গেলে পুলিশের বেদম লাঠিপেটার শিকার হোন এই মান্নান।
মোট কথা গত সাড়ে ১৫ বছরে মান্নান কয়েক দফায় প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এখন ৫ আগস্টের পর মাঠে এসেছেন বেশকজন ব্যক্তি যারা নিজেদের বিএনপি নেতা দাবি করেন। কিন্তু তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর শরীরে হাওয়া লাগিয়ে বেরিয়েছেন। তাদের জেল খাটতেও হয়নি। কালেভদ্রে দু’একটি মামলা থানায় হলেও পুলিশ তাদেরকে কোনো দিন গ্রেপ্তার করেনি। ম্যানেজে মামলার চার্জসিট থেকেই বাদ পড়েছেন তারা। আরামে আয়েশে তারা যখন বাড়িতে ঘুরে বেরিয়েছেন তখন মান্নান ও তার নেতাকর্মীরা আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে গ্রেপ্তার এড়াতে রাতবিরাতে বনবাদারে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু এখন আওয়ামীঘেষারা সবচে বড় নেতা বনে গেছেন। এই মান্নান গত সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের আগলে রেখে অভিভাবকের ভুমিকা পালন করেছেন।