জয়নালের পক্ষে শীর্ষ আইনজীবী নেতারা: শুধুই পেশাগত নাকি পেছনে রাজনীতি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নাল অবশেষে দুটি চাঁদাবাজি মামলায় জামিন পেয়েছেন। ১২ মে রবিবার তিনি জামিনে মুক্তি পান। দীর্ঘ ১৮ দিন তিনি কারাগারে ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে রিমান্ড শুনানি, রিভিশন শুনানি ও জামিন শুনানিতে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের শীর্ষ প্রায় অর্ধশতাধিক আইনজীবী নেতা। যেখানে শীর্ষ ১২জন আইনজীবী নেতা ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এসব আইনজীবীদের অনেকেই আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয়পার্টির রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন বলয় ভিত্তিক রাজনীতিও করেন।

এই জয়নাল আবেদীন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের জমি দখলেরও চেষ্টা করে আসছিলেন। হাসান ফেরদৌস জুয়েলের করা একটি মামলায় জয়নাল আবেদীন আসামি। যে কারনে আইনজীবীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- এই এক জয়নালের পক্ষে শীর্ষ আইনজীবী নেতাদের আইনি লড়াইটি আসলেই কি শুধুমাত্র পেশাগত কারন ছিল নাকি পেছনে আদালতপাড়ার রাজনৈতিক কারনটিও ছিল?

কেউ কেউ বলছেন এখানে শুধুমাত্র আদালতপাড়ার রাজনীতিই ছিল না বরং জেলা পর্যায়ের রাজনীতিও থাকতে পারে। এমন সব নানা ধরণের গুঞ্জন আইনজীবীদের মাঝেও ছড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। ১২জন শীর্ষ নেতা জয়নালের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে দাড়ানোকে কেউ কেউ এটাকে আইনজীবী সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধেই দাড়ানো বলে অবহিত করেছেন। যদিও এসব মামলার বাদী বার সভাপতি নন। আবার বাদী পক্ষের শুনানিতে জয়নালের বিরোধী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন বার সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল। অনেকেই বলেছেন জুয়েলের সঙ্গে যাদের মতের দূরত্ব রয়েছে তাদের অনেকে উৎসাহি হয়েই জয়নালের আইনি লড়াইয়ে এসেছিলেন।

আবার অনেক আইনজীবীরা বলছেন, আইনজীবীরা যে যার যার মতাদর্শে রাজনীতি করতেই পারেন। একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি যেকোন বিচারপ্রার্থীর কেবলমাত্র একজন আইনজীবীই আর কিছু নন। যে কোন বিচারপ্রার্থী আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন। এটা আইনজীবীদের পেশা। পেশাগত কারনে যে কোন বিচারপ্রার্থীর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে যে কোন আইনজীবী থাকতেই পারেন। এখানে রাজনীতি থাকার সম্ভাবনা কম।

জানাগেছে, গত ২৮ এপ্রিল থেকে জয়নালের পক্ষে এসব আইনজীবী নেতারা আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। ২৮ এপ্রিল রবিবার ওই মামলায় পুলিশের চাওয়া রিমান্ড শুনানিতে জয়নালের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন অর্ধশত আইনজীবী, যাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির শীর্ষ ১২জন আইনজীবী নেতা জয়নালের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন। এদের মধ্যে আবার আইনজীবী সমিতির সাবেক ৪ জন সভাপতিও লড়েছেন এই রিমান্ড শুনানিতে।

মামলায় আসামি জয়নালের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক ৪ বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু।

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ছাড়াও আইনি লড়াইয়ে জয়নালের পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট হাবিব আল মুজাহিদ পলু, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খন্দকার, অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান ও অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন সহ অর্ধশত আইনজীবী।

এদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। আব্দুল বারী ভুইয়া বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এবং তিনিও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। আব্দুর রশিদ ভূঁইয়াও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি। জাকির হোসেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিরিত সাবেক সেক্রেটারি। আসাদুজ্জামান আসাদ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)।

এছাড়াও সরকার হুমায়ুন কবির মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি। তিনিও আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি। হাবিব আল মুজাহিদ পলু আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ও বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। খোরশেদ আলম মোল্লা জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আড়াইহাজার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সেই সঙ্গে তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেক্রেটারিও। আবদুল মজিদ খন্দকার জেলা জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব। কামরুল আহসান সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং আওলাদ হোসেন জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক।

এখানে উল্লেখ্যযে, গত ২৪ এপ্রিল বুধবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আল জয়নালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক বাদী হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সদর মডেল থানায় জমি সংক্রান্ত ঘটনায় ২০ লাখ টাকা চাঁদাদাবী মামলা করেন। সদর মডেল থানা পুলিশ ওই মামলার সূত্র ধরে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১২ টার দিকে নগরীর এসএম মালেহ রোডে জয়নালের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার বিরুদ্ধে আরও একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হয়।