নারায়ণগঞ্জে দুই মনোনয়ন শিকারির রাজনীতিতে বিদায়

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। দুজনই মুক্তিযোদ্ধা। যদিও রেজাউল করিম মুক্তিযোদ্ধা কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছিল বারবার। তিনি হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি সব নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। মাঝের ২১ দিনের ক্ষমতার নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে এসেই মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন গিয়াসউদ্দীন। এবার প্রবীন দুই রাজনীতিকের নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। কারন এ নির্বাচনের পরবর্তী নির্বাচনের ৫ বছরে তাদের আর সেই সুযোগ থাকছেনা। কারন সেটা বয়স ও বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। মুলত এই দুই নেতা ছিলেন নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনীতিতে। যে কারনে তাদেরকে নেতাকর্মীরা বলেন মনোনয়ন শিকারি।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, তৃনমূল থেকে ওঠে আসনে রেজাউল করিম। তিনি সোনারগাঁয়ে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হন। হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি নিজেকে অধ্যাপক ও মুক্তিযোদ্ধা দাবি করায় দুটি বিষয় নিয়েই প্রশ্ন ওঠে বারবার। রেজাউল করিমের আমলে সবচেয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল ‘ওরা ১১ জন’। যাদের নিয়ন্ত্রনে ছিল পুরো সোনারগাঁ। অন্যায় অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রও কম করেনি ওরা ১১ জন। রেজাউল করিম ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বেও। ১/১১ এর সময় রেজাউল করিম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংস্কারবাদীদের সঙ্গে যোগ দেন। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পান এবং আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের কাছে ৮২ হাজার ভোটে পরাজিত হন।

তারপর থেকে রেজাউল করিম মাঠের রাজপথের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। শুধুমাত্র নির্বাচনের সময় আসলেই তিনি এলাকায় গণসংযোগ করতেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের বছর খানিক আগে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সরব হন। ওই সময় সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। ওই নির্বাচনে শুধুমাত্র সোনারগাঁও নিয়ে এ আসনটি সংস্কার করা হয়। নির্বাচনের পর আবারো তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। কিন্তু এবার আর তার ভাগ্য ফলপ্রসু হয়নি। এ আসনে দুজনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও রেজাউল করিমকে চিঠি দেয়া হয়নি। যদিও সোনারগাঁয়ে তার ভোট ব্যাংক রয়েছে একটি অংশ।

অন্যদিকে একইভাবে মনোনয়নের রাজনীতি করতে গিয়ে এবার মনোনয়ন পাননি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও ঋণের দায়ে তার মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন পান শিল্পপতি সফর আলী ভুইয়া। ওই নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন আগে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপি যোগদান করেন গিয়াস। পরে সফল আলীর মনোনয়ন বাতিল করে বিএনপি মনোনয়ন দেয় গিয়াসউদ্দীনকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন গিয়াসউদ্দীন। এর আগে শামীম ওসমানের কর্মী ছিলেন গিয়াস। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন পান মুহাম্মদ শাহআলম। ওই নির্বাাচনে শুধুমাত্র ফতুল্লা নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন।

ওই নির্বাচনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে শোডাউন করেন গিয়াস। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সিদ্ধিরগঞ্জ আবারো যুক্ত করা হয় ফতুল্লা নিয়ে। সোনারগাঁও থেকে তখন মুখ ঘুরিয়ে নেয় গিয়াস। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। সেই নির্বাচনের পর শুধুমাত্র তার নির্বাচন কেন্দ্রীক কর্মকান্ড ছাড়া দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে তার কোন ভুমিকা ছিল না। এবার তিনি আবারো মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন মুহাম্মদ শাহআলম ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। মামুন মাহামুদ সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি। গিয়াসউদ্দীনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার যিনি সেই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হাই রাজু গিয়াসের বলয়ের ত্যাগ করেছেন। ফলে সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়াসের অবস্থান নড়বড়ে। আর আবারো তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসাটা তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। যে কারনে নেতাকর্মীরা তাকেও রাজনীতিতে বিদায় দেখছেন।