ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ। ৭ মে মঙ্গলবার রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে মাশরাফির দল। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন করেছে আয়ারল্যান্ড।

ডাবলিনে প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলে ৯ উইকেটে ২৬১। জবাবে ৪৫ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে দারুণ জয় তুলে নেয় টাইগাররা।

২৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শেষ দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছন্দে ফেরা সৌম্য সরকার। জেসন হোল্ডারকে আপার কাট করে বাউন্ডারি হাঁকানোর এক বল পর আবার সৌম্য তুলে নেন বাউন্ডারি। তাতে ৪৭ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। সৌম্যের পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম ইকবালও।

বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি শতরানের জুটি ছিল তামিম ও মুশফিকুর রহিমের। তামিম-সৌম্য জুটিতেও শতরান হলো পাঁচবার।

অবশ্য ২৬ তম ওভারে চেজের বলে ব্রাভোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সেঞ্চুরির পথে থাকা সৌম্য। এর আগে দলের জন্য এক ছয় ও নয়টি চারে মূল্যবান ৭৩ রান এনে দিন তিনি। তামিমের সঙ্গে ১৪৪ রারে জুটি।

সৌম্য ফেরার পর তামিমকে সঙ্গ দেন সাকিব আল হাসান। মনে হয়েছিল সেঞ্চুরি পাবেন তামিম। কিন্তু ১১৬ বলে ৮০ রান করে আউট হন তিনি। তবে জয়ের ভিত বেশ ভালোমতোই গড়ে দিয়ে যান তামিম ও সৌম্য।

এদিন শুরু থেকেই দারুণ ব্যাট করছিলেন সাকিব। মুশফিককে নিয়ে দারুণ এগুতে থাকেন তিনি। এ জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকেই জয় তুলে আনেন। সাকিব ৬১ বলে ৬১ ও মুশফিক ২৫ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৬১ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উদ্বোধনী জুটিতে রীতিমতো বাংলাদেশি বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের প্রথম ঘণ্টায় ১৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৫ রান তুলে নেয় ক্যারিবীয়রা।

তবে তাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা এতোটা সহজ ছিল না। ইনিংসের প্রথম বলেই চার হাঁকালেও দুই ডান হাতি পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মাশরাফি বিন মর্তুজার মাপা লাইন-লেন্থের বিরুদ্ধে শুরুর দিকে ধুঁকতে হয়েছে হোপ-অ্যামব্রিসকে।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলেই অ্যামব্রিসের বিপক্ষে লেগ বিফোরের শক্ত আবেদন করেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু আম্পায়ার নাকচ করে দেন সে আবেদন। প্রথম ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৮ রান।

১১তম ওভারে প্রথমবারের মতো মোস্তাফিজুর রহমান আক্রমণে এলে হাত খুলে খেলার সুযোগ পান দুই ক্যারিবীয় ওপেনার। তবে বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান সাধ্যমতো চেষ্টা করেন রানের চাকা আটকে রাখার। সাকিবের এ প্রচেষ্টার সুফল ভোগ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

উদ্বোধনী জুটিতে দুই ওপেনার ১৬ ওভার খেলে যোগ করেন ৮৫ রান। ১৭তম ওভারে আক্রমণে আসেন মিরাজ। আক্রমণে আসার পর প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে তাকে স্বাগত জানান অ্যামব্রিস। তবে পরের বলেই অ্যামব্রিসকে শর্ট কভারে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নেন মিরাজ।

ঠিক পরের ওভারেই ড্যারেন ব্রাভোকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব আল হাসান। আউট হওয়ার আগে ৪টি বাউন্ডারি মেরে ৫০ বলে ৩৮ রান করেছেন অ্যামব্রিস। ব্রাভো আউট হয়েছেন ৪ বলে মাত্র ১ রান করে।

পরপর দুই উইকেট পড়লেও তৃতীয় উইকেটে রস্টোন চেজকে নিয়ে ফের লম্বা জুটি গড়েন শাই হোপ। আড়াই বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছতে ৫৩ রানের প্রয়োজন ছিলো শাই হোপের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭০ রানের ইনিংস খেলায় আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশের বিপক্ষেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি।

ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টাইগারদের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের দুই হাজার রানও পূরণ করে ফেলেছেন হোপ। একইসঙ্গে ভেঙে দিয়েছেন দুই সাবেক ক্যারিবীয় তারকা স্যার ভিভ রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারার রেকর্ড।

এতদিন ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে কম ইনিংসে ২০০০ ওয়ানডে রান করার রেকর্ড ছিলো স্যার ভিভের। তিনি করেছিলেন ৪৮ ইনিংসে। আজ নিজের ৪৭তম ইনিংসেই ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন শাই হোপ। নিচে নামিয়ে দিলেন কিংবদন্তি ভিভকে।

এছাড়াও ক্যারিবীয়দের হয়ে সবচেয়ে কম সময়ে ২০০০ ওয়ানডে রান পূরণ করার নতুন রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হোপ। অভিষেকের ২ বছর ১৭৩ দিনের মাথায় ২০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। আগের রেকর্ড ছিল বাঁহাতি তারকা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার, ২ বছর ৩৬১ দিনে।

দুই কিংবদন্তির রেকর্ড ভাঙার পর চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটিও তুলে নেন হোপ। গত অক্টোবরের আগে ৩৭ ম্যাচের ৩৪ ইনিংসে মাত্র ১টি সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শাই হোপ। সেই তিনিই গত ৬ মাসে মাত্র ১৪ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে হাঁকালেন আরও ৫টি সেঞ্চুরি।

যার তিনটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে, টানা তিন ইনিংসে! আজ ডাবলিনের ক্যাসেল এভিনিউতে ব্যক্তিগত ৫৩ রানের মাথায় স্যার ভিভ রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভাঙেন হোপ। এরপর সেঞ্চুরিত তুলে নিয়ে চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি করলেন ২৫ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান।

এর আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে এসে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে ১৪৬ এবং ১০৮ রানের দুইটি অপরাজিত শতক হাঁকিয়েছিলেন হোপ। সে ধারাবাহিকতায়। প্রায় ৫ মাস পরেও হাঁকালেন সেঞ্চুরি। যা কিনা তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি।

দেখেশুনে খেলে ১২৬ বলে ১০ চার ও ১ ছয়ের মারে পূরণ করেছেন নিজের ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটি। এছাড়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হোপের ব্যাট থেকে এসেছে ১৭০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

তবে সেঞ্চুরির পর বেশিদূর যাওয়া হয়নি হোপের। মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত শেষ স্পেলে কক্ষচ্যুত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে যেখানে ৩০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ উঁকি দিচ্ছিল, সেখানে মাশরাফির দারুণ বোলিংয়ে পরপর তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ইনিংসের ৪১তম ওভারে প্রথম ৫১ রান করা চেজকে ফেরান মাশরাফি। বড় শট খেলতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন চেজ। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই সেঞ্চুরিয়ান হোপকে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন টাইগার অধিনায়ক।

আউট হওয়ার আগে ১১ চার এবং ১ ছক্কার মারে ১৩২ বলে ১০৯ রান করেন হোপ। উইকেটে আসেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। মাশরাফির প্রথম বলেই চার হাঁকান তিনি। তবে পরের বলেই তাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২ উইকেটে ২০৫ থেকে ৫ উইকেটে ২১১ রানের দলের পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ইনিংসের ৪৫তম ওভারে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন সাইফউদ্দিন, ফিরিয়ে দেন অভিষিক্ত শেন ডাওরিচকে। তবু মোস্তাফিজের লাইন-লেন্থহীন বোলিংয়ের ফায়দা নিয়ে রান করতে থাকেন অ্যাশলে নার্শ এবং জোনাথন কার্টার। ৪৮তম ওভারে ৭ উইকেটে ২৫০ পূরণ হয় তাদের।

শেষ দুই ওভারে আরও ১১ রান নিয়ে দলীয় সংগ্রহটাকে ২৬১ রানে নিয়ে ঠেকায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফির ৩ উইকেট ছাড়াও ২টি করে উইকেট নেন সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজ। দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব নেন ১টি করে উইকেট।