ধর্ষণ সামাজিক অবক্ষয় ও লজ্জাজনক অবনতি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

সম্প্রতি আমি বেশ হতবাক দৃষ্টিতে ও আশংকাজনকভাবে লক্ষ্য করছি, কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের সভ্য সমাজের নাগরিকদের মানবিক অনুভূতি বেশ ভয়ানকভাবে কমতে শুরু করেছে। যার মধ্যে অনত্যম প্রতিনিয়ত সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনা।

আজ থেকে প্রায় কয়েক বছর আগের কথা মনে করলে আমার মনে পড়ে আমার গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর কথা। যেসব বিষয়কে সমাজের চোখে একটা বিরাট বা জঘণ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হতো, আজকে সেটা অনেকটা গড়পড়তা ব্যাপার কিংবা মামুলি বিষয়ে পরিণত করে ফেলেছে সেই মানুষগুলোই।
এটাকে সামাাজিক অবক্ষয় নাকি লজ্জাজনক অবনতি তা হিসেব করতে আমাদের অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে সময়ের ব্যবধানে ও সমাজের ক্রমবিকাশে নানামুখী পরিবর্তনের হাত ধরে সমাজের পরিবর্তন ঘটবে এবং সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী এবং নানান সামাজিক বিষয়ে মানুষের মানবিক মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব ঘটনা সমাজের অস্তিত্ব ও স্থায়ীত্বকে প্রশ্নের মুখের ঠেলে দেয়, মানুষের মানবিক মর্যাদার জায়গাটায় আঘাত করে এবং মানুষের আত্মমর্যাদার জায়গাটা নষ্ট করে দেয়, সেসব ঘটনা নিয়ে যখন আমাদের সামাজিক এবং মানবিক উদাসিনতা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকে। তখন বুঝতে হবে আমরা ব্যক্তিক পর্যায়ে হয়তো আগাচ্ছি কিন্তু সামাজিকভাবে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছি। আমরা অবকাঠামোগতভাবে হয়তো আগাচ্ছি কিন্তু মানবিকতার জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছি, হয়তো আমরা অর্থনৈতিকভাবে আগাচ্ছি ঠিকই কিন্তু নৈতিকভাবে বেশ পিছিয়ে পড়ছি।

যখন দেখছি সারা নারায়ণগঞ্জ জুড়ে ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। ঠিক তখনই এ বিষয়গুলো আমার মাথায় বারবার হানা দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি থানায় সম্প্রতি একের পর এক জঘন্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সমাজের মধ্যে এনিয়ে তীব্র কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সবাই বেমালুম নির্বিকার। চলন্ত বাসে ধর্ষণ, দলবেঁধে ধর্ষণ, মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ, কাজের মেয়েকে ধর্ষণ করে, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া, মা-মেয়েকে এক সাথে ধর্ষণ, গার্মেন্টের কর্মী ধর্ষণ, প্রেমিক ও তার বন্ধুদের নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ, শশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে নববধূ ধর্ষিত। এ রকম অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা আমরা সংবাদপত্রে এবং ইলেকট্রিনক মিডিয়ায় হরহামেশা দেখছি। কিন্তু এসব ঘটনা আমাদের মধ্যে এখন আর কোনো ধরণের ক্ষোভ বা তীব্র আবেদন তৈরি করে না।

আমাদের মানবিক অনুভূতিতে কোনোভাবেই কোনো ধরণের সংবেদনশীলতা তৈরি করে না। কেননা নারী নির্যাতন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, যৌন হয়রানি, নারীর অধঃস্থনতা প্রভৃতি বিষয়াদি পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় পরিসরে ইদানীং বেশ জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে। তবে, ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনা নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, নারীর সমানাধিকার, নারীর পেশাগত উন্নয়ন, নারী শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি সামাজিক ও রাজনৈতিক ডিসকোর্সকে আবারও নতুন করে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।
কেননা সাময়িক বিরতি দিয়ে দিয়ে কিছু কিছু ঘটনা আমাদের সামনে এমনভাবে হাজির হয় যা আমাদের নারী উন্নয়নকেন্দ্রীক তৃপ্তির ঢেঁকুরের ভেতরে বাস্তবতার কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়ে নতুন করে জানান দেয় আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান কোথায়। তাই আসুন আমরা সবাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাই। মায়ের জাতি নারীকে সম্মান করতে শিখি।

লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন
আইন শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী