সোনারগাঁয়ে কর্মীদের সন্দেহে বিএনপির দুই পরিবার!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যাবত জড়িত দুটি পরিবার। যাদেরকে এতদিন বিএনপি নেতাকর্মীরা বিএনপির পরিবার হিসেবেই জানতেন। কিন্তু দুটি পরিবারের দুই জন সদস্য যখন জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেছেন তখন বিএনপির ওই দুটি পরিবার নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারন দুটি পরিবারের মাঝে আরও বেশকজন সদস্য রয়েছেন যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এবং দলীয় পদ বহন করছেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, দুটি বিএনপির পরিবারের দুজন সদস্য জাতীয়পার্টিতে যোগদানের পর বাকি সদস্যরাও দল ত্যাগ করছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ উদ্বেগ নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন যে কোন সময় বাকিরা বিএনপি ছাড়তে পারেন। তারা কৌশলগত কারনে ছোট পদ বহনকারীদের জাতীয়পার্টিতে ঠেলে দিয়েছেন। সুযোগ বুঝে তারাও দল ত্যাগ করবেন। যদিও এর মধ্যে একটি পরিবারের সদস্য হাজী সেলিম হক রুমি বিএনপি ছাড়ার প্রশ্নই ওঠেনা বলে দাবি করেছেন একটি মিডিয়াতে। এর আগে বিএনপি ছাড়ার বিষয়টি নাকচ করেছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি হারুন রশিদ মিঠুও।

নিজের শারীরিক অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সভাপতি এমএ জামান পদত্যাগ করেছিলেন। সেই পদত্যাগের পর অবশেষে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন এমএ জামান সহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীরা। বিএনপির এসব নেতাকর্মীরা বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সংস্কারপন্থী নেতা রেজাউল করিমের বলয়ের রাজনীতি করতেন। গত ১২ মার্চ এসব নেতাকর্মীদের জাতীয়পার্টিতে যোগদানের প্রস্তুতি ছিল। যোগদানের আগেই সমালোচনা শুরু হলে তা পিছিয়ে যায়। ওই যোগদানকারীদের সঙ্গে ছিলেন কাঁচপুুরের ফজল হক চেয়ারম্যানের ছেলে হানিফ ও পৌরসভার সালাউদ্দীনের চেলে ওমর ফারুক টিটু।

গত ৩ মে শুক্রবার বিকালে পৌরসভার টিপরদী এলাকায় সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে তারা জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেন। যোগদান অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্বে করেন পৌরসভা জাতীয়পার্টির সভাপতি পিয়ার আলী।

অনুষ্ঠানে লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে যোগদান করেন- পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ জামান, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ও তার ছোট ভাই মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি খোরশেদ আলম, কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হকের ছেলে কাঁচপুর ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সেক্রেটারি হানিফ, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন, পৌর বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান, সাবেক পৌর ছাত্রদল নেতা মোজাম্মেল হক, ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক টিটু।

এদের মধ্যে মজিবুর রহমান ও টিটু নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছিলেন। টিটুর বাবা সালাউদ্দীন পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনিও নাশকতার মামলায় কারাভোগ করেন। টিটুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ মিঠু নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এর আগেও তিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আপাদমস্তক একটি বিএনপির পরিবার থেকে টিটু জাতীয়পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করলেন। যদিও এর আগেই তিনি জাতীয়পার্টির হয়ে কাজ করে আসছিলেন। টিটুর ছোট ভাই রিতুকেও বিএনপির বিভিন্ন সভা সমাবেশে মিছিলে দেখা গিয়েছিল। সালাউদ্দীনও গত নির্বাচনের আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিএনপির নাশকতার মামলায়।

এদিকে কাঁচপুুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজল হক দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। বিএনপির রাজনীতির সুবাদে তিনি একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার ছেলে সেলিম হক রুমি জেলা বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। রয়েছেন কাচপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বেও। তার ভাই আপেল, শামীমও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। আরেক ভাই ইকবাল হক দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তিনি দেশের বাহিরে রয়েছেন। গত নির্বাচনের আগে পুরো পরিবারটিই বিএনপির নাশকতার মামলায় আসামি হয়ে আত্মগোপেন চলে যান। সেই পরিবারের সদস্য শ্রমিকদলের নেতা হানিফ জাতীয়পাার্টিতে যোগদান করেছেন। ফলে বিএনপির এই দুটি পরিবার নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তারাও কি বিএনপির রাজনীতি ছাড়বেন কিনা তা দেখার অপেক্ষায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। যদিও দুটি পরিবারের দুই সদস্য বিএনপির রাজনীতি ছাড়বেন না বলেও দাবি করেছেন। কিন্তু তাদের দুই পরিবারের সদস্য এখন জাতীয়পার্টিতে যোগদান করলেন। এতে বিএনপির রাজনীতিতে বিতর্কিত হলো বিএনপির দুটি পরিবার।