বন্দরে ব্যক্তি পছন্দ নাকি ত্যাগীদের হাতে ওঠবে যুবদলের নেতৃত্ব?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির টানা কর্মসূচিগুলো যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালন করেছেন, হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন নেতাদের নেতৃত্বেই ওঠুক নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন বন্দর উপজেলা ও বন্দর থানা যুবদলের কমিটি। এমনটা ত্যাগী নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করলেও দ্বিধাহীনভাবে রয়েছেন নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতারা। কারন এমন কঠোর আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রাখা নেতাদের মাইনাস করে যদি মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তি পছন্দের লোকদের হাতে নেতৃত্বে তুলে দেয়া হয়!

ত্যাগীদের দাবি- ব্যক্তি পছন্দের বাহিরে গিয়ে যারা দীর্ঘদিন যুবদলের রাজপথে থেকে রাজনীতি করেছেন এবং নির্বাচনের পূর্বে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে হামলা মামলা জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল। নির্বাচনের পূর্বে যুবদলের অনেক নেতারাই ঘা ঢাকা দিলেও সম্রাট হাসান সুজন সহ বেশকজন নেতা রাজপথে আন্দোলনে কঠোর ভুমিকা রেখেছেন। কেউ কেউ আবার নামকাওয়াস্তে ফটোসেশন করেই নিজেদের লোকদেখানো দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে বন্দর উপজেলা ও থানা যুবদলের কমিটি মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতারা দিবেন বলে বিশ্বাস করেন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা।

বন্দর উপজেলা ও থানা যুবদলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নেতৃত্বশূণ্য রয়েছে বন্দর উপজেলা ও থানা যুবদল। সামনের আন্দোলন সংগ্রাম ও দলীয় কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল ও বেগবান করতে হলে দ্রুত বন্দর উপজেলা ও থানা যুবদলের কমিটি গঠন করা প্রয়োজন মনে করছেন নেতাকর্মীরা। যেখানে নেতাকর্মীদের দাবি- মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের মাইম্যান নয়, কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দের বা চাটুকার নয়, যারা বিগত সময়ের আন্দোলনে রাজপথে পরীক্ষীত ও ত্যাগী তাদের হাতেই ওঠুক বন্দর উপজেলা ও থানা যুবদলের কমিটি।

নেতাকর্মীরা জানান, পূর্বে গঠিত বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক শিশির ও সদস্য সচিব শাহিনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও বিরোধের কারনে স্থবির হয়ে যায় উপজেলা যুবদলের মুল নেতৃত্ব। এমন অবস্থায় বন্দর উপজেলা যুবদলের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সম্রাট হাসান সুজন। ওই কমিটি গঠনের পূর্বে থেকেই মহানগর যুবদলের সদস্য পদে থাকাবস্থাতেই রাজপথে তুখোর ভুমিকা রাখেন কারানির্যাতিত এই নেতা।

নির্বাচনের পূর্বে চাষাড়া প্রেস ক্লাব এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সম্রাট হাসান সুজনের হাতে গুলাইল দিয়ে পাল্টা হামলার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়। একাধিক সরকার পতন কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে রাজপথে কঠোর ভুমিকা রাখতে সুজনকে দেখা যায়। যার দূরণ তাকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতেও হয়। একাধিক মামলার আসামী হয়ে দীর্ঘ ৩ মাস কারাভোগ করে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

এদিকে নেতাকর্মীরা আরো জানান, নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে মনিরুল ইসলাম সজলকে আহ্বায়ক, সাগর প্রধানকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব। এই কমিটি গঠনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা ও বন্দর উপজেলা কমিটি মহানগর যুবদলের আওতাধীন পরিচালিত হবে বলে ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল।

এই ঘোষণার পর বন্দর উপজেলা ও থানায় দুটি কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সজল ও সাহেদ তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের মাধ্যমে দুটি ব্যানারে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেন। অথচ আগের কমিটির আমলে বন্দর উপজেলা যুবদলের নেতৃত্ব বাঁচিয়ে রাজপথে নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলনকারী সুজনদের মত নেতাদের মাইনাসের চেষ্টাও চলে সে সময়। বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নানা ব্যর্থতার কারনে যখন যুবদল নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পথে তখনো সুজন যুবদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগঠিত করেছেন এবং রাজপথে আন্দোলন করেছেন।

অন্যদিকে ঘটনা সূত্রে, ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আওতাধীন বন্দর উপজেলা যুবদলের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে তৎকালীন জেলা যুবদল। মহিউদ্দিন শিশিরকে আহ্বায়ক ও শাহীন আহমেদকে সদস্য সচিব করে বন্দর উপজেলা যুবদলের এই কমিটির অনুমোদন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন সম্রাট হাসান সুজন, মো. নজরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম রিপন, শাহাদুল্লাহ মুকুল, দেলোয়ার হোসেন শাহ্, মামুন মিয়া, মীর আব্দুর রহিম, কাউছার হামিদ খাঁন, রাসেল এনামুল হক, গোলবক্স ভূঁইয়া রাসেল ও জাহিদ খন্দকার।

এ ছাড়াও সদস্য পদে ছিলেন আশিকুর রহমান আলী, আবদুল্লাহ আল মামুন, আরিফ হোসেন, সজিব খন্দকার, নাজমুল হক, মো. মহসিন, ইমরান হোসেন ইরান, রুবেল মিয়া, তাওলাদ মাহমুদ, মো. শামীম, মো. সাঈদ, দ্বীন ইসলাম, বাবুল হোসেন, শাহজাহান মিয়া, আজিজুল হাকিম, ফয়সাল আহম্মেদ, মোক্তার হোসেন, মো. গোলাপ।

এ ছাড়াও ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ খান ও শাহাদুল্লাহ মুুকুলকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। ওই কমিটিতেও সম্রাট হাসান সুজন সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও সুজন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য ছিলেন। মহানগর যুবদলের সদস্য হওয়ার পূর্ব থেকেই আজোবধি ১৫ বছর যাবত রাজপথে সক্রিয় অবস্থান করছেন।

প্রসঙ্গত, জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বে কামরুল ইসলাম রনি ও ওয়াহিদ সাগর নামে যুবদলের দুই কর্মী বন্দর উপজেলা যুবদলের নেতৃত্ব প্রত্যাশি হিসেবে নিজেদের দাবি বেশকটি ঠান্ডা কর্মসূচিতে সরব ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন নাগাদ সময়ে কঠোর আন্দোলনে দেখা যায়নি। মুলত মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দের কারনে এ ধরণের আনাড়ি ধাচের কর্মীদের বন্দর উপজেলা যুবদলের নেতৃত্ব বসানোর চেষ্টা চলছিলো। যেখানে সুজনের মত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মাইনাস করা হলে যুবদল আরো সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে যাবে।

ওয়াহিদ সাগরের তেমন একটা পরিচিতিও নাই। রনি বন্দরের বাসিন্দা হলেও তার বসবাসও অন্য থানা এলাকায়। যুবদলের রাজনীতিতেও সুপরিচিত নন। এদের চেয়ে বন্দর উপজেলা ও থানার নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন সংগ্রাম ত্যাগী স্বীকার করেছেন সুজন। যে কারনে মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের সুদৃষ্টি সুজনের দিকে পড়বে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।