বারী ভূঁইয়ার চেম্বারেও পুলিশি হানা: দুই আইনজীবীকে আটকে তীব্র সমালোচনা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে এক সপ্তাহ পূর্ব থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে আসছে। ইতিমধ্যে অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরি ফাঁকে আদালত চলাকালীন সময়ে আদালতপাড়া সংলগ্ন পৃথক দুটি চেম্বার থেকে বিএনপির দুই আইনজীবীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

একই দিন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়ার চেম্বারেও হানা দিয়েছিলো পুলিশ। তবে সে সময় বারী ভুঁইয়া চেম্বারে ছিলেন না। এ ছাড়াও বিএনপি পন্থী একাধিক আইনজীবীর চেম্বারে পুলিশ প্রবেশ করে এবং অনেক আইনজীবীর চেম্বারের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা কৌশলে সটকে পড়েন। এ বিষয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে এ্যাটর্নী জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিনউদ্দীন বলেন, এটা সমর্থন করি না। আইনজীবীদের চেম্বারে পুলিশের অভিযান ও আটকের বিষয়ে দেশব্যাপী আইনজীবী সমাজে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে পরদিন দুই আইনজীবীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ ছাড়াও আদালতপাড়া থেকে দুই আইনজীবীকে তাদের নিজ চেম্বার থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। ২৩ অক্টোবর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ও আইনজীবী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যায় জেলা পুলিশ। ওইদিন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়ার চেম্বারেও প্রবেশ করে পুলিশ।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া বলেন, কাস্টমস রয়েছে যে কোনো আইনজীবীর চেম্বার থেকে কোনো বিচারপ্রার্থী আসামীকেও পুলিশ আটক কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারবে না, আইনজীবীকে আটক করাতো দূরের কথা। কিন্তু দেশে আজ গণতন্ত্র নাই, বাকস্বাধীনতা নাই, বিচারশূণ্য রাষ্ট্রে পরিনত করার লক্ষ্যেই আইনজীবীদের চেম্বারে চেম্বারে পুলিশ অভিযান দিয়েছে। আমার চেম্বারেও পুলিশ এসেছিলো, আমি তখন চেম্বারে ছিলাম না। দুজন আইনজীবীকে চেম্বারে পেয়ে তাদেরকে আটক করা হলো। এ বিষয়ে সকল আইনজীবী একযোগে এর প্রতিবাদ করা উচিত। কারন এই ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত কারো জন্যই ভালো নয়। সেজন্য আমি তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই এবং দোষী পুলিশদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

তবে গত ২৩ অক্টোবর পুলিশের এমন ভুমিকায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী সমাজেও তীব্র সমালোচনা ওঠেছে। চেম্বারে চেম্বারে পুলিশের এমন অভিযানের বিষয়ে আওয়ামী পন্থী অনেক আইনজীবীরাও নাখোশ। রাজনৈতিক কারনে তারাও চুপসে আছেন।

অন্যদিকে জানাগেছে, ওইদিন থেকে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের চেম্বার এখন অনিরাপদ হয়ে পড়ায় আইনজীবীদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়। মুলত যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত কিংবা যারা সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন তাদের মাঝে চরম আতংকের সৃষ্টি হয়। সেদিন থেকে আদালতপাড়ায় বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর সমর্থিত আইনজীবীদের উপস্থিতি দেখা গেছে অনেকাংশে কম। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ আইনজীবীরা গ্রেপ্তার আতংকে আদালতপাড়ায় আইন পেশা পরিচালনা করতেই আসেনি।

২৩ অক্টোবর সোমবার আদালতপাড়ার সম্মুখের দুটি গেটের সামনেই জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের স্টীকার লাগানো মাইক্রোবাস দাঁড়ানো দেখা গেলো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। মুলত আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান চালায় পুলিশ। ওইসব নেতাকর্মীদের পক্ষে কোর্টে আইনী সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিএনপির আইনজীবীরাও ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতির কারনে ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ’-এর ব্যানারে ২৫ অক্টোবর বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের ১নং হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বার কাউন্সিলের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ সময় বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত দুই আইনজীবী খোরশেদ আলম মোল্লা ও সিদ্দিকুর রহমানকে গত ২৩ তারিখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত তাদের ডিবি হেফাজতে রেখে পরদিন অর্থাৎ ২৪ তারিখ দুপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা চলমান নেই। তাদের এভাবে নিজ পেশাগত চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। আইনজীবীরা পেশা পরিচালনায় আতঙ্ক বোধ করছেন। আমরা প্রথমেই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার স্বার্থে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আইনজীবীরা স্বাধীন পেশা পরিচালনার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন। চেম্বার শুধু একজন আইনজীবীরই নয়, বিচারপ্রার্থীর জন্যও নিরাপদ স্থান। সেই নিরাপদ স্থান থেকে কোনোরূপ অভিযোগ ছাড়া দু’জন আইনজীবীকে আটক করার ঘটনা আমাদের দেশে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যেভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় হয়রানি করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, তারই পুনারাবৃত্তি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

‘বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসাবে আমরা প্রত্যাশা করব, প্রধান বিচারপতি এই ঘটনা সম্পর্কে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যাতে আইন পেশার সুমহান মর্যাদা সমুন্নত থাকে।