জাপার মঞ্চে মুকুল, মুলধারায় জাকির-নুরউদ্দীন: সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পুরোপুরিভাবে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুললেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। পবিত্র ঈদ উল আযহার পর বৃহত্তর আয়োজনে হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির জমকালো সম্মেলন। এরি মাঝে মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর থানা, উপজেলা ও সদর থানা কমিটি গঠন সহ মহানগরীর প্রতিটা ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিএনপির ঘোষিত সকল কর্মসূচিগুলো রাজপথে পালন করতেও সক্ষম হয়েছেন। তাদের রাজপথে সক্রিয়তা ও ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি গঠিত হলো। একই সঙ্গে যেসব নেতারা তাদের বিরোধীতা করে বিদ্রোহ করেছিলেন সেইসব নেতারাও সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে বিএনপির মুলধারায় ফিরেছেন।

এদিকে এই সরকার আমলে বন্দরে নিয়মিত আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠে রাজনীতি করা বিএনপি নেতা দাবিদার সেই আতাউর রহমান মুকুল মহানগর বিএনপির দায়িত্ব না পেয়ে আবারো ফিরে গেছেন আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির নেতাদের মঞ্চে। নেতাকর্মীরা বলছেন- গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত হয়তো সামনের নির্বাচনেও আবার মুকুলকে ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করে লাঙ্গলের পক্ষেই দেখা যেতে পারে। কারন আবারো তিনি আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠেছেন।

নেতাকর্মীরা জানান, মহানগর বিএনপির বিদ্রোহীদের মুল নেতা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বিদ্রোহী বলয় ছেড়ে সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসূফ খান টিপুর নেতৃত্বে মুলধারার রাজনীতিতে ফিরেছেন। গত ৮ জুন একইভাবে মুলধারায় ফিরেছেন হাজী নুরউদ্দীন আহমেদও। এর আগে বিদ্রোহী বলয়ের নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও হাজী নূর উদ্দীন আহমেদের পদত্যাগপত্র গৃহিত হওয়ায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ হারিয়েছেন।

জাকির ও নুরউদ্দীন ফিরলেও বিএনপির পদ হারিয়ে মুকুল আবারো আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে ফিরে গেছেন। জাকির হোসেন মুলধারায় সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসায় তার অনুমোদিত বিদ্রোহী কমিটিগুলো অটোমেটিক বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি এবার সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে এক কাতারে এসে দাঁড়ালো।

নেতাকর্মীরা আরো জানান, গত ২২ মে মহানগরীর ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন ও ২১ মে মহানগরীর ১৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন। জাকির হোসেন নিয়মিত মহানগর বিএনপির প্রতিটা কর্মসূচিতে থাকছেন। সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খানের অনুগামী নেতাকর্মীরাও জেলা ও মহানগর বিএনপির আয়োজিত চাষাড়ার সমাবেশে উপস্থিত হোন। জাকির খানের আপন চাচা মনির হোসেন খান সর্বত্রই রয়েছেন মুলধারায় সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপিতে। মুলধারা থেকে বিদ্রোহী বলয়ে যাওয়া মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন এখন প্রবাসে চলে গেছেন।

এসবের অনেক আগেই বিদ্রোহী বলয় ত্যাগ করেছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। ফলে মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী বলয় এখন তছনছ হয়ে গেছে। এরি মাঝে বন্দর থানা ও উপজেলা বিএনপির কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপি সহ আরো বেশকটি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছেন। মহানগরীর প্রায় অধিকাংশ ওয়ার্ডের কমিটিও গঠন করেছেন তারা।

ঘটনা সুত্রে, গত ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স চিঠির মাধ্যমে জানান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদ থেকে পদত্যাগের আবেদনকারী আতাউর রহমান মুকুল ও হাজী নুর উদ্দিন আহমেদকে চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থায়ীভাবে পদত্যাগপত্র গৃহিত করে বিএনপি থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৮ সেপ্টেম্বর জেলা ওলামা দলের সভাপতি মুন্সী শামসুর রহমান বেনু ও নিহত যুবদল নেতা শাওনের জন্য দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠান শেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুরুদ্দিন, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল এবং সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা, সদস্য আওলাদ হোসেন, হান্নান সরকার অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, মনোয়ার হোসেন শোখনসহ ১৪ জন নেতা।

এদিকে নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের সরাসরি বিরোধীতা করে এবং আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। যদিও বিগত ১৪টি বছর যাবতই বন্দরে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে একমঞ্চে ওঠে রাজনীতি করেছেন তিনি। কিন্তু বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি হারানোর পর সম্প্রতি বিএনপির রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কও হোন। এ পদ পেয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।

মুকুল চেয়েছিলেন মহানগর বিএনপির পুরো নিয়ন্ত্রন। অথচ রাজনীতি করে আসছেন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মঞ্চে ওঠে। আর কোনোদিন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে রাজনীতি করবেনা বলে কিছু নেতাকর্মীদের এমনটা বুঝিয়ে মহানগর বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলেন মুকুল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও রাখতে পারেননি। শেষতক বিএনপির পদ হারিযে এমপি সেলিম ওসমানের মঞ্চে ওঠেছেন মুকুল।

গত ৫ মে শুক্রবার বিকেল ৫টায় বন্দরের নবীগঞ্জ ঈদগাহ প্রাঙ্গনে নাসিম ওসমান গোল্ড অ্যাওয়ার্ড ক্বিরআত প্রতিযোগীতা-২০২৩ এর চূড়ান্ত বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ।

নবীগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও নাসিকের ২৪নং ওয়ার্ড, মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি কাউন্সিলর আফজাল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু।

আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোদাচ্ছেরুল হক দুলাল, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা শওকত হাসেম শকু, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আবুল কাউসার আশা, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা পরিচয়দানকারী সুলতান হোসেন, আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ফজর আলী, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মুছাপুর ইউনিয়নর চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রমূখ।