সোনারগাঁয়ে নদী গিলছে আল-মোস্তফা গ্রুপ, বিলিনের পথে গুচ্ছগ্রাম

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় বালু ভরাট করে মেঘনা নদী দখলের অভিযোগ উঠেছে বৈদ্যেরবাজার ঘাট এলাকায় অবস্থিত ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স এবং হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি বালু ভরাট করে মেনীখালী নদীর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স এবং হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, স্বারক লিপিসহ একাধিকবার লিখিত অভিযোগ প্রদান করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সাতভাইয়াপাড়া ও চর লাউয়াদী মৌজার মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভূমি, সরকারি দুইটি খাল এবং ফোরশোর ল্যান্ডভূক্ত ভূমিতে বালু ভরাট করে আল মোস্তফা গ্রুপের মালিকানাধীন ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীর নির্মাণ করছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় বৈদ্যেরবাজার এলাকায় নদীর পশ্চিম দিকে ২হাজার ফুট দীর্ঘ বাই ৭শ প্রস্থ বর্গফুট পরিমান মেঘনা নদীর তীরভূমি ভরাট করে বিশালাকার এ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে।

বালু ভরাটের কারনে মেনীখালী নদীর মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় রতনপুর, ভাটি বন্দর, পিরোজপুর, দুধঘাটা ও নোয়াগাও গ্রামের কৃষকরা চলতি ইরি মৌসুমে পানি সংকটে পরে। পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারায় কয়েকশ একর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং এলাকাবাসী। নদী দখলের কারনে সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাট থেকে বৈদ্যেরবাজার ঘাটে নৌ-চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পরেছে।

জানা গেছে, নদী দখলের পাশাপাশি ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি মালিক আল মোস্তফা সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিও দখল করেছে। ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ দখলকৃত রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ করলেও তা আমলে নেয়নি আল-মোস্তফা গ্রুপ। নদী দখলের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিগত ২০১৭ সনের ৬ ডিসেম্বর সরেজমিনে তদন্তে এসে বৈদ্যেরবাজার এলাকায় মেঘনা নদীর পশ্চিম দিকে ২হাজার বাই ৭শ বর্গফুট পরিমান মেঘনা নদীর তীরভূমি দখল ও ভরাটের সত্যতার প্রমান পায়।

পরবর্তীতে বিআইডবিল্ডিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ, উপ-পরিচালক এহেতেশামুল পারভেজ, সহকারী পরিচালক শাহ আলম, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমসহ কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির সকল কাজ বন্ধ করে ৭ দিনের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিজ খরচে বালু অপসারণ করার নির্দেশ দেন। এমনকি সহকারী কমিশনার (ভূমি), সোনারগাঁ কার্যালয় থেকেও বালু অপসারণ ও দখলকৃত নদী ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতকিছুর পরেও আল-মোস্তফা নদী দখল করে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে হাজী আজিজুল্লাহ বলেন, আমি বাদী হয়ে অবৈধ দখল ও নদী ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট করি। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মামুনুর রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাস বিগত ২০১৭ সনের ১১ডিসেম্বর নদী দখলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাজ করে যাচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির মালিক আল-মোস্তফা।

স্থানীয়দের অভিযোগ- একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে আল-মোস্তাফা ওরফে জামাই মোস্তফা পিরোজপুর এলাকার সরকার প্রতিষ্ঠিত গুচ্ছগ্রামের জায়গা জমি দখল করে কারখানা নির্মাণ করে। পাশের ইসলামপুর গ্রামকে দখল করতে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ কয়েকজন সন্ত্রাসী এলাকাবাসীর ঝড়ুমিছিলের কারনে পিছিয়ে এসেছিল।

এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম রুহুল আমিন রিমন বলেছেন, আমি এখন বদলি হয়ে চলে এসেছি। আমি থাকাকালীন সময়ে আল-মোস্তাফা গ্রুপের বিরুদ্ধে নদী দখলের খবর পেয়েছিলাম। তাদেরকে চূড়ান্ত নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। আশা করি খুব শীঘ্রই নতুন কমিশনার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধভাবে দখলকৃত নদী উচ্ছেদ অভিযানে যাবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, আমি থাকাকালীন কাউকে নদী দখল করতে দিবো না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিবো।