বিএনপিতে ভেজাল পাকিয়ে কানাডায় নিরাপদে এমএইচ মামুন!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গঠনের পর মহানগর বিএনপির কমিটির বেশকজন নেতা বিদ্রোহ করে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। যাদের মধ্যে সম্প্রতি বেশকজন নেতার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরি মাঝে বিদ্রোহী গ্রুপে যোগ দেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন। বিদ্রোহ বলয়ে যোগদান করে তিনি বিভিন্ন ইউনিটে বিদ্রোহ কমিটি ঘোষণা দেন। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যখন কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে ঠিক তার আগেই দেশান্তর হয়েছেন এমএইচ মামুন। নিয়মিত রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। কিন্তু এমএইচ মামুন হামলা মামলার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। মিথ্যা মামলা দেয়া হয় এমন অজুহাত তুলে মামুন তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাজও দিয়েছেন।

মামুন হটাত করে বিএনপির কঠোর আন্দোলনের আগেই কানাডায় চলে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি- এমএইচ মামুন মহানগর বিএনপিতে ভেজাল পাকিয়ে দেশ ছেড়েছেন। মুলত হামলা মামলার ভয়ে তিনি কানাডায় নিরাপদে চলে গেছেন। হয়তো দেশের পরিস্থিতি শীথিল হলে দেশে ফিরবেন। ফলে বিএনপির জন্য তার দরদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিএনপির বিদ্রোহী নেতাদের উস্কে দিয়ে তিনি নিজেই এখন দেশান্তর হয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।

জানাগেছে, মহানগর কমিটি হওয়ার পর এর আগেও তিনি দেশের বাহিরে চলে যান। দেশে ফিরেই তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির নেতৃত্ব চান। কিন্তু নেতৃত্ব না দেয়ায় তিনি বিএনপির বিদ্রোহী বলয়ে যোগদান করেন। অথচ তিনি মুলধারায় রাজনীতি করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের প্রশংসাও করেছেন।

নেতারা আরো জানান, এক সময় মহানগর ছাত্রদলের দায়িত্ব ছিলেন মামুন। পরে তিনি দেশের বাহিরে চলে যান। এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতি করায় তাকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। ছাত্রদলের রাজনীতি করায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব চেয়েছিলেন তাকে নিয়ে মহানগর বিএনপির রাজনীতি করার। কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্খা পুর্ণ না হওয়ার ফলে তিনি বিদ্রোহী গ্রুপে চলে গিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন।

অন্যদিকে জানাগেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অভিযোগ তুলেছিলেন বিএনপির পরিচয়দানকারী নেতা আতাউর রহমান মুকুল ভোটের দিন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেন। ওই নির্বাচনে প্রকাশ্যে মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে তার নির্বাচনী জনসভায় অবস্থান নেন আতাউর রহমান মুকুল। লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মঞ্চে তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা গেছে মুকুলকে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পূর্বে বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করেন মুকুল। সামনের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাবনা উকি দিচ্ছে- এমন আশায় এবার বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজ বলয়ে ভীড়াচ্ছেন তিনি। তবে সামনের নির্বাচনেও যে গতি বুঝে লাঙ্গলের প্রার্থীর জনসভায় যেতেও পারেন মুকুল। এমন পরিস্থিতিতে সেই আতাউর রহমান মুকুলের বলয়ে যোগদান করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন।

ঘটনা সূত্রে, ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোস্তাকুর রহমান। সেখানে তিনি ক্যাপশনে ইঙ্গিত দেন মুকুলের সঙ্গে রাজনীতিতে এসছেন এমএইচ মামুন। সেখানে বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী নুরুউদ্দীন, বন্দর থানা বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টুর হাতে ফুল দিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপ ও আওয়ামীলীগ-জাতীয়পার্টিঘেষা মুকুল বলয়ে যোগদান করেছেন মামুন। এদিন নগরীতে আব্দুস সবুর খান সেন্টুর বাসায় মুকুলের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী বলয়ে যোগদান করেন মামুন।

তবে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সেদিন এমএইচ মামুন বলেছিলেন, আমি মুলত সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে রাজনীতি করতে চাই। মহানগর বিএনপির ৪১ জন একসাথে রাজনীতি করুক এটা চাই।
যোগদানের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে দাবি করেছিলেন, এটা যোগদানের বিষয় না। তারাতো আওয়ামীলীগ করেন না। তারা বিএনপির রাজনীতি করেন।
যোগদান না হলে তাদের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকতার কারন কি- এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ফুল দিয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেছি মাত্র। যোগদান না।

ভিন্নসুত্রে জানাগেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটি থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল সহ ১৪জন নেতা পদত্যাগ করেন।

তবে এতে করে মহানগর বিএনপির কোনো কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয়নি। সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটা কর্মসূচি বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের নিয়ে পালন করে আসছেন। একই সঙ্গে রাজপথের ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সদর, বন্দর থানা বিএনপি সহ বেশকটি ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। গোগনগর ইউনিয়নে বৃহত্তর আয়োজনে প্রকাশ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে নজির স্থান করেন সাখাওয়াত ও টিপু। এতদিন সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে মামুনকে বেশকটি কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা গেলেও আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টিঘেষা মুকুলের হাতে ফুল দিয়ে যোগদানের বিষয়টি সমালোচনার সৃষ্টি করেছিলেন মামুন।