মাসুদ-আনোয়ার প্রধানের ব্যাপক আয়োজনে সদর থানা বিএনপির পরিচিতি সভা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

১৫ মার্চ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনের তৃতীয় তলায় একটি চাইনিজ রেস্তোরায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধানের দৃষ্টিনন্দন সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মহানগর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রাজপথে সক্রিয় ত্যাগীদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির কমিটির দায়িত্ব দিয়েছি। যে দায়িত্ব তাদেরকে দিয়েছি আমি মনে করি এটা তাদের জন্য পবিত্র আমানত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক দেয়া আমানত। মাসুদ রানা ও আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে যে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে, এই কমিটি তাদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সারাদেশের মধ্যে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপি। এই কমিটির নেতারা প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে ত্যাগী সক্রিয়দের নেতৃত্বে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির নামদারী বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্য করে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ২৭ বছর পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি গঠনের পর সরকারি দল ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে যিনি শাস করছেন (এমপি), তাদের ভালো লাগে নাই। যার কারনে তাদের দোসরদের দিয়ে এই সদর থানা বিএনপির কমিটিকে বিতর্কিত করার জন্য এবং এই কমিটি যে গতিতে আন্দোলন সংগ্রাম করছে সেটাকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য আজকে তাদের দোসরদের নিয়ে পাল্টা কমিটি গঠনের যে হীন চেষ্টা করছে, সেই অপচেষ্টা সংকুলে বিনষ্ট হবে। আমরা বলতে চাই, আজকে যারা পাল্টা কমিটি করেন, পাল্টা কমিটি গঠন করেন কেন? আপনারা তো দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় কমিটি করেননি কেনো? ওই সময় কমিটি করলে তো আজকে আরো অনেক নেতৃত্ব দেয়ার মত নেতা পাওয়া যেতো। ওই সময় তো বিএনপিকে আপনারা সরকারি দলের কাছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপির কাছে ইজারা দিয়ে দিয়েছিলেন! বিএনপিকে ইজারা দিয়ে বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে দূর্বল করে রেখেছেন। কিন্তু আমি বলতে চাই যেহেতু আমার হাতে মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে, শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকতে কোনো অপশক্তির সাথে আপোষ করবো না। যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া দল, সেই শিখর জনগণের মধ্যে পতিত, এখানে কেউ সরকারি দলের চামচামি করে দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না। আমরা সবাই জানি আমাকে সরকারি দলের মাধ্যমে মামলা দিয়ে জেল খাটাতে পারবেন, আজকে যে নেতাকর্মীরা তৈরি হয়েছে তারা দায়িত্ব পালন করবে।

সদস্য সচিব পদে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর প্রসঙ্গে বিরোধীতাকারীদের উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের আগে আপনারাই কেন্দ্রে আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নাম সেক্রেটারি পদে রেখে কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি তো আমি করিনি, আমি আনিনি, আপনারা জমা দিয়েছিলেন। কমিটির অধিকাংশ নেতাদের নাম আপনারা দিয়েছেন। কিন্তু আজকে কেনো আপনাদের এত জ্বালা? যারা পদত্যাগ করেছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আসলে আপনাদের পদত্যাগ করাটা যে ভুল হয়েছে, সঠিক কাজ করেনি সেটা প্রমানিত হচ্ছে। গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন কমিটিতে আপনারা থাকবেন না, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যেই থুথু ফেলিয়েছিলেন সেই নিজে থুথু এখন গিলে খেতে চাচ্ছেন। উনারা এখন কমিটির নেতা দাবি করে পাল্টা কমিটি দিতে চান। আপনাদের আমরা শত্রু মনে করি না। যদি দলের গঠনতন্ত্র মানেন, তাহলে আপনারা আমাদের ভাই, আর যদি সরকারি দলের দালালি করে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চান তাহলে আপনারা আমাদের ভাই হতে পারেন না।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমান শহীদ জিয়ার যে আদর্শ অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর কাছে যে আমানত দিয়েছে, সেই আমানত রক্ষা করতে শরীরের রক্ত দিতেও প্রস্তুত আছি। কোনো অন্যায়, কোনো হুংকার, কোনো লাঙ্গল মার্কা, নৌকা মার্কার দালালদের কাছে মাথানত করবো না, যারা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় টিনের ঘর থেকে ৫তলা দশ তলা ভবনের মালিক হয়েছেন তাদের হুংকার সাখাওয়াত-টিপু ধমে যাবে না। যারা তারেক রহমানের নির্দেশ ও অনুমোদনকে উপেক্ষা করে চলছেন, তাদেরকে বলতে চাই, যদি সত্যি শহীদ জিয়ার আদর্শে রাজনীতি করে থাকেন তাহলে, তারেক রহমানকে ভালোবেসে থাকেন, শেখ হাসিনার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে চান তাহলে দলের নিয়ম মেনে রাজনীতি করুন। আমরা কিন্তু বধির নই, আমরাও কথা বলতে জানি। আমরা কথা বলা শুরু করলে মুখ দেখাতে পারবেন না।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৭ বছর পরে হলেও আমরা নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির কমিটি গঠন করেছি। ১৪ বছর পর বন্দর থানা বিএনপির কমিটি গঠন করতে পেরেছি। রাজপথের সক্রিয় ত্যাগী যোগ্য নেতাদের নেতৃত্বেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন খান, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির সদস্য রাশিদা জামাল, ডা. মুজিবুর রহমান প্রমূখ। এ ছাড়াও সদর থানা বিএনপির দুচারজন নেতাকর্মী বিশেষ কারনে অনুপুস্থিত থাকলেও সিংহভাগ নেতাকর্মীরা এই পরিচিতি সভায় উপস্থিত হোন। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করা হয়। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে সদর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ ও অতিথিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে সকলকে নিয়ে মধ্যাহ্বভোজ গ্রহণ করেন নেতারা।

জানাগেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসুদ রানাকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধানকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন বরকত উল্লাহ, হাবিবুর রহমান মিঠু, নজরুল ইসলাম সরদার, আলমগীর খান চঞ্চল, নাজমুল হক, মাকিত মোস্তাকিম শিপলু, লুৎফর রহমান মন্টু, কাজী জিয়াউর হাসান নাঈম, অ্যাডভোকেট নুরুল কাদির সোহাগ, শেখ সেলিম, মো. সাহেবউল্লাহ রোমান, আল আমিন প্রধান, মো. মহসিন উল্লাহ, মহসিন হোসেন ও মাহমুদুল হোসেন খান লিংকন।

কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন আব্দুর রহমান, মনির হোসেন মুকুল, এনামুল হক স্বপন, মাসুদ চৌধুরী, মনির হোসেন, শওকত হোসেন লিটন, সারোয়ার মুজাহিদ মুকুল, আক্তার হোসেন (১), আক্তার হোসেন সবুজ, আক্তার হোসেন (২), জাহাঙ্গীর মিয়াজী, আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, সাইফুল ইসলাম বাবু, রাফি উদ্দিন রিয়াদ, হারুন শেখ, হীরা সরদার, ফেরদৌসুর রহমান, হারুনুর রশিদ রানা, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট শেখ আনজুম আহম্মেদ রিফাত, দিদার খন্দকার, মাহবুব রহমান, আক্তার হোসেন (৩), জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আল আমিন, আবুল হোসেন রিপন, শিবলী সাদিক শিপলু, অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন, মনোয়ার হোসেন সোহেল, আলমগীর হোসেন, মো. শাহ্ জালাল, মো. আরিফ, সৈয়দ নাসির উদ্দিন, মো. হারুন, অনিক ইসলাম ভূঁইয়া হৃদয়, সাখাওয়াত হোসেন জেকি, খোকন সাহা, মিনহাজ আমিন মিঠু ও ফয়সাল আহমেদ।

কমিটি গঠনের সময় ৯০দিনের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে থানা সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে কমিটি গঠনের পর সদর থানা কমিটির সুপারিশে গোগনগর ইউনিয়ন ও আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির অনুমোদন করেছে মহানগর বিএনপি।