আসন নিশ্চিত করতে গিয়ে বিএনপি দমন: গিয়াসে প্রত্যাশা বেশি, প্রাপ্তি শূণ্য!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত বছরের ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক, অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেতৃত্বে পরিবর্তনে নানা ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছিলো। যে কারনে গিয়াসউদ্দীনকে নেতৃত্বে আনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছিলেন। তাদের প্রত্যাশা ছিলো গিয়াস জেলা বিএনপিকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন। নিজ ব্যক্তির চেয়ে দলকে বড় করে দেখবেন।

এমন প্রত্যাশা নিয়ে কমিটি গঠনের পর গিয়াসের উপর রীতিমত নেতাকর্মীরা হুমরি খেয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সচারাচর ভুলের গণ্ডি থেকে বের হতে পারলেন না গিয়াসও। অতীতে নেতৃত্ব পাওয়া নেতাদের মতই ভুল করলেন প্রথম সিদ্ধান্তেই। জেলা বিএনপির কমিটির সকলের সঙ্গে কোনো ধরণের পরামর্শ ব্যতিরেকেই কলমের এক খোচায় জেলায় বিএনপির ৫টি কমিটি অনুমোদন করে দিলেন গিয়াসউদ্দীন ও গোলাম ফারুক খোকন।

মুলত নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে গিয়াস ও নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার জন্য বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে আসন দুটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ৫টি কমিটি রাতের আধারে ঘোষণা করে দিয়েছেন তারা দুজন। কমিটিগুলো থেকে তাদের বিরোধী বলয়ে রাজনীতি করে আসা কিংবা অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা নেতাদের সরাসরি মাইনাস করা হয়েছে ন্যাক্কারজনকভাবে। বিগত ১৫টি বছরেও যাদেরকে রাজপথের একটি মিছিলে দেখা মিলেনি তাদের হাতে থানা/উপজেলা/ পৌরসভা কমিটির নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন।

ভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, জেলার আড়াইহাজার ও সোনারগাঁও উপজেলা কমিটিতেও আচর দিতে যাচ্ছেন গিয়াস ও খোকন। আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম আজাদ ও সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান বলয়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন আতংকে। কারন ফতুল্লা থেকে মুহাম্মদ শাহআলম অনুগামীদের, রূপগঞ্জ থেকে কাজী মনির অনুগামীদের ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মামুন-রবির অনুগামী নেতাদের রীতিমত বিএনপির কমিটি থেকে বিতারিত করা হয়েছে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে।

ঘটনা সূত্রে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অধীনস্থ পাঁচটি ইউনিট কমিটি ঘোষণা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন। যদিও জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের সময় শর্ত ছিলো কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহামুদের স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে কমিটি গঠনে। যে কারণে গণমাধ্যমের কাছে কমিটিগুলো অবৈধ দাবি করছেন মামুন মাহমুদ। কমিটি গঠনে তাকে জানানোও হয়নি। জেলা বিএনপির আওতাধীন ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা ও রূপগঞ্জের কাঞ্চন ও তারাব পৌরসভা বিএনপির কমিটি অনুমোদন করা হয়।

অন্যদিকে জাতীয় একটি গণমাধ্যমকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেছেন, আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনার বাইরে কিছু করি না। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি করা হয়েছে। এদিকে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, লুৎফর রহমান খোকা, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল আহমেদ।

৫টি কমিটি গঠনের বিষয়ে মাসুকুল ইসলাম রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারছিনা। তবে ৫টি কমিটি গঠনের বিষয়ে বেশকজন যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ আমার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন এভাবে কাউকে না জানিয়ে হুট করে কমিটি ঘোষণা করে দেয়াটা সমুচীন হয়নি। আমার কাছেও তাই মনে হয়।

যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান খোকা বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসা হয়নি। চিন্তা ভাবনা করছি বিষয়টি নিয়ে কি করা যায়। একই কথা বলেন অপর যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদও।