বিএনপি নেতাকর্মীদের রিক্সাওয়ালা ফেরিওয়ালা বললেন মুকুল, জবাব দিলেন সাখাওয়াত!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ১২ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের মাসদাইর এলাকায় বিএনপির বহিস্কৃত নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় মহানগর বিএনপির কমিটি থেকে পদত্যাগকারী যুগ্ম আহ্বায়ক জাতীয়পার্টি ঘেষা আতাউর রহমান মুুকুল তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছো। তোমরা যদি রিক্সাওয়ালা ফেরিওয়ালা দিয়ে কমিটি করো তাহলে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে এই সরকারকে পতন ঘটাতে পারবে না।

বিএনপি নেতাকর্মীদের রিক্সাওয়ালা ফেরিওয়ালা বলে মুকুলের এমন ন্যাক্কারজনক মন্তব্যের কঠোর জবাব দিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। ১৬ নভেম্বর বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুকুলের ওই বক্তব্যের ইঙ্গিত করে বলেছেন, অনেকেই বলছেন আমরা রিক্সাওয়ালা ফেরিওয়ালাদের নিয়ে নাকি রাজনীতি করছি। দেশ বাঁচাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে রিক্সাওয়ালা ফেরিওয়ালারাই তো বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিচ্ছে, রিক্সাওয়ালা ফেরিওয়ালারাইতো জীবন দিচ্ছে, তখন আপনারা কোথায় থাকেন? আপনারা তখন থাকেন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে তাদের মঞ্চে।

সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ সব সময় আন্দোলন সংগ্রামে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। গত পহেলা সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের নির্মম হামলায় শহীদ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন। এই শাওন একজন সাধারণ শ্রমিক ছিলো। মুন্সীগঞ্জে পুলিশের হামলায় নিহত হয়েছে আরেক শাওন, সেও অটো চালক ছিলো। ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত আব্দুর রহিম নুর আলম কৃষক ছিলো। এইসব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। তাই তারাই আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের মহানায়ক। তাদেরকে যারা ছোট করে কথা বলে, রিক্সাওয়ালা ঠেলাগাড়িওয়ালা ফেরিওয়ালা দিনমজুরদের নিয়ে মহানগর বিএনপি সভা সমাবেশ করছে বলে যারা বক্তব্য দেয়, তারা এসব শহীদ মহানায়কদের রক্তের সাথে বেইমানি করছে, তাদেরকে অপমান করে জাতিকে লজ্জিত করছে। আমরা আজকের এই সভা থেকে তাদেরকে ধিক্কার জানাই।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন আগামী ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

১৬ নভেম্বর বুধবার বিকেলে এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারা মিয়ার সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহীন আহমেদ ও মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ লিটনের সঞ্চলনায় অনুুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

কর্মী সম্মেলনে জানানো হয়- নির্বাচনের মাধ্যমে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে। এ লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এমএইচ মামুন। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য হাবিবুর রহমান দুলাল, হুমায়ুন কবির, শাহীন আহমেদ ও যুবদল নেতা হারুনুর রশিদ লিটন। সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র ১০ হাজার টাকা, সেক্রেটারী পদে ৮ হাজার টাকা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩ হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আপনারা মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা কর্মীরা নির্বাচনের মাধ্যমে আপনাদের কমিটি গঠন করবেন। তবে শুধু কমিটিতে নাম লেখালেই চলবে না, আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রাতের ভোটের অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার প্রতিষ্ঠা করবো, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো, দেশ নায়ক তারেক রহমানের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। দেশের মানুষকে বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে রাজপথে রক্ত দিতেও প্রস্তুত আছি।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, এমএইচ মামুন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. মজিবুর রহমান, হাবিবুর রহমান দুলাল, মাসুদ রানা, মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু, নাসিকের ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেন শাহ্, মহানগর বিএনপির সদস্য নাজমুল হক রানা, শাহিন আহমেদ ও বন্দর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদুল্লাহ মুকুল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী, মঞ্জুরুল আলম মুছা, বন্দর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সম্রাট হাসান সুজন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কামাল উদ্দীন জনি, অ্যাডভোকেট আনিসুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।