‌’খেলা হবে’ আওয়ামীলীগের ঘোষণা: রাজপথে একাই খেলছে বিএনপি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ‘খেলা হবে’ বক্তব্যটি এখন রাজনীতির জাতীয় নেতাদের মুখেও চলে আসছে। যদিও কয়েক বছর পূর্বে শামীম ওসমান তার প্রধান প্রতিদ্বন্ধি নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই ‌’খেলা হবে’ বক্তব্যটি কলকাতায় নির্বাচনকালীন সময়েও আওয়াজ তুলেছিলো। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন নিয়মিত দলীয় সমাবেশগুলোতে ‘খেলা হবে’ বক্তব্য দিচ্ছেন। ‘খেলা হবে’ আওয়ামীলীগ নেতাদের মুখে এমন বক্তব্য শোনা গেলেও কার্যত রাজপথে আওয়ামীলীগকে দেখা মিলছে না।

গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানকে সমাবেশ করতে দেখা যায়। গত কয়েক বছরে এটাই ছিলো বৃহত্তর রাজপথের সমাবেশ। সেদিনও শামীম ওসমান ঘোষণা করেছিলেন ‘খেলা হবে’। ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরও বলে গেছেন ‘খেলা হবে’। যদিও এদিনে শামীম ওসমান তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ প্রত্যাশা করেন। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন নগরীতে জেলা ও মহানগর বিএনপি উল্টো খেলা দেখিয়েছে। সেদিন যুবদল নেতা শাওন প্রধান নিহত হলেও পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা লড়াই করেছে সংঘর্ষে। ওই ঘটনার পর প্রায় প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জে জেলা ও মহানগর বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করে আসছে। ২৩ অক্টোবর আওয়ামীলীগের সম্মেলন হলেও সেভাবে আওয়ামীলীগ আওয়াজ তুলতে পারেনি।

অন্যদিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর রাজপথে দুর্বার আন্দোলনে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলো গঠনে তরিৎ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন নেতারা। একই সঙ্গে মহানগর বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন-মহানগর যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল, তাঁতীদল, কৃষক দল, মহিলা দলের রাজনীতিকে চাঙ্গা করে তুলেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, কমিটি গঠনের পর ৬ অক্টোবর কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জে শোক র‌্যালীতে শোডাউন করেছে মহানগর বিএনপি। সেই থেকে ২ নভেম্বর বুধবার পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতায় রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে মহানগর বিএনপি। তাদের মতে- সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্রের নতুন সূর্য উদয়ের চেষ্টার যে স্পৃহা সেটা প্রখর হয়ে ওঠেছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণে।

যদিও এর আগে ১ সেপ্টেম্বর নগরীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশের সঙ্গে টানা আড়াই ঘন্টার লড়াইটাও সেই আভাস দিয়েছিলো। সেদিন যুবদল নেতা শাওন হত্যার ঘটনার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো হিংস্র হয়ে ওঠেছিলো। পুলিশের বন্দুকের নলের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে পুলিশের দিকে নেতাকর্মীদের ইটের ঢিল ছোড়ার দৃশ্য সেটাই প্রমাণ করে। যেনো বন্দুকের গুলি বহন করতে বুক পেতে দিয়েছিলো নেতাকর্মীরা। সেদিনও রক্তাক্ত যুবদল নেতা শাওনকে কোলে তুলে হাসপাতালের দিকে দৌড়াচ্ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান।

এদিকে ১ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই ঘটনায় সেদিন রাতেই মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। একই সঙ্গে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মমতাজ উদ্দীন মন্তু ও সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বেও নগরীতে মিছিল করেছেন যুবদল নেতাকর্মীরা।

২ নভেম্বর বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে একই ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বিকেলে মহানগর বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর মিশনপাড়া এলাকা হতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাখাওয়াত ও টিপু। মিছিলটি নগরী প্রদক্ষিন করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনের উল্টো দিকে সমাবেশ করে শেষ করেন।

আন্দোলনের পাশাপাশি গত ২৯ অক্টোবর মহানগরীর ২৫নং ওয়ার্ডের লক্ষণখোলা এলাকায় বন্দর থানা বিএনপির কর্মীসভা করেছে মহাগর বিএনপি। এরপর দিন ৩০ অক্টোবর বন্দরের দেওয়ানবাগ এলাকায় বন্দর উপজেলা বিএনপির কর্মীসভা ও ৩১ অক্টোবর সদর থানা বিএনপির কর্মীসভা করেছে মহানগর বিএনপি। এ ছাড়াও ২০ অক্টোবর নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনারেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মহানগর বিএনপি। এসব কারনে নেতাকর্মীরা বলছেন- সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে প্রাণ ফিরে পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি।