হাই-বাদলকে কাদের: ‘কে কি করে সব জানি, কমিটি করতে ভাগাভাগি করবেন না’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও ষষ্ঠ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল।

২৩ অক্টোবর রবিবার বিকেলে আগামী তিন বছরের জন্য তাঁদের নাম ঘোষণা করেন প্রধান অতিথির বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তবে ওই সময় শহীদ বাদলের দিকে আঙ্গুল উচিয়ে কাদের বলেন, সারাদেশের খবর জানি। কে কি করে সব জানি। একই সঙ্গে আব্দুল হাইকে বলেন, কমিটি গঠনে পদ ভাগাভাগি করবেন না।’ তবে সম্মেলন শেষ হওয়ার পর হাই ও বাদলের নামে নেতাকর্মীরা শ্লোগানও দেননি। নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখাও যায়নি। অনেকটা শোকের মাতম দেখা পরিলক্ষিত হয়। নেতাকর্মীরা পরিবর্তন আশা করেছিলেন। কাউন্সিলদের ভোট দেয়ারও প্রয়োজন পড়েনি। কেউ প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করারও সুযোগ পাননি। সরাসরি কাদের আগের কমিটি বহাল ঘোষণা করে দেন।

ফতুল্লা থানাধীন ইসদাইর পৌর ওসমানী স্টেডিয়ামে বেলা আড়াইটার দিকে জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম এমপি, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি,মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ এমপি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যকরি সদস্য এড. রিয়াজুল কবীর কাওছার, আনোয়ার হোসেন, সাহাব উদ্দীন ফরাজী, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ( উপমন্ত্রী পদমর্যাদা) ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু।

এদিকে দীর্ঘ ২৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। আওয়ামী লীগের নির্বাচনীয় প্রতীক নৌকার আদলে বানানো হয়েছিল বিশাল মঞ্চ।

সম্মেলনকে ঘিরে দুপুর থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সকল উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রঙ্গে বেরঙ্গের টি-শার্ট পরিধান করে, ব্যানার ফেস্টুনের সুসজ্জিত হয়ে, ঢাক ঢোল বাজনা বাজিয়ে মিছিল মিছিল শ্লোগানে শ্লোগানে সম্মেলনস্থলে ইসদাইর পৌর ওসমানী স্টেডিয়ামে জড়ো হন।

এসময় জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পথচারনায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন জনসভায় পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ অঙ্গে সংঘের নেতাকর্মীদের মুখে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো ইসদাইর পৌর ওসমানী স্টেডিয়াম।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। অধ্যাপিকা নাজমা রহমান সভাপতি ও এমপি শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এর পর ২০০২ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে আহ্বায়ক এস এম আকরাম পদত্যাগ করে যুক্ত হয়ে পড়েছেন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। পরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামকে। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মফিজুল ইসলাম মারা যান।

এরপর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তাৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের বর সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ- সভাপতি ও এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, বন্দর, ফতুল্লা ও সর্বশেষ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। বাকী রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন।