বিএনপির সাখাওয়াত বারবার চ্যালেঞ্জ নেয়, যেভাবে জিতে যায়!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বর্তমান সময়ের নারায়ণগঞ্জের আলোচিত একজন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। যাকে ১৩ই সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। নারায়ণগঞ্জের রাজপথের রাজনীতিতে তার দীর্ঘ কয়েক যুগের অবদান ও ত্যাগের ফলস্বরূপ এই মহানগর বিএনপির আহবায়ক পদে তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন। এই সরকারের আমলে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাভোগ করেছেন দীর্ঘদিন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কালীন সময়েও কারাভোগ করেছেন।

এক এগারোর মতো কঠিন সময়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে যে ক’জন নেতা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাখাওয়াত হোসেন খান। কিন্তু ২০০৯ সালের পর নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির কমিটি গঠনে তাকে বঞ্চিত করা হয়। অনেকটা কারসাজি এবং মেকানিজম করে প্রয়াত জাহাঙ্গীর কমিশনারকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই সময় বিএনপির বৃহত্তর অংশের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীর কমিশনার ও এটিএম কামালের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে নুরুল ইসলাম সরদারকে সভাপতি, সাখাওয়াত হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন।

মূল কমিটিতে না থাকলেও পাল্টা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেন সাখাওয়াত ও টিপু। প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেন। নুরুল ইসলাম সরদার একপর্যায়ে রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে গেলেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি শাখাওয়াত হোসেন খান ও টিপু। ওদিকে আদালত পাড়ায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সাখাওয়াত।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে চান সাখাওয়াত হোসেন খান। কিন্তু তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সাখাওয়াত হোসেন খানকে আবারো বঞ্চিত করেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুর রহমান দিপু ও বিএনপি সমর্থক প্রার্থী আব্দুল বারী ভূঁইয়াকে নির্বাচনে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন সাখাওয়াত হোসেন খান। সাখাওয়াতের রাজনীতির ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি হলে আইনজীবী সমাজের ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এডভোকেট চন্দন সরকার সহ সাত জন নিহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের নিয়ে তুমুল আন্দোলন করেন সাখাওয়াত। ওই আন্দোলন সারা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। আন্দোলনের ফলে একপর্যায়ে র্যাবের অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকটা জীবনবাজি রেখে তিনি বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেন। সাত খুন মামলার বিচারও সম্পন্ন হয়।

এভাবে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ ছাড়িয়ে দেশব্যাপী আলোচিত আইনজীবী নেতা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। যার ফলশ্রুতিতে আবারো চ্যালেঞ্জে নামে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। ২০১৬ সালের ওই নির্বাচনে তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতা সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে ধানের শীষের পরাজয় নিশ্চিত করলেও সাখাওয়াত হোসেন খান ৯৬ হাজার ভোট পান। ওই নির্বাচনের পর মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সাখাওয়াত হোসেন খানকে দায়িত্ব দেন কেন্দ্রীয় বিএনপি।

তারপর থেকে সাখাওয়াত হোসেন খান তার বিশাল অংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেন ও কর্মসূচি পালন করেন। এতে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও তৎকালীন সেক্রেটারী এটিএম কামাল আপত্তি জানিয়ে সাখাওয়াতকে বহিস্কারের সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে সাখাওয়াত হোসেন খান পৃথকভাবে কর্মসূচি বাদ দিয়ে মূলধারার সাথে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম ও কর্মসূচি পালন করেন। সবশেষ গত পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হোন। যার ফলশ্রুতিতে এখন তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এই কমিটি ঘোষণার বিষয়টি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান।

৪২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুর উদ্দিন আহমেদ, আতাউর রহমান মুকুল, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন অনু, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, এমএইচ মামুন ও আবুল কাউসার আশা।

পদে সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহম্মদ, হাজী ফারুক হোসেন, আওলাদ হোসেন, শওকত হোসেন সকু, হাসান আহম্মদ, মাহাবুব উল্লাহ তপন, মাসুদ রানা, ডা. মজিবর রহমান, মাকিদ মোস্তাকিন সিপলু, রাশিদা জামাল, অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধান, হান্নান সরকার, অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, হাবিবুর রহমান দুলাল, হাবিবুর রহমান মিঠু, মনোয়ার হোসেন শোখন, মো. বরকত উল্লাহ, মো. আলমগীর হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, শহিদুল ইসলাম রিপন, আমিনুর ইসলাম মিঠু, ফারুক আহম্মদ রিপন, মাহমুদুর রহমান, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শিপলু, শাখাওয়াতুল ইসলাম রানা, মো. ফারুক হোসেন, কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু, হুমায়ুন কবির, শাহিন আহম্মদ।