সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর বিএনপির পুরো নিয়ন্ত্রন ছিলো তৈমূর আলমের হাতে। ওই সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির থাকলেও পুরো জেলায় খবরদারি ছিলো তৈমূরের হাতে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি বলতে তৈমূর আলম খন্দকারকেই বুঝাতো। মহানগর হওয়ার পূর্বে শহর বিএনপির কমিটির নেতারাও ছিলেন তৈমূরের নিয়ন্ত্রণে।
তৈমূর আলমের নিয়ন্ত্রণে কোণঠাসা ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম ও তার অনুগামীরাও। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে আবুল কালামকে সংস্কারপন্থী আখ্যায়িত করে কুশপুতুল দাহ করেছিলেন তৈমূর আলম অনুগামীরা। বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রকও ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকারের আত্মীয়স্বজন ও তার একনিষ্ট কর্মীরা। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর জেলা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে তৈমূর আলমকে সরিয়ে দিয়ে কাজী মনিরকে সভাপতি করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
২০২১ সালে আবারো জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে তৈমূর আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন তৈমূর আলম খন্দকার। যার ফলে তৈমূর আলমকে বিএনপির সকল পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়। তার অনুগামীরা তার বহিস্কার প্রত্যাহারের দাবিতে জানিয়ে আসলেও কেন্দ্রীয় বিএনপি তৈমূরকে দলে ফিরাচ্ছেন না।
অন্যদিকে তৈমূর আলম খন্দকারের পর যাকে খন্দকার পরিবারের হাল ধরার মত নেতা মনে করা হচ্ছিলো সেই কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সঙ্গে এক নারীর ঘটনায় সেই আশাও নেতাকর্মীদের নিরাশায় পরিনত হয়েছে। সেই নারীর ধর্ষণ মামলায় খোরশেদ কয়েক সপ্তাহ ধরে কারাগারে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডে ৪ টার্মে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন খোরশেদ।
করোনাকালে লাশ দাফন করে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন খোরশেদ। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামে শাঈদা শিউলি নামের এক নারী খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন খোরশেদ। সেই নারীর একাধিক মামলার আসামিও খোরশেদ। ফলে জনপ্রিয়তার আকাস থেকে মাটিতে পড়েন খোরশেদ। বর্তমানে সেই নারীর ধর্ষণ মামলায় এখন খোরশেদ কারাগারে।
নেতাকর্মীরা বলছেন- অনেকেই মনে করতেন মহানগর বিএনপির পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হবেন খোরশেদ। কিন্তু সিটি নির্বাচনে তৈমূরের অংশগ্রহণ এবং বিএনপি থেকে বহিস্কারের ঘটনায় খোরশেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও ধস নামতে শুরু করে। একই সঙ্গে নারী ঘটিত বিষয়ে খোরশেদের অবস্থান পুরোপুরি বিদায় ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন- এমন পরিস্থিতিতে খন্দকার পরিবারের রাজনীতি পূর্বের দাপট ফিরে আসবে না। তৈমূরকে বিএনপি দলে নিবে কিনা সেটা বিরাট প্রশ্ন। একই সঙ্গে খোরশেদের ব্যক্তিগত যে ইমেজ সংকটের সৃষ্টি হলো সেটা পুনরুদ্ধার সম্ভব কিনা সেটা প্রশ্ন। ফলে এক সময়কার খন্দকার পরিবারের রাজনৈতিক দাপট নিঃশেষের পথে।