তর্ক-বিতর্ক বেসামাল কথাবার্তায় বছরজুড়ে ভাইরাল সোনারগাঁও আওয়ামালীগ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দু’প্লাটফর্মেই সমান্তরাল আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের কর্মকান্ড। মিডিয়াতে জেলা আওয়ামীলীগের চেয়েও বেশি আলোচনায় থাকছে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ। এখানকার নেতাদের বেসামাল অসংলগ্ন কথাবার্তায় বছরজুড়েই ভাইরাল হচ্ছে। কেউ কেউ এসবের কারনে খেসারত দিলেও কেউ কেউ পার পেয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় নির্বাচনে কেউ নৌকার পক্ষে যেমন ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, ঠিক কেউ কেউ আবার নৌকা ডুবাতেও ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। দলীয় স্বার্থের চেয়ে এখানকার নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থ উপরে।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বলয়ভিত্তিক রাজনীতি সৃষ্টি করতে গিয়ে আওয়ামীলীগ হয়ে পড়েছে খন্ড খন্ড। এরি মাঝে যোগ্যদের মাঝে আবার ভীড় জমিয়েছেন অযোগ্যরা। গত নির্বাচনে যেমন ১৬ জন আওয়ামীলীগ নেতা নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু এই আসনটি ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টির হাতে।

লন্ডন থেকে ৫ বছর পর পর এসেও এখানে নৌকা প্রত্যাশি দাবি করেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে জড়িত তারাও সোনারগাঁও আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে বসেন। কেউ কেউ জীবনে আওয়ামীলীগের রাজনীতিই করেনি, তিনিও নির্বাচন নাগাদ সময়ে নৌকা প্রত্যাশি হয়ে যান। ইউপি নির্বাচনে যাদের চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার পদে জামানাত হারানোর সম্ভাবনা এমন ব্যক্তিরা নৌকা প্রত্যাশি সেজে যায়। এ যেনো এক হরিলুটের আসন। কিন্তু সর্বশেষ কেউই নৌকা পায়না। আসনটি চলে যায় জাতীয়পার্টির হাতে। এমন পরিস্থিতিতে মুলধারার নেতারাও হয়ে ওঠেছেন বেসামাল কথাবার্তায় ব্যস্ত। কেউ কেউ কাউয়া হাইব্রিড ঠেকাতে গিয়ে পড়ছেন নিজেরারেই বেকায়দায়।

স্থানীয়রা জানান, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেন পরাজিত হওয়ার পর ফেসবুকে লাইভে এসে নিজ দলের নেতাদের দোষারোপ করেন পরাজয়ের জন্য। তার কান্নাজড়িত অভিযোগ আলোচিত হয়। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন তৎকালীন জাতীয়পার্টির নেতা সামসুল আলম। নির্বাচনের মাত্র দুইদিনের মাথায় উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করে সামসুল আলম। আবার আওয়ামীলীগে যোগদান করেই আড়াইহাজারে গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে ফেসবুকে ভাইরাল হোন তিনি। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়কের কেন্দ্রে দেড় দুইশো ভোট পেয়েছিলো নৌকার প্রার্থী।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলো বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মাহাবুবুর রহমান বাবুল ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর পৃথক দুটি বক্তব্য। ‘বারদীতে প্রধানমন্ত্রী আসলেও আমার হুকুম লাগবে, আমি বারদীর ম্যাজিস্ট্রেট, প্রশাসন আমার কথায় চলবে।’ লায়ন বাবুলের এমন বক্তব্য দেশব্যাপী ভাইরাল হয়ে যায়। তার এমন বক্তব্যে মামলা ও দলীয় অব্যাহতির মুখেও পরেছিলেন বাবুল। একইদিন বারদীতেই একটি যুবলীগের অনুষ্ঠানে নান্নু বলেছিলেন, ‘দশটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে এক পাল্লায় রাখলে ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতিকে আরেক পাল্লায় রাখলে তারা সমান হবে না, যুবলীগ সভাপতির ওজন বেশি হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে চিনেন, যুবলীগের কোনো কর্মীর দিকে আঙ্গুল ওঠালে মুখে তালা দিয়া দিমু বইলা দিলাম।’

এর আগে সোনারগাঁঁয়ে রাজাকার আব্দুল মাজেদের লাশ দাফন নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেছিলেন, ‘খুনি রাজাকারের লাশ যদি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে দাফন হয়ে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই।’ এমন বক্তব্যও ভাইরাল হয়ে যায়।

গত আগস্ট মাসে সোনারগাঁও পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালনের আয়োজন করেছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু। দুই দফায় ওই প্যান্ডেল ভাংচুর করা হয়। সেজন্য বিরুও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে অভিযুক্ত করেছিলেন। ওই সময় জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম সরাসরি কাঁচপুরের এক অনুষ্ঠানে প্রমানস্বরূপ বলেছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় বিরু জামায়াত ইসলামের ছাত্রশিবির কর্মী ছিলেন। একই কথা জানান কায়সার হাসনাতও। পরবর্তীতে বিরু আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দেন। এ নিয়ে কঠোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কাঁদাছোড়াছুেড়ি চলে।

গত ১৫ জুন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হাজী সোহাগ রনি পরাজিত হোন। নৌকার পরাজয়ের পেছনে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে দায়ী করেন সোহাগ রনি। তারা নৌকার বিরোধীতা করে প্রকাশ্যে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবুর পক্ষে কাজ করেন বলেন অভিযোগ। নির্বাচনের পর মোগরাপাড়ায় একটি কর্মীসভায় কায়সার হাসনাত বলেছেন, ভোটের মাধ্যমে মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসী মনের কথা ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের শুরুতেই সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও আবু জাফর চৌধুরীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন আরিফ মাসুদ বাবু।

আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আবু জাফর চৌধুরী বিরুর মা মনোয়ারা চৌধুরীকে উপজেলা মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দাবি করে সম্মাননা দেয় উপজেলা আওয়ামীলীগ। কিন্তু বাধ সাধে মাহফুজুর রহমান কালাম। তিনি গণমাধ্যমে সাফ জানিয়ে দেন, ‘উপজেলা আওয়ামীলগের বর্তমান কমিটিতে যোগ্য লোকের অভাব। এই কমিটি রাজাকারদের সার্টিফিকেট দিচ্ছে।’ কালামের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, কালাম আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত, সে আওয়ামীলীগের কিছু না, তাই আওয়ামীলীগে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।’ মোগরাপাড়ায় এক অনুষ্ঠানে কালাম বলেন, আমরা নাকি আওয়ামীলীগের কেউ না? আগামী ৬ মাসের মধ্যেই দেখিয়ে দিবো আমরা কারা এবং আপনারা কারা?