বার কাউন্সিল নির্বাচন: আদালতপাড়ায় আওয়ামী প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় ভোট প্রার্থনা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের আইনজীবীরা।

২৩ মে সোমবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনির নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় ঘুরে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করা হয়।

এ সময় সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনির নেতৃত্বে কয়েকশ আইনজীবী এই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে আদালতপাড়ায় আওয়ামীলীগের সাদা প্যানেলের পক্ষে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন।

নির্বাচনী গণসংযোগ শেষে ও ডিজিটাল বার ভবনের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী নেতারা। সমিতির সেক্রেটারি রবিউল আমিন রনির পরিচালনায় প্রথমেই বক্তব্য রাখেন সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল। তিনি সাদা প্যানেলকে বিজয়ী করার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পূর্ণ প্যানেল বিজয়ী হয়েছে, বার কাউন্সিল নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের পূর্ণ প্যানেল বিজয়ী হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছি।

একই সময় তিনি সকল আইনজীবীদের জানান ২৪ মে মঙ্গলবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির দ্বিতীয় তলায় নির্বাচনের বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হবে। সেখানে সকলকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান।

আওয়ামীলীগের প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন- আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, সাবেক খাদ্য ও আইন প্রতিমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মো. মোখলেছুর রহমান বাদল, আইনজীবী শাহ মো. খসরুজ্জামান, আইনজীবী শাহ মো. জিকরুল আহমেদ, আইনজীবী মো. রবিউল আলম (বুদু), আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা)।

অঞ্চলভিত্তিক গ্রুপ (এ) ঢাকা অঞ্চলের জন্য আইনজীবী আবদুল বাতেন, ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর অঞ্চলের জন্য আইনজীবী মো. জালাল উদ্দিন খান। চট্টগ্রাম নোয়াখালীর জন্য আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুল হক।

কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের জন্য আইনজীবী এ এফ এম রুহুল এনাম চৌধুরী ( মিন্টু)। খুলনা বরিশাল ও পটুয়াখালীর জন্য আইনজীবী আনিস উদ্দিন আহমেদ শহীদ, রাজশাহী যশোর কুষ্টিয়ার জন্য আইনজীবী মো. ইকরামুল হক। দিনাজপুর বগুড়া রংপুর পাবনা আইনজীবী মো. আবদুর রহমান।

জানাগেছে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন আগামী ২৫ মে বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি গত ২১ মার্চ প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।

বার কাউন্সিলের নির্বাচন ১৪টি সদস্য পদে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাতটি সাধারণ আসন। সাতটি সাধারণ আসনে সারাদেশের আইনজীবীরা ভোট দিয়ে থাকেন। সাতটি আঞ্চলিক আসন বা গ্রুপ আসন। এখানে অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবীরা একজনকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে থাকেন। বার কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের মধ্য থেকে সাধারণ আসনে সাতজন এবং গ্রুপ আসনে সাতজন সদস্য নির্বাচিত হবেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, দেশের সব দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণসহ বাজিতপুর, ইশ্বরগঞ্জ, দুর্গাপুর, ভাংগা, চিকন্দি, পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নবীনগর ও পাইকগাছার দেওয়ানি আদালতসমূহে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে।

এর মধ্যে ‘এ’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) ঢাকা জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘বি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘সি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘ডি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) কুমিল্লা ও সিলেট জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘ই’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘এফ’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি এবং ‘জি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

কোন ভোটার কোন কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তা আগামী ২৭ মার্চের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে। বার কাউন্সিলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ৬ এপ্রিল পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৩ এপ্রিল এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ এপ্রিল।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রার্থী নির্বাচনের বিরুদ্ধে আপত্তি করতে চাইলে ফলাফল সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

এজন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তি দরখাস্ত শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ও আব্দুস সবুর। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কার্যালয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ১৪ জুলাই আপত্তিপত্র গ্রহণ করবে।

করোনা মহামারি জনিত পরিস্থিতির কারণে বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারায় বর্তমানে একটি অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। এই কমিটি ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। আগামী ১ জুলাই নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে, ২০১৮ সালের ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টি আসনে জয়ী হয়েছিল সরকার সমর্থকদের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। অপরদিকে বিএনপি জোটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল পেয়েছিল মাত্র দুটি আসন।

বর্তমানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।