সোহাগ রনির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে বাবুর একক নাম প্রস্তাব!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আগামী ১৫ জুন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি। কিন্তু নামকাওয়াস্তে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের জরুরী বর্ধিত সভার নামে একক প্রার্থী হিসেবে আরিফ মাসুদ বাবুর নাম প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাব পত্রে সোহাগ রনির নাম বাদ দেয়ার বিষয়ে বলা হয় সোহাগ রনি একটি খুনের মামলার আসামি। কিন্তু ওই মামলার এফআইআর ঘেটে সোহাগ রনির নাম খুজে পাওয়া যায়নি।

একই সঙ্গে আদালতের চার্জগঠনের আদেশেও সোহাগ রনির নাম আসেনি। অথচ তাকে খুনের মামলার আসামি দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সোহাগ রনির নাম বাদ দিয়ে আরিফ মাসুদ বাবুর নাম এককভাবে প্রস্তাব করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ। এমনটাই দাবিও করেছেন হাজী সোহাগ রনি।

তবে এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম মোস্তফা গোপালের সঙ্গে সোহাগ রনি কথা বললে তিনি সোহাগ রনিকে জানান, শীর্ষ নেতাদের চাপে পড়ে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। একইভাবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ফিরোজের সঙ্গে সোহাগ রনির কথা হলে তিনি জানান কৌশলগত কারনে বাবুর নাম এককভাবে করা হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি তার স্বাক্ষর নেই বলেও দাবি করেন। সোহাগ রনির সঙ্গে তাদের অডিও কলে কথাবার্তায় এমন তথ্য পাওয়া যায়।

এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে হাজী সোহাগ রনির সখ্যতা রয়েছে বলে ডাহা মিথ্যা তথ্য তুলে ধরা হয়। কারন সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হককে এক নারী সহ অবরুদ্ধ করেছিলেন সোহাগ রনি। যার ফলশ্রুতিতে ওইদিনই হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মী সোহাগ রনির বাড়িঘর ভাংচুর চালায়। সোনারগাঁও থানার ২৯নং মামলায় সোহাগ রনির নাম রয়েছে বলে প্রস্তাবপত্রে দাবি করা হলে এই মামলার এফআইআরে সোহাগ রনির কোথাও নাই। এমন সব মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রস্তাবপত্রটি ৭ মে উপজেলা আওয়ামীলীগের কাছে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে গত ৭ মে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম এককভাবে আরিফ মাসুদ বাবুর নাম প্রস্তাব করে প্রস্তাবপত্রে স্বাক্ষর করেন।

গত ৮ মে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামীলীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু। তার ভাতিজা আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, যিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীর বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা পূর্বে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ওই সময় কায়সার হাসনাতের পক্ষেই ছিলেন আরিফ মাসুদ বাবুও।

এর আগে আরিফ মাসুদ বাবুর সুবিধার্থে হটাত করে হত্যাকান্ডের শিকার আরমান শরীফের পরিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করে সোহাগ রনির নামে অভিযোগ তুলেন। শরীফ হোসেন আরমান হত্যার সাথে শাহ মো. সোহাগ রনি জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আরমানের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন আরমানের বাবা-মা। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি।

মামলার এফআইআর ও আদালতে চার্জগঠনের আদেশের কপি গণমাধ্যম কর্মীদের দেখিয়ে সোহাগ রনি জানান, আরমান হত্যার কয়েক দফা তদন্ত হয়েছে। সেখানে কোথাও আমার নাম নাই। এমনকি ওই হত্যার সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমার কোন সম্পৃক্ততা পায়নি। একটি চক্র আমার নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য আমাকে নির্বাচন থেকে বাহিরে রাখতে তাদের পরিবারকে দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। সংবাদ সম্মেলনকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে সোহাগ রনি তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে একটি প্রতিবাদ দিয়েছেন।

সেখানে সোহাগ রনি জানান, প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও সোনারগাঁওবাসী আপনাদের কাছে বিচার দিলাম। আমার নামে মিথ্যা পোস্টার ও ভূয়া সংবাদ সম্মেলন করছে একটি মহল। আমার বড় অপরাধ আমি কেনো মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হলাম। এইটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ।আরমান শরিফ মামলার কোন জায়গায় আমার নাম নাই। যেমন- ২৯/১১/২০১৫ মামলার এজাহারে ও আদেশনামা। এখানে যারা মামলার এজাহারে আসামী তারা কার লোক। আপনারা ভালো করে দেখেন।

তবে সর্বশেষ ১০ মে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া এক পৃথক প্রস্তাবপত্রে আরিফ মাসুদ বাবু ও সোহাগ রনির নাম সম্পৃক্ত করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে প্রেরণ করেন।

স্থানীয়রা জানান, যেখানে কয়েক বছর ধরে মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসী ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে উন্নয়ন ও করোনাকালে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি। গত বছরের এপ্রিল মাসে সোনারগাঁয়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার সময় মুল ভুমিকায় ছিলেন সোহাগ রনি। মামুনুল হক অনুগামীরা সোহাগ রনির বাড়িঘর ভাংচুর চালিয়েছিলো। অথচ সেই সোহাগ রনিকে বাদ দিয়ে আরিফ মাসুদ বাবুর নাম এককভাবে কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা হলো।

এর আগে গত ৫ মে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এখানে আরো উল্লেখ্যযে, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সীমানা জটিলতাকে পুজি করে একটি গ্রুপ মোগরাপাড়া ইউনিযন পরিষদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চেয়েছিলো। পরিষদের একজন মেম্বার মামলা দিয়ে নির্বাচন আটকে দেয়। কিন্তু সোহাগ রনি দীর্ঘদিন আইনি লড়াই চালিয়ে সীমানা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসীর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনেন। ফলে মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসীর মাঝে সোহাগ রনির ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্য বেড়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক পরিবার মেনে নিতে পারছেনা।

উল্লেখ্য, ৮ ম ধাপে আগামী ১৫ জুন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ইবিএমের মাধ্যমে ভোট হবে। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে , যাছাই বাছাই ১৯ মে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ২৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৭ মে।