সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ ও নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগের এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, বাহিরের লোককে দোষ দিয়ে লাভ নাই। দোষ তো আপনার ঘরের ভিতরে। এখন কেউ যদি মনে করেন কাউকে ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নষ্ট করবে, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পুলিশ না। হোসিয়ারী ব্যবসা করতে করতে গার্মেন্টস মালিক হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে যারা দোকান চালায় তারা এখানকার স্থানীয়। যারা বাস চালায় তারা স্থানীয়। আমাদের এসব লোকদের কেউ ফোন করে বলবেন দেখা করেন, আমি বলব দেখা করার সময় শেষ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এতে উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। মশা মারতে কামান লাগেনা।
তবে শামীম ওসমান বক্তব্য শুরুর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এই নারায়ণগঞ্জকে আমরা গাজীপুর হতে দিব না। এসময় শামীম ওসমানের কর্মীরা পুলিশ সুপারের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে শ্লোগান দিলে শামীম ওসমান থামিয়ে দেন। এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এর আগে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬ এপ্রিল শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বাংলা ভবনে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আয়োজিত জরুরী কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী পরিবারকে ধ্বংসের চক্রান্ত রুখে দাড়াও শ্লোগানে এই কর্র্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিক কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, খেলা কোনটা? আমি কারো নাম বলব না। এগুলোকে আমি গোনায় ধরি না। সন্ত্রাসের কারনে যাকে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে দুইবার বাচাই নিয়ে আসছি। আমার দল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে, চাঁদাবাজির কারনে সরকারের নির্দেশে কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হলো, এইবারও নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারের নির্র্দেশ ছিল, আমি বলেছি গ্রেপ্তার কইরেন না। অন্তত আপনি সরাই দেন। এরাও এখন দেখি সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি করে!
তিনি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, আরেকজন মহিলা আছে নারায়ণগঞ্জে। আমি ওর নাম বলতে বলতে নাম ফুইলা গেছে। নাম আর বলতে চাইনা। যার সঙ্গে জামাতের কানেকশন প্রকাশ পেয়েছে। জামায়াতের আমির বললো জামাতের সাথে কাদের কানেকশন। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে জামাতের আমির বললো নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করতে হলে, শামীম ওসমানকে ধ্বংস করতে হলে উমুক নেত্রীকে আওয়ামীলীগে রাখতে হবে। এই কথার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল। আওয়ামীলীকে ধ্বংস করতে ওই উমুকে আওয়ামীলীগে রাখতে হবে বললো। জামাতের কানেকশন প্রকাশ করায় ওসির বিরুদ্ধে মামলা করবে বললো। তো মামলা করছেন না কেন? সাংবাদিক ভাইয়েরা তাকে গিযে বলেন মামলাটা করতে। সৎ সাহস থাকলে তো তাদেরই মামলা করা উচিত।
আইভীকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার বাপ দাদাকে গালি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ওসমান পরিবার খুনি পরিবার। যা বলছেন আমি বলি আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুক। আমি তার জন্য দোয়া করি। কারন এই গালিটা না দিলে প্রমান হতোনা নারায়ণগঞ্জের মানুষ ওসমান পরিবারকে কতটা ভাল বাসে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩৬জন কাউন্সিলর মধ্যে ২৯ জন কাউন্সিলরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমি দেশে এমন কোন সিটি কর্পোরেশন দেখি নাই যেখানে একজন মেয়রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে স্বারকলিপি দিয়েছে ২৯ জন কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে ২৯ জন কাউন্সিলর স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছে। তার তো এতেই মাথা হেট হয়ে যাওয়া উচিত।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে এসে খালেদা জিয়াও এসে বলেছিল কোথায় আওয়ামীলীগ? কোথায় শামীম ওসমান। আমরা তখন ভাবলাম যেহেতু তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আমাদের দেখতে চায় তখন আমাদের শ্রমিক ভাইদের বললাম ভাই তোমাদের গাড়িগুলো রাস্তায় বাকা করে রাখেন, ট্রেন লাইনটা ছাত্রদের মধ্যে ফালান, খালেদা জিয়া আমাদের একটু দেখতে চায় আমরা দেখাই। উনি কিন্তু মেইন রোড দিয়ে ঢাকা যেতে পারেনি। ভিতরের রাস্তা দিয়ে ঢাকায় যেতে হয়েছিল। উটা প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায়। নারায়ণগঞ্জে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিল যাকে রাতের বেলায় পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। কাউকে টেক্স দিবে না। আমার নেত্রী চায় কথা বলতে চাইলে কথা বলবে। সাংবাদিকতা করতে চাইলে সাংবাদিকতা করবে। কাউকে ভয় পাবে না। কারো উপর আঘাত আসবে না।
শামীম ওসমান এর আগে বলেন, আমার নেতাকর্মীদের দেখলাম উত্তেজিত। ঠিকই আছে। আপনাদের মত এরকম বয়সে আমারও এরকম উত্তেজিত হওয়ার কথাই ছিল। আল্লাহর রহমত আমি ২০১১ সালের শামীম না এটা ২০১৯ সাল। বয়স বাড়ে ধর্য্যও বাড়ে। অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমরা প্রমাণ করতে চাই নারায়ণগঞ্জে বেটা কেডা একটু দেহি।
নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, বিষয়টা আপনারা যা দেখছেন তা না। পর্দার অন্তরালে কিছু খেলা থাকে। সেই খেলায় কেউ কেউ ভুল করে পা দেয়। হয়তো নারায়ণগঞ্জে যারা হটাত করে এসছেন বিদেশী মেহমান কারো খেলাতে পা দিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের শামীম ওসমান বলেন, এখন আপনার ভিতর থেকে যদি কেউ খেলে? কে বেশি ক্ষতিকর ছিল আমাদের জন্য? জিয়াউর রহমান নাকি খন্দকার মোস্তাক? মোস্তাকরাই খেলছে। কারন মোস্তাকেরা ধরা পড়ে গেছে। আওয়ামীলীগকে ধ্বংস কর। কিভাবে? শাহ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি কর। আহ বাবা শাহনিজামের বিরুদ্ধে জিডি হয়ে গেছে! আওয়ামীলীগের নেতারা থরথর কাপতাছে! আমরা কি কাপুরুষ না? মীরুর নামে মামলা হইছে, আল্লাহ আমি ভয় পেয়ে গেছি! মীরু কাপুরুষ? আরে ভয় পাবে কে? যে খারাপ সে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা চান্দাবাজ ধান্দাবাজ না। সজলের নামে বক্তব্য দেন। আহ বাবা সবাই ভয় পেয়ে গেছে! আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। ভয় পাইনা।
জেলা পুলিশ সুপারকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের যদি কেউ খেলাতে চান, প্লিজ ডোন্ট প্লে, নারায়ণগঞ্জে খেইলেন না। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করবে। আর প্রশ্ন করার আগে তাকে জুয়ার মামলার আসামী করে দিবেন। কইরেন না। আমার আত্মীয়স্বজনকে মদের সাপ্লাইয়ার বানাবেন। মনে করবেন আমি ভয় পেয়ে যাবো। এগুলো করে আমাকে কাবু করা মছিমত। আমাকে কাবু করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের মাঝে যদি খারাপ হয তাকে আমরা ছাড় দিব না। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে যদি কাউকে ইচ্ছা করে জামেলায় ফেলার চেষ্টা করা তাহলে কথা দিচ্ছি নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাড়া নাচাই দিব। এক সেকেন্ড ছাড় দিবনা, এক সেকেন্ডও না। একটা সেকেন্ড কোন নেতাকর্মীকে বিনা কারনে জামেলায় ফেলতে কেউ চেষ্টা করলে ছাড় দিব না। কোন ব্যবসায়ী মাথা নত করে ব্যবসা করবেনা। কারন এই দেশ শেখ হাসিনার। এই নারায়ণগঞ্জও শেখ হাসিনার।
তখন তিনি নেতাকর্মীদের বলেন, সমস্যা শুধু একটাই আমাদের হাত পা বাধা। কারন আমরা দল করি। আমরা নারায়ণগঞ্জে ৫ লাখ লোকের সমাবেশ কইরা দেখাইতে চাই নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের নেতারা নেতাকর্মীদের পাশে আছে।
নেতাকর্মীদের আশ^স্থ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কি খালেদা জিয়া? না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। উনি নারায়ণগঞ্জের খোজ রাখেন কখন কি হচ্ছে। জাস্ট আগামী ১০/১২ দিনেই টের পাবেন। আপনারা শান্ত থাকুন। তবে বাহিরের মানুষকে দোষ দিতে নাই। ভুল পদক্ষেপ নেয়াইয়া বাহিরের মানুষকে ব্যবহার করতে চায়। সরকার আমাদের, প্রশাসন আমাদের, সিভিল প্রশাসন আমাদের, পুলিশ বাহিনী আমাদের, দায়িত্বও আমাদের। তাই নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে তা আমরা করব না। আমাদের মৃত্যু হয়ে যাবে তাও নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে দিব না।
তিনি বলেন, তবে এই নারায়ণগঞ্জকে কেউ যদি এসে মনে করে ওই কাউন্সিলরকে ফাঁসাবো, ওই চেয়ারম্যানকে ঢুকাবো, কারো সাথে কন্ট্রাকে যাবো, ওইদিক থেকে চাঁদাবাজি করব, এখান থেকে চাঁদাবাজি করব, ব্যবসায়ীদেরকে ফোন করব, শ্রমিক নামধারী শ্রমিকরা আইসা নীট গার্মেন্টস মালিকদের ভয় দেখাবেন, বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলবেন, অটো রিক্সা থেকে পয়সা খাবেন, নাহ ওইটা হবে না। এই নারায়ণগঞ্জে হবে না।
কর্মী সভায় সভাপতিত্ব করেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান, বন্দর আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ রশিদ, সোনারগাঁও থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। এ কর্মী সভায় জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ সহ এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ২৯ মার্চ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজামের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ওই থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের। জিডির একদিন পর ভারতে চলে গেছেন শাহনিজাম। এছাড়াও এর দুইদিন পর ফতুল্লায় ভাসমান মেরী আন্ডারসন জাহাজের বার থেকে বিয়ার ও মদ উদ্ধার করে পুলিশ ও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মামলায় শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তিনিও ভারতে চলে গেছেন। এছাড়াও শিশু সাকি অপহরণের অভিযোগ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে। তিনিও পরবর্তীতে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে চলে গেছেন। এর আগে শামীম ওসমানের আরেক কর্মী মীর হোসেন মীরুকে দুইবার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের শ্যালক বিকির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি জুয়ার আসন থেকে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি কামরুল হাসান মুন্না ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কবির হোসেন সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।
এসব ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে প্রতিবাদ সভা করেছেন গত বুধবার। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মহড়া দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। ওইদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলকামান, সাজোয়া যান, পুলিশ আর্ম কার দেখা যায়। এর আগে গত ২ মার্চ শামীম ওসমানের সমাবেশের সামনেও পুলিশের এমন প্রস্তুতি দেখা যায়। বুধবার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দিব না, সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।