হেফাজত ঘেঁষা সেই জাকির: ‘নৌকা মার্কা নিছি বিধায় ভোট কম পাইছি’!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা মার্কা নিয়ে কটুক্তি ও বেফাঁস মন্তব্যের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রধান করেছে জেলা আওয়ামীলীগ। স্মারকলিপি প্রধানকালে দৃষ্টতা দেখানো তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান নেতারা। স্মারকলিপি প্রদান শেষে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই জানিয়ে ওই তিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগ।

অভিযুক্ত তিন চেয়ারম্যানের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। হেফাজত ঘেঁষা জাকির হোসেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হোন। এর আগে তিনি কখনই আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেননি। নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই দাবি করেছিলেন জাকির হোসেনের প্রতীক পাওয়ার পেছনে তিনি সুপারিশ করেননি।

২৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই। এ সময় তাদের তিনজনের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেছেন, ‘আমি নৌকা মার্কায় নির্বাচন করায় ভোট কম পাইছি, নৌকা মার্কায় নির্বাচন করায় ৯০ ভাগ ভোট পাইছি, নৌকা ছাড়া নির্বাচন করলে ৯৫ ভাগ ভোট পাইতাম, আমি ছাড়া অন্য কেউ নৌকা নিয়ে পাশই করতো না।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- গত নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ সায়েম আহমেদ ও সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পান মতি চেয়ারম্যান। কিন্তু মনোনয়ন দাখিলের দুদিন আগে মতি নিজেকে শারীরিক অসুস্থ্যতা দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সেই নৌকা প্রতীক জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে নিয়ে আসেন হেফা্জত ঘেঁষা জাকির হোসেন। নির্বাচনে সায়েম আহমেদ স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ঠুকে নেয়।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন।

হেফাজতে ইসলাম ও জামায়েত ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলার শীর্ষ নেতারা সহ ফতুল্লার কাশিপুর মাদ্রাসা, মুক্তারকান্দী মাদ্রাসা, ডিক্রিরচর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। যেখানে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলাসা হারুন অর রশীদ, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সায়েম, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সহ শীর্ষ নেতারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে এই শোডাউন করেছিলো।

এর আগেই আলীরটেকের মানুষজন অভিযোগ করেছিলেন- আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যে হেফাজতের নানা নাশকতায় সরকারকে বারবার উন্নয়নের মুখে বাধায় পড়তে হয়েছিল সেই হেফাজত ইসলাম চাঙ্গা হয়ে ওঠে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রার্থী জাকির হোসেনের ছত্রছায়ায়। জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আলীরটেক ইউনিয়ন হবে হেফাজতে ইসলামের ঘাটি। এমনটাই দাবি করেছিলেন স্থানীয়রা। জাকির নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাইনাস করে বিএনপি জামাত হেফাজতের লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।

আরো অভিযোগ ছিলো- নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়ন দাখিল শেষে জয় বাংলা শ্লোগান না দিয়ে ভিন্ন শ্লোগান দিয়েছেন ওই সময়, যে শ্লোগানটি সাধারণত হেফাজতের নেতাকর্মীরা দেন। ওই শ্লোগানের ভিডিও ফেসবুকেও প্রকাশিত হয়েছে এবং সংবাদকর্মীদের কাছেও সংরক্ষিত রয়েছে। জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিনেও জাকির হোসেনের সঙ্গে ছিলেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয়রা বলছেন- নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থা ছিল এক সময় আলীরটেক ইউনিয়নে। আওয়ামীলীগ ছিল কোণঠাসা। আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা করেছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা সায়েম আহমেদ। অথচ তিনি নৌকা প্রতীক পাননি। কিন্তু নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জাকির হোসেন যিনি কোনোদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতেই ছিলেন না।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টার ছেড়া ও মহাজোটের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর মামলাও রয়েছে।

অন্যদিকে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন জ্বালানো ও লুটপাটের মামলার আসামি আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে নগরীর পাইকপাড়ার নয়াপাড়া এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চলে৷ নির্বাচনের বানচালের চেষ্টায় সংঘটিত ওই ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর এমপির অনুসারী এনামুল হক রিয়াজ মামলা করেন৷ ওই মামলায় ৭৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়৷ মামলার ৭৪ নম্বর আসামি জাকির হোসেন৷

মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাকিরসহ এজাহারনামীয় ৭৪ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন আসামি মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পাইকপাড়ার নয়াপাড়া ক্যাম্পে হামলা করে৷ ক্যাম্পের ভেতর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে৷ ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ সেই আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন৷ ক্যাম্পে থাকা অডিও প্লেয়ার, মাইক লুট করে আসামিরা৷