নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তাদের মুখোশ উন্মোচন!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

যারা একসময় বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারকে মাইনাস করে বিএনপিকে নতুন করে গঠন করতে চেয়েছিলেন সেইসব সংস্কারবাদী ও দল বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপিতে ঘাপটি মেরে আছেন। এখানকার বিএনপি’র কমিটিতে এখন তারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় সেই ওয়ান ইলেভেন থেকে যারা জিয়া পরিবারকে মাইনাসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, আজও পর্যন্ত যারা লিপ্ত রয়েছেন, সেইসব ব্যক্তিবর্গ নারায়ণগঞ্জের বিএনপি’র ভেতরে ঘাপটি মেরে রয়েছেন।

এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সেই ঘাপটি মেরে থাকা মুখোশধারী দলবিরোধী জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। যারা দলের চেয়ে নিজেদের অবস্থানকে সবচেয়ে বড় মনে করে। অথচ বিএনপি’র মূলমন্ত্র হচ্ছে-ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়।

ঘটনা সুত্রে, ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে দলকে পুনর্গঠন এর নামে দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের অভিযুক্ত ছিলেন ওই সময়ের বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি নতুন করে দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার আগে তিনি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং জিয়া পরিবারকে মাইনাস করে বিএনপিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই সময় নাজমুল হুদার ঘনিষ্ঠ বেশকয়েকজন নারায়ণগঞ্জের নেতা, যারা নিয়মিত নাজমুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। একই সঙ্গে যেসব বিএনপি নেতা কারাগারে ছিলেন, তাদের পরিবারের লোকজনও ওই কারাগারে থাকা বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে নাজমুল হুদা বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

তারা আশা দেখেছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং বড় ধরনের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার বা আদায়ের লক্ষ্যে নাজমুল ওদের সঙ্গে যোগসাজশে ছিলেন। কিন্তু এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নাজমুল হুদার সেই প্রেতাত্মাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে, যারা দলের চেয়ে নিজেকে বড় মনে করছেন। ওইসব নাজমুল হুদার প্রেত্মাতারা এবার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

আরো জানা গেছে, নাজমুল হুদা বিএনপি থেকে বের হয়ে বিএনপির ধানের শীষের আদলে গমের শীষ প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ নেশনালিস্ট ফ্রন্ট অর্থাৎ বিএনএফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। সেখানে বিরোধ দেখা দিলে তিনি পরবর্তীতে ঘোষণা দেন- বিএমপি অর্থাৎ বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, এরপর আবার ঘোষণা দেন তিনি ‘তৃণমূল বিএনপি’। নাজমুল হুদার এই সংগঠনের পেছনে বিএনপিতে থাকা নেতাকর্মীদেরও গোপন যোগসাজশ ছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগের এই সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর বিএনএফের কমিটি মিডিয়াতে কমিটি প্রকাশিত হয়। যেই কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের নাম ছিল। মূলত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনএফের কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নেওয়ার লক্ষ্যেই জেলা ও মহানগর বিএনএফের কমিটিতে জমা দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায় থেকে মধ্যম সারির অনেক নেতাকর্মীদের নাম বিএনএফ কমিটিতে ছিল।

যদিও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের নাম রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন- কে বা কারা তাদের নাম সেখানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে তারা দাবি করেন। বিএনএফের নিবন্ধনের জন্য নারায়ণগঞ্জ বিএনএফের কার্যালয় দেখানো হয়েছিল আমলাপাড়া এলাকায়। যেসব নেতাদের নাম বিএনএফ-এর জেলা ও মহানগর কমিটিতে এসেছিল সেইসব নেতারাই এখন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠিত।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ বিএনপি থেকে যারা বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র সাথে জড়িত ছিলো, আরেকজন বিকল্প ধারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই বিকল্পধারা বাংলাদেশ সংগঠনেও যারা প্রকাশ্যে জড়িত ছিলেন তারাও আজকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠিত। বিকল্পধারার যেসব নেতারা নারায়ণগঞ্জে ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে বক্তব্যে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘মায় পুতে মিল্লা দেশটা খাইলো গিল্লা’। সেইসব নেতারাও আজকে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর বিএনপি’র শীর্ষ পদে অধিষ্ট।

একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ প্রতিষ্ঠিত বিদিশা ফাউন্ডেশন ফাউন্ডেশন। এতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সরাসরি জড়িত। যদিও তারা দাবি করছেন বিদিশা ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দেয় যখন বিদিশা এরশাদ নিজেই রাজনীতি করার ঘোষণা দেন। আর তার সংগঠনের সাথে জড়িত বিএনপি নেতারা, তাহলে সেটা কি আর অরাজনৈতিক থাকে? এছাড়াও বিদিশা এরশাদ বেশ কয়েকবার মিডিয়াতে ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপির অনেক নেতা কর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নতুন দল গঠন করবেন।

আবার সম্প্রতি তিনি জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে বিদিশা এরশাদ এর ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। সেই বিদিশা এরশাদের বিদিশা ফাউন্ডেশনে জড়িত বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। যারা এইসব বিএমপির বিএনএফ বিকল্প ধারা বাংলাদেশ তৃনমূল বিএনপি বিদিশা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত তারাই নিজেদেরকে অনেক নীতিবান আদর্শবান দাবি করেন। যাদের নাম বিএনএফের কমিটিতে ছিল তারাও নীতি-আদর্শের কথাবার্তার বুলি আওড়ান। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র কমিটিতে নেতৃত্বে থেকেও আজকে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে।

বিএনপি কখনোই ক্ষমতায় আসতে পারবে না- তারা এমনটাই মনে করে মনেপ্রাণে ধারণ করে তখন তারা এখনই যে যার মতো করে এদিক-ওদিক সেদিক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এদের আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের এক পা দিয়ে রেখেছেন, আবার কেউ কেউ জাতীয় পার্টিতে এক পা দিয়ে রেখেছেন। বিএনপির যখন সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে, দরজা বন্ধ হয়ে যাবে তখন তারা কেউ চলে যাবে আওয়ামী লীগের নৌকায়, কেউ চলে যাবে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলে। বিএনপিতে পদ-পদবী রেখে নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতে পারেন।