বৈদ্যেরবাজার ইউপিতে নৌকার অবস্থা নাজুক, লড়াইয়ে মাহবুর সরকার ও আব্দুর রউফ

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ২৬ শে ডিসেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলামিন সরকারের অবস্থান একেবারেই নড়বড়ে। যদিও স্থানীয়দের মতে, নৌকার সঙ্গেই লড়াই হবে স্বতন্ত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের। যেখানে নির্বাচনের বিষয়ে জয়ের একেবারেই প্রথম অবস্থানে রয়েছেন মাহবুব সরকার।

স্থানীয়রা বলছেন, এবারের নির্বাচনেও গত নির্বাচনের মতোই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলামিন সরকার তৃতীয় স্থানে থাকতে পারেন। আব্দুর রউফ গত নির্বাচনে মাহবুব সরকারকে মাত্র দেড় শতাধিক ভোটে পরাজিত করেছিলেন। সেই স্থান থেকে আব্দুর রউফের বর্তমান জনপ্রিয়তা কিছুটা কমায় এবার জনপ্রিয়তায় জয়ের সম্ভাবনায় রয়েছেন মাহবুব সরকার। যদিও স্বতন্ত্র দুই শক্তিশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরাতে নানা ধরনের কুট-কৌশলে হামলা-মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন আলামিন সরকার। মামলায় ফাঁসিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টার বিষয়টি ভোটারদের কাছে পরিষ্কার হওয়ায় আলামিন সরকারের অবস্থা আরো নাজুক।

যে কারনে স্থানীয়দের অনেকেই মনে করেন, এই নির্বাচনের মূল লড়াই হবে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর। কিন্তু সরকারি দল হওয়ার কারণে স্বতন্ত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন ভোট কেন্দ্র দখল করে জোরজবরদস্তি জালিয়াতির মাধ্যমে আলামিন সরকার জয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্যেই নৌকা প্রতীকের লোকজন নিয়মিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছিল। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অবাধ হলে আলামিন সরকার এবারো তৃতীয় অবস্থানে থাকবেন।

এসব কারনে নির্বাচনে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াইয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব সরকারকে এগিয়ে রাখছেন ইউনিয়ন বাসী। স্থানীয়রা আরো বলছেন, এই নির্বাচনটি চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। চরাঞ্চলের পাশের এই বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন নির্বাচনে হতাহতের ঘটনা রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

জানা গেছে, নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আল আমিন সরকার ও তার লোকজন স্বতন্ত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব সরকার ও আবদুর রউফকে চরম কোনঠাসা অবস্থায় রেখেছেন। নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়ার চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থক ও ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দাবি করেছেন তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লোকজন। যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন- নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলামিন সরকার ও তার লোকজন নিজেরাই রাতের আঁধারে নিজেদের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এবং নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এমন অবাস্তব ঘটনা সাজিয়েছে। উল্টো নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেক এলাকায় পোস্টার লাগাতে দেয়নি। কোনো কোনো এলাকায় বাধার কারনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন মাইকিং করে প্রচারণা চালাতে পারেনি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন এলাকায় ঘুরে ঘুরে লোকজনদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বলছেন- তারা ভোটের দিন ভোট কেন্দ্র দখল করে জোর করে ভোট জালিয়াতি করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নৌকাকে বিজয়ী করবে।

অন্যদিকে আরো অভিযোগ ওঠেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলামিন সরকারকে বিজয়ী করতে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন, সাদিপুর ইউনিয়ন, বারদী ইউনিয়ন ও সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকা থেকে হাজার হাজার বহিরাগতরা লোকজন বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে নৌকার পক্ষে ভোট কেন্দ্র দখলে নিয়ে ভোট জালিয়াতি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই লক্ষেই শনিরার সকাল থেকে বৈদ্যেরবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান দেখাও যাচ্ছে।

যদিও যেকোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি। তারা বলছেন, নির্বাচনে কেউ বিশৃঙ্খলা কিংবা কেন্দ্রের আশেপাশে নাশকতা সৃষ্টি করলে তাদেরকে আইনগতভাবে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করছে। এতে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।