এমপি খোকার উন্নয়নের পক্ষে জনগণ, নির্বাচনে ত্রাস সৃষ্টি করেও ব্যর্থ আওয়ামীলীগ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জাতীয়পার্টি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যা এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেলো। এখানে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক থাকলেও সমর্থক ও সাধারণ জনগণের মনের ভেতরে স্থান করে নিয়েছে জাতীয়পার্টি। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার উন্নয়ন বার্তা নিয়ে যেখানে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন, সেখানে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জোর দবরদস্তি করে পাশ করানোর জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও তার নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা নির্যাতন হুমকি ধমকিতে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। লাঙ্গল প্রতীকের এক প্রার্থীর ৭০ বয়সি বৃদ্ধ পিতাকে জিম্মি করে রেখেছিল নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজন, যা সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়দের দাবি।

অভিযোগ ওঠেছিল- এমনকি প্রার্থীদের বাড়িতে একাধিকবার হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে আওয়ামীলীগের লোকজন। প্রকাশ্যে মটর সাইকেল মহড়া দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে টেবিলের সামনে, ব্যালটে প্রকাশ্যে সীল মারার ঘোষণা দেয়ার নজির সৃষ্টিও করেছে আওয়ামীলীগ, যার ভিডিও প্রকাশিত হয় ফেসবুকে। নির্বাচনে ভোটের দিন তার ব্যতয় ঘটায়নি আওয়ামীলীগ। ভোটের আগেই লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের পোস্টার ছিড়ে ফেলা, মাইকিং করতে না দেয়া, এলাকায় ভোট চাইতে বের হলে বাধা ও হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর, পোলিং এজেন্টদের হুমকি, লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করা কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর সহ হুমকি ধমকি দিয়ে চরম আতংকের নির্বাচনের সৃষ্টি করে আওয়ামীলীগ। যেখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা জনগণের ভোটের উপর নির্ভর করেনি, তারা ভোট কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে সীল মেরে নিয়ে পাশের পরিকল্পনা করে আসছিল। যার ফলে লাঙ্গলের প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।

তবে এত্তসব করেও শেষ রক্ষা হয়নি আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের। নির্বাচনে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দুটি ইউনিয়নে জোর জবরদস্তি কেন্দ্র দখল করে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থীরা। তাও সাদিপুুর ইউনিয়নে ৪টি কেন্দ্র দখল করে সিংগভাগ ভাগ ভোট কাস্টিং দেখিয়ে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রশিদ মোল্লার পক্ষে জয় ছিনিয়ে নিলেও উপজেলায় একইভাবে শম্ভুপুরা ইউনিয়নে ৩টি ভোট কেন্দ্র দখল করে সিংহভাগ ভোট কাস্টিং করিয়েও নৌকার প্রার্থী নাসির উদ্দীনকে বিজয়ী করাতে পারেনি আওয়ামীলীগ। তবে জামপুর ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্র আড়াইহাজারের ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দখলে নেয় নৌকার প্রার্থী হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া। একাধিবার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ভোট কেন্দ্র দুটি বন্ধের দাবি জানালেও তা হয়নি। বিপুল পরিমান জাল ভোট দেয়ার পর পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রনে নেয়। কিন্তু তার আগেই ভোট ডাকাতি হয়ে যায়। নৌকার প্রার্থী হুমায়ুন নিজেই সরকারি সীল নিয়ে কেন্দ্রের বাহিরে চলে আসে যা মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়।

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, সোনারগাঁও উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ভোটের আগেই আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের ৪জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তবে এই ৪টি ইউনিয়নে মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী মেম্বার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে উপজেলার জামপুর, নোয়াগাঁও, শম্ভুপুরা ও সাদিপুর ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের ৪জন প্রার্থীর মধ্যে দুটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি দুটি ইউনিয়নে ব্যাপক ভরাডুবি ঘটেছে অনেক চেষ্টার পরেও।

এর মধ্যে শম্ভুপুুরা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাসির উদ্দীনকে পরাজিত করে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। এখানে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রউফ প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাও চালাতে পারেনি। এলাকায় তার সিংহভাগ পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। তার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করা হয়। নির্বাচনে তিনি তেমন একটা প্রচারণাই করতে পারেনি নৌকার প্রার্থীর হুমকি ধমকি বাধার কারনে। নির্বাচনের দিন আব্দুর রউফ একা একা ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরেছেন। শেষ বিকেলে তিনি অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারন সকালেই ৩টি কেন্দ্র দখল নিয়ে নৌকার পক্ষে সীল মারা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। লাঙ্গলের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এমনকি আব্দুর রউফের বাড়ির সামনের কেন্দ্রেও পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি তিনি। কিন্তু এত্তসব ত্রাস সৃষ্টি করেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা আব্দুর রউফের জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি যুবলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি নৌকার প্রার্থী নাসিরউদ্দীন।

আরো অভিযোগ- একই দশা হয়েছিল যা সাদিপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ মোল্লা। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাসেম পেয়েছেন প্রায় ১২ হাজার ভোট। এখানেও ৪টি ভোট কেন্দ্র নৌকার পক্ষে দখলে নিয়ে ৯০ভাগ ভোট নৌকার দেখানো হয়। প্রায় ৪ হাজার ভোট এখানে ছিনিয়ে নেয়া হয় আব্দুর রশিদের বাক্সে। অন্যান্য ভোট কেন্দ্রগুলোতেও ব্যাপক ছলছাতুরি করেছে নৌকার লোকজন। নির্বাচনে আবুল হাসেম প্রচারণাই চালাতে পারেনি। এলাকায় তার পোস্টার সব ছিড়ে ফেলা হয়। মাইকিং করতে পারেনি। পোলিং এজেন্টদের ভয় ভীতি দেখানো হয়। কোন সভা সমাবেশও করতে পারেনি আবুল হাসেম। নির্বাচনী কোনো উঠান বৈঠক করতে পারেনি তিনি। ঘরে ঘরে গিয়ে দু’চার পাচজন লোকজন নিয়ে ভোট চেয়েছেন উন্নয়নের স্বার্থে। তাতেই তার জয় নিশ্চিত ছিলো বলে জাতীয় পার্টির দাবি।

আরো অভিযোগ- জামপুর ইউনিয়নে নির্বাচনের শুরুতেই জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল মাকসুদ ভুঁইয়ার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলো নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া ও তার লোকজন। আশরাফুলের বাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখে নৌকার লোকজন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আড়াইহাজার আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু প্রকাশ্যে উঠান বৈঠক করেন জামপুরে। নির্বাচনের শুরুতেই জামপুরে আড়াইহাজারের ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের আনাগোনা দেখা যায়। নির্বাচনের দুদিন আগে আশরাফুলের বৃদ্ধ পিতাকে জিম্মি করে রাখা হয়। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। একইদিন আশরাফুলের নির্বাচনী প্রচারণায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে অন্তত ২০জনকে আহত করা হয়। তার গাড়ি ভাংচুুর করা হয়। নির্বাচনের দিন দুটি ভোট কেন্দ্র আড়াইহাজারের ডাকাত ও সন্ত্রাসীরা দখলে নিয়ে নৌকার পক্ষে সীল মারে। পুুলিশ গিয়ে পরে ভোট কেন্দ্র থেকে সন্ত্রাসীদের সরিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আশরাফুল বারবার ভোট কেন্দ্র স্থগিত করার দাবি জানিয়েছিলেন। শেষ বেলায় এখানে লাঙ্গলকে পরাজিত দেখানো হয়।

অন্যদিকে নোয়াগাঁও ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেনের জনপ্রিয়তা এতটাই তলানিতে ছিলো যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্ধিতাও গড়তে পারেনি। এখানে জাতীয় পার্টির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুল আলম চশমা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ছিলেন মটর সাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান উদ্দীন চুন্নু। তারপর ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ান। একাধিক শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নৌকা জোর খাটাতে পারেনি। ফলে এখানে নৌকার লজ্জাজনক ভরাডুবি ঘটে।