মির্জা ফখরুল বরাবর পারভীন ও অনুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর মহিলা দলের কমিটি গঠন নিয়ে কমিটির নেত্রীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন পদবঞ্চিতরা। তারা নানা অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। পদবঞ্চিতদের এমন অভিযোগের পর কমিটিতে আসা নেত্রীরাও পাল্টা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কমিটি গঠনের বিষয়ে নানা অসংগতি তুলে ধরার চেয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানো শুরু করেছেন খোদ মহিলা দলের নেত্রীরা। একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মহিলা দলের নেত্রীদের চরিত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে আকার ইঙ্গিত পোস্ট করছেন তারা।

জানাগেছে, সম্প্রতি রহিমা শরীফ মায়াকে সভাপতি ও রুমা আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা মহিলা দল এবং দিলারা মাসুদ ময়নাকে সভাপতি ও কাউন্সির আয়েশা আক্তার দিনাকে সাধারণ সম্পাদক করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনে পূর্বের আহ্বায়ক কমিটির জেলার আহ্বায়ক নুরুন্নাহার বেগম ও মহানগরীর আহ্বায়ক রাশিদা জামালকে বাদ দেয়া হয়।

মুলত নতুন কমিটির বিষয়ে ক্ষোভের কারন হিসেবে নেত্রীরা জানান, দিলারা মাসুদ ময়না ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেছেন। এরপর থেকে তিনি বিএনপির কোনো ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ছিলেন না। প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেছেন। একইভাবে সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি বাধ প্রজেক্ট বাজেট প্রণয়ণ করায় আওয়ামীলীগের এমপি শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই সমাবেশে আয়েশা আক্তার দিনা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করে শোডাউন করে যোগদান করেছেন। অথচ তাদের হাতে নেতৃত্ব মেনে নেয়া যায়না। তাদেরকে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টি ঘেষা হিসেবে আখ্যায়িত করে পদবঞ্চিতরা কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দেন।

কিন্তু পদবঞ্চিতদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করে কেন্দ্রে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন নতুন কমিটির নেত্রীরা। পদবঞ্চিতদের ‘অপপ্রচারকারী’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর মহিলা দলের নবকমিটির শীর্ষ নেত্রীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর ১৭ নভেম্বর বুধবার অভিযোগটি দেওয়া হয়।

পাল্টা অভিযোগ পত্রের ভাষ্য মতে, ‘নতুন কমিটি নিয়ে সাবেক মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ যা বলছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার ও ভিত্তিহীন’। অভিযোগপত্রটিতে স্বাক্ষর করেছেন জেলা মহিলা দলের সভাপতি রহিমা শরিফ মায়া, সাধারণ সম্পাদক রুমা আক্তার, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি দিলার মাসুদ ময়না ও সাধারণ সম্পাদক আয়েশা আক্তার দিনা।

তাঁর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটি, সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব, দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে সমস্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং ইন্দনদাতা (বিভাগীয় সাংঠনিক) পারভীন আক্তার। সে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহিলা দলের নেতৃদের কাছ থেকে পদ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন সে আড়াইহাজারের এমপি বাবুর সাথে আতাত করে বিএনপির ত্যাগী অনেক নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে হয়রানির শিকার করেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

‘১/১১ এর সময় পারভীন আক্তারের স্বামী আনোয়ার হোসেন আনু বাসায় র‌্যাবের ক্যাম্প বসিয়ে নিরীহ বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ও জমিজমা আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে সে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাবেক সভানেত্রী নুরুন নাহার ও মহানগর মহিলা দলের ৭নং যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদা খাতুন মিতাকে উস্কানি দিয়ে আমাদের নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছে। এছাড়াও তারা নির্বাহী কমিটিসহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ করে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছে। যা এখন দলের ভাবমুর্তি খুন্ন হয়েছে।’

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ মহিলা দলের সভানেত্রী নুরুন নাহার বেগম দীর্ঘ ১৩ বৎসর যাবৎ সভাপতির পদ দখল করে রেখেছে। বর্তমানে তাঁর অশালীন ও উগ্র আচরণে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অতিষ্ঠ। নুরুন নাহার নিজের বিরুদ্ধে ৭-৮টি রাজনৈতিক মামলার কথা জানালেও একটি মামলা ছাড়া সব ভূয়া। জেল খেটেছে তাঁর ব্যক্তিগত বাড়ির বিদ্যুতের বকেয়া বিলের মামলার কারণে। সে রহিমা শরিফ মায়াকে নারায়ণগঞ্জের ভাড়াটিয়া বলেছে, অথচ নুরুন নাহারের নিজের বাড়ি কুমিল্লা আর রাজনীতিতে আগমন জাতীয়পার্টি থেকে।

অভিযোগের এক অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক সভানেত্রী রশিদা জামাল দীর্ঘ ১৩ বছর মহানগর মহিলা দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে মহানগর মহিলা দলের সভাপতি দিলার মাসুদ ময়না তাঁর সাথেই সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অথচ, তার বিরুদ্ধে আওয়ামীঘেসা বলা হয়েছে, যা মিথ্যা ও বানোয়াট। এছাড়া মহানগর মহিলা দলের ৭নং যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদা খাতুন মিতা উগ্র আচরণ ও অশালীন পোশাক পরিধান করে বেড়ান। সে নিজে ৫ম শ্রেণি পাশ না করেই অন্যের শিক্ষাগত যোগত্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ৩ বারের এমপি আবুল কালামের বিরুদ্ধে অশালিন ভাষায় বিভিন্ন মন্তব্য করে। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সর্বমহলে নোংড়া আলোচনা হয় সবসময়। যা আমাদের দলের জন্য অত্যান্ত লজ্জাকর। তাঁরা অপপ্রচার চালাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মৃত. বিনু আক্তারকে বর্তমান মহানগর মহিলা দলের কমিটিতে সহ দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই যে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মৃত. বিনু আক্তার আর বর্তমান কমিটির বিনু আক্তার এক ব্যক্তি নয়। বর্তমান কমিটির বিনু আক্তার বন্দর থানার মহিলা দলের নেত্রী।