শামীম ওসমানের শ্যালক টিটুকে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ফজর আলীর সংবর্ধনা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আগামী ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সদর থানা আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দীন। তাকে এমপি সেলিম ওসমান সমর্থন ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এখানে নৌকা প্রতীক চেয়ে না পেয়ে নৌকার বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শিল্পপতি ফজর আলী।

অনেক আগে থেকেই এলাকায় চাওর রয়েছে ফজর আলীর পক্ষে রয়েছেন শামীম ওসমান। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ফজর আলী মনোনয়ন দাখিলের পরেও এমনটা আলোচনায় ছিল। তবে এবার সেটা বাস্তবে রূপ নিলো শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে সংবর্ধনার দেয়ার মাধ্যমে। নির্বাচনকালীন এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র গোগনগরেই ফজর আলীর সংবর্ধনায় টিটু কেনো গিয়েছেন সেটা বুঝার আর বাকি রইলো না।

জানাগেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন এমপি শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় ২৩ অক্টোবর শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ গোগনগর ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু উচ্চবিদ্যালয়ে বিদ্রোহী প্র্রার্থী ফজর আলীর উদ্যোগে তানভীর আহমেদ টিটুকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়।

অন্যদিকে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন শিল্পপতি ফজর আলী। কিন্তু এলাকায় তিনি প্রচার করে বেড়াচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের আশীর্বাদেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

ফজর আলীর এমন প্রচারণায় শামীম ওসমানের অবস্থান বিতর্কিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে এই ইউনিয়নে অনেক আগেই নৌকার প্রার্থী জসিম উদ্দীনকে সমর্থন ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। ফলে ফজর আলী নির্বাচনের কারনে আপন দুই ভাইয়ের রাজনীতর মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিচ্ছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

জানাগেছে, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি গোগনগর ইউনিয়নে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি সেলিম ওসমান। ওই অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান গোগনগর ইউনিয়নে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাচিত জসিম উদ্দীনকে এবারের নির্বাচনে তার সমর্থন ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সেদিন মঞ্চে উপস্থিত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের কাছে জসিম উদ্দীনকে নৌকা প্রতীক এনে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান সেলিম ওসমান।

এমপি সেলিম ওসমানের ওই অনুষ্ঠানের কয়েকদিন পর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল শিল্পপতি ফজর আলীকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। বেশকটি অনুষ্ঠানে শহীদ বাদল ফজর আলীকে পছন্দের প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা দেন। এরি মাঝে একদিকে যখন সেলিম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানারে জসিম উদ্দীন নির্বাচনী কর্মকান্ডে করে আসেন, একইভাবে এমপি শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানারে নির্বাচনী কর্মকান্ড করে আসছেন ফজর আলীও।

এসব কারনে স্থানীয়রা বলছেন- দানবীর এমপি সেলিম ওসমানের এমন ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ ইউনিয়নে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ী ফজর আলী। যিনি প্রয়াত চেয়ারম্যান নওশেদ আলীর ভাই। চেয়ারম্যান নওশেদ আলীর মৃত্যুর পর ওই ইউনিয়নে সেলিম ওসমান জসিম উদ্দীনকে নিজের সমর্থন ঘোষণা করেন।

নির্বাচনে জসিম উদ্দীন ও ফজর আলী নৌকার মনোনয়ন চান। নৌকা পাওয়ার আগেই এলাকায় প্রচার করতে থাকেন শামীম ওসমানের মাধ্যমে ফজর আলী নৌকা প্রতীক পেয়ে গেছেন। যার জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা ফজর আলীকে খরচ করতে হয়েছে। নৌকা প্রতীক পেয়ে গেছেন এমন দাবি করে ফজর আলীর লোকজন নৌকার পক্ষে মিছিলও করেন। এমন প্রচারণার পর জসিম উদ্দীন ঘাবরে যান। কিন্তু শেষতক মনোনয়ন পান জসিম। ফজর আলী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের দুজনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে স্থানীয়রা বলছেন- সেলিম ওসমানের সমর্থন ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ফজর আলী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। আবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এলাকার লোকজনের কাছে প্রচার করছেন শামীম ওসমানের আশীর্বাদেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ফজর আলী।

এমনটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে- যখন শামীম ওসমানের বিশ্বস্ত কর্মী সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাজির আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ আল মামুন প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী ফজর আলীর পক্ষে কাজ করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্রটিও দাখিল করেছেন আল মামুন। এখানে জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি শহীদ বাদলেরও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। কারন জসিমের নাম বাদ দিয়ে কেন্দ্রে মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবনায় এককভাবে ফজর আলীর নাম পাঠিয়েছিলেন শহীদ বাদল। এবং পদধারী নেতারা নৌকার বিরোধীতা করার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা জেলার নেতারা।