যেভাবে রূপগঞ্জের ‘হৃদয়’ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করলো র‌্যাব

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর, ক্লু-লেস ও নৃশংস ‘‘হৃদয় মিয়া’’ হত্যাকান্ডের মূল হত্যাকারী আশিকসহ ইজিবাইক চোরাই চক্রের দুই সদস্যকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে র‌্যাব-১১ গ্রেপ্তার করেছে। ১১ অক্টোবর সোমবার সন্ধায় এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা।

তিনি জানান, গত ৭ অক্টোবর তারিখে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল নতুন শহরের ৭নং সেক্টরের ২১৯ নং রোডে ১৪২/এ বাড়ীর উত্তর পাশে ফাঁকা রাস্তার উপর অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার খবর পাওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোঃ দুখাই মিয়া নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা ও রক্তাক্ত লাশটি দেখে লাশটি তার ছেলে হৃদয় মিয়া বলে সনাক্ত করে।

উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরূদ্ধে নিহতের বাবা মোঃ দুখাই মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-০৯, তারিখ-০৮/১০/২০২১। এই ঘটনা স্থানীয় সকল গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয় ও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ইজিবাইক ছিনতাই ও চালককে হত্যা বর্তমানে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসকল ছিনতাইকারীরা সংঘবদ্ধভাবে এসকল নৃশংস কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা ইজিবাইক চালকদের জন্য একটি আতঙ্কের কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

উল্লে¬খিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে র‌্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে র‌্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন ব্রাহ্মণখালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইজিবাইক চালক হৃদয় মিয়া’র নৃশংস হত্যাকারী ও ইজিবাইক ছিনতাইকারী আশিক মিয়া (১৯), পিতা- মোঃ মনির হোসেন, গ্রাম- দরিগুতিয়াবো, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ’কে সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং তার নিকট হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে।

র‌্যাব জানায়, হত্যাকারী আশিক জনৈক মাদক ব্যবসায়ী মোঃ সবুজ (২০), পিতা- অজ্ঞাত, গ্রাম- তালতলা, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ এর নিকট হতে নিয়মিত মাদক ক্রয় ও সেবন করত। একপর্যায়ে মাদক সেবন ও অন্যান্য কাজে আশিক এর অর্থের প্রয়োজন হলে সে সবুজ এর নিকট টাকা ধার চায়। তখন সবুজ তাকে ইজিবাইক চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই করার বুদ্ধি দেয় এবং এই কাজে গামছা বা ছুরি ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। এছাড়াও সবুজ আশিক’কে রমজানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং বলে যে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক রমজানের কাছে নিয়ে আসলে সে বিক্রি করে টাকার ব্যবস্থা করে দেবে।

অতঃপর আশিক ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গত ০৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন ডাঙ্গা বাজার থেকে ২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি ক্রয় করে। অতঃপর পরিকল্পনা অনুযায়ী একই বাজার হতে একই দিন আনুমানিক বিকাল ০৪ টায় হৃদয় মিয়া’র ইজিবাইক ভাড়া করে। এরপর আশিক কৌশলে হৃদয় মিয়ার ইজিবাইক নিয়ে আনুমানিক সন্ধ্যা ০৭ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল এলাকায় যায় এবং পিছন থেকে আশিক তার সাথে থাকা গামছা দিয়ে ইজিবাইক চালক হৃদয় মিয়ার গলায় পেচিয়ে ধরে শ¡াসরোধ করার চেষ্টা করে। এসময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আশিক হত্যার উদ্দেশ্যে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে হৃদয় মিয়া’র গলায় আঘাত করে এবং গলা কেঁটে হত্যা নিশ্চিত করে।

এরপর আশিক ভিকটিমের ইজিবাইক চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ সবুজ এর নির্দেশনা অনুযায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন পাঞ্জরা এলাকায় যায় এবং সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য রমজান মিয়া (৩৫), পিতা- মৃত আক্তারুজ্জামান, গ্রাং- মালখান, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ এর নিকট ইজিবাইকটি রেখে আসে।

আশিক আরো জানায় যে, মোঃ সবুজ ও রমজান মিয়া আন্তঃজেলা ইজিবাইক চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। হত্যাকারী আশিক এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র‌্যাব-১১ এর আভিযানিক দল গত ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন পাঞ্জরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য রমজান মিয়া’কে গ্রেফতার করে এবং তার নিকট হতে ভিকটিমের ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

উক্ত হত্যাকান্ডের প্ররোচনাকারী ও চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য সবুজ গ্রেফতার এড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় আতœগোপন করে আছে। তাকে গ্রেফতার করার জন্য র‌্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।