সায়েমের পক্ষে আ’লীগের তৃণমূল: মতিতে নাখোশ, জাকির জামাত-হেফাজত ঘেষা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্র্রত্যাশিদের নাম কেন্দ্রে পাঠাবে। এবারও একক প্রার্থী হয়ে বিনাভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমান আলীরটেক ইউনিয়নে এক মতবিনিময় সভায় মতিউর রহমানকে অবারো সমর্থনের বিষয়ে ঘোষণা দেন।

এরপর বিনাভোটে আবারো চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন মতি-এমন প্রচারণা চালাতে থাকলে ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহম্মেদকে নিয়ে আন্দোলনে নামেন। এমন ঘটনায় ইউনিয়নের পুরো আওয়ামীলীগ সায়েম আহাম্মেদের পক্ষে অবস্থান নেয়।

এরপর বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেন আলীরটেক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। সেখানে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনাও হয়। বিএনপি জামায়েত ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের লোকজনের সমাবেশে পরিনত করেন জাকির হোসেন। সেই জাকির হোসেন এবার আওয়ামীলীগের উপর ভর করে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চান। জাকির হোসেন এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।

এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি গত নির্বাচনে নৌকাপ্রতীক নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এমনকি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও গত ৫টি বছরে আওয়ামীলীগের দলীয় কোনো কর্মকান্ডে তার কোনো সক্রিয়তা দেখা যায়নি। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতেও তার অনুপুস্থিতি ছিল বেশি। অথচ সেই মতি এবারও নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি। বসবাস করেন শহরে, আলীরটেকবাসীর খবর নেয়ার সময় পাননি তিনি।

অন্যদিকে গত নির্বাচনের আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এবারও নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা সায়েম আহাম্মেদ। আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা করে তুলেছেন তিনি। জাকির ও মতির নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে আলীরটেক ইউনিয়নে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি।

আলীরটেক ইউনিয়নের মানুষজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানিয়েছেন, বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন মতিউর রহমান মতি। ওই নির্বাচনে শক্ত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক সায়েম আহাম্মেদ। জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনুরোধে ওই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সায়েম আহাম্মেদ। তাকে প্র্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে, এবারের নির্বাচনে মতিউর রহমান মতি নির্বাচন করবেন না এবং সায়েম আহাম্মেদকে সমর্থন করা হবে। কিন্তু মতি এবারও প্রার্থী।

গত কয়েক বছর ধরে আলীরটেক ইউনিয়নে নির্বাচনী সভা সমাবেশ উঠান বৈঠক কিংবা নির্বাচনী শোডাউনও করে আসছেন সায়েম আহাম্মেদ। প্রায় নিয়মিত আলীরটেক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সায়েম সেই গত নির্বাচনের পর থেকেই সক্রিয় ভুমিকা রাখছেন। বছর খানিক সময় ধরে আলীরটেকে পুরোদস্তর নির্বাচনী কর্মকান্ড করে আসছেন তিনি। যেখানে মতিউর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়া নির্বাচনী কোনো কার্যক্রমে ছিলেন না।

চেয়ারম্যান প্র্রার্থী সায়েম আহাম্মেদের নির্বাচনী প্রচারণা ও দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকছেন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। সায়েম আহাম্মেদ সম্পর্কে আল মামুন বলেন, সায়েম আহাম্মেদ নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। সে আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সদর থানা আওয়ামীলীগের সকল কার্যক্রমে সক্রিয় ভুমিকা রাখছে। আলীরটেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান সায়েম আহাম্মেদ। দলকে শক্তিশালী করতে সে ভুমিকা রাখছে এবং ভবিষতেও সদর থানা আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে। তাই আমরা তাকে সদর থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রস্তাবনায় রেখেছি।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা কৃষকলীগের দপ্তর সম্পাদক ও থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওদাগর খান বলেন, আমার বাবা যখন রাজনীতি করতেন, তখন এই সায়েম আহাম্মেদের পরিবারের লোকজন আমার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করতেন, সভা সমাবেশে যেতেন। সায়েম ঐতিহ্যবাহী বোদ্দা পরিবারের সন্তান। আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান। আলীরটেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে সায়েম আহম্মেদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের ভুমিকা রয়েছে। তারা ছিলেন আওয়ামীলীগের ধারক বাহক। আলীরটেকে যেখানে ১০০টা ভোট ছিল সেখানে সায়েম আহাম্মেদের পরিবার ও তার আত্মীয়স্বজনের ভোট থাকতো ৭০টি। সায়েম রাজনীতিতে পুরোদমে আসায় সদর থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতি আরো বেশি সক্রিয় হচ্ছে এবং তাকে কমিটিতে রাখলে আমি মনে করি সদর থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতি আরো বেগবান হবে। সেই সঙ্গে আলীরটেক ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন দরকার। পরিবর্তনের লক্ষ্যেই সায়েম আহাম্মেদকে আলীরটেকবাসীর মাঝে এনেছি।

আলীরটেক গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এস.টি আলমগীর সরকার বলেন, আলীরটেক ইউনিয়নে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ভুমিকায় এখন সায়েম আহাম্মেদ। আমরা তার পেছনে আছি। তার ভুমিকায় আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ চাঙ্গা। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা এখন মুল্যায়ন পাচ্ছেন।

আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা হাজী মনির হোসেন ও মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সায়েম আহাম্মেদ আলীরটেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগকে জাগ্রত করেছে। তার হাতেই নৌকা প্রতীক দেখতে চাই।

আলীরটেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসমাঈল মাতবর বলেন, সায়েম আহাম্মেদ আলীরটেকে আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা রাখছে। সায়েম আহাম্মেদ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন এবং জনগণকে ভালবাসেন।

৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, আলীরটেক ইউনিয়নে আমরা পরিবর্তনের লক্ষ্যে সায়েম আহাম্মেদকে চাই। সায়েম আহাম্মেদ চেয়ারম্যান হলে আলীরটেক ইউনিয়ন উন্নয়নবঞ্চিত হবে না।

৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জুনু বলেন, সায়েম আহাম্মেদ আলীরকেট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রাণভ্রমরা হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন। আমরা সায়েম আহাম্মেদকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেখতে চাই।

১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহান উল্লাহ বলেন, সায়েম আহাম্মেদের মাধ্যমে আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। সায়েম আহাম্মেদ সকলের খোঁজখবর রাখছেন। তার মত লোকের হাতেই নৌকা প্রতীক মানায়।