শহীদ বাদলের পছন্দ ব্যবসায়ী ফজর আলী: নৌকার বিরোধীতাকারীই নৌকা প্রত্যাশী!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনেক আগেই নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামীলীগে যেনো কাউয়া হাইব্রিড অনুপ্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে উল্টো চিত্র। এখানে গত নির্বাচনে যে ব্যক্তি নৌকার বিরোধীতা করে নৌকা ডুবিয়েছেন এবার সেই নৌকার বিরোধীতাকারীই এখন নৌকার প্রতীক প্রত্যাশি। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যার সারা জীবনেও অস্তিত্ব দেখা যায়নি। সেই ব্যবসায়ী ফজর আলীই এখন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের পছন্দের প্রার্থী।

আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কোনো কালেই কোনো পদেই ছিলেন না ফজর আলী। প্রবাসে থেকে নানা পন্থায় অঢেল অর্থের মালিক হওয়া ফজর আলীর স্বাদ জেগেছে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার। কিন্তু এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ চাচ্ছে ফজর আলীর নাম কেন্দ্রে প্রস্তাবনায় না রাখতে। কিন্তু জেলার প্রভাবশালীরা চাচ্ছে ফজর আলীর নামই এক নম্বরে রেখে তার হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা চায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সঠিক যাচাই বাছাইয়ে যেনো নৌকা প্রতীক দেয়া হোক।

এমনি চিত্র নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন সদর থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিমউদ্দীন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন প্রয়াত নওশেদ আলী। ওই নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করে নওশেদ আলীর পক্ষে কাজ করেছিলেন ব্যবসায়ী ফজর আলী। নওশেদ আলীর ভাই এবার সেই ফজর আলী নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি!

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন- ষড়যন্ত্র চলছে নৌকার বিরোধীতা ও নব্য আওয়ামীলীগার হাইব্রিড ফজর আলীর হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়ার। যেখানে দলের সিদ্ধান্ত রয়েছে যাতে কাউয়া হাইব্রিড কোনোভাবেই আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেখানে ফজর আলীর হাতেই নৌকা তুলে দিতে সদর থানা আওয়ামীলীগের দুএকজন নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের একজন নেতা জোর চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

যদিও গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বৃহত্তর অংশের নেতাকর্মীরা জসিম উদ্দীনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। একই সঙ্গে স্থানীয় ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও গিয়েছেন জসিম উদ্দীন। আওয়ামীলীগের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান জসিম উদ্দীনের হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হোক এমনটাই চায়। আওয়ামীলীগের তৃণমূল ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গ সহ সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় জসিম উদ্দীন।

অন্যদিকে হাইব্রিড খ্যাত অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যবসায়ী ফজর আলী বিশেষ সুবিধা দিয়ে আওয়ামীলীগের দুএকজনকে ম্যানেজ করেছেন। দুহাতে খরচ করে তার নির্বাচনী উঠান বৈঠকে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যাবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের জমায়েত করেছেন। ইতিপূর্বে ফজর আলীর এক উঠান বৈঠকে আওয়ামীলীগের সদর থানা আওয়ামীলীগ নেতা আল মামুন ঘোষণা দিয়েছিলেন ফজর আলীকে নৌকা প্রতীক দেয়া না হলে তাকে আমপাতা প্রতীকে নির্বাচন করালেও ফজর আলী পাশ করবেন। এমন খবর মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝেও। এসব বিষয়ে ফজর আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে নির্বাচনের বিষয়ে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি জসিমউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার তো আওয়ামীলীগের বাইরে যাওয়ার সাধ্য নেই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো, না দিলে করবোনা। আমার কাছে দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আদেশ শিরোধার্য। আমি বিশ্বাস করি যাচাই বাছাই করেই গোগনগর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক দিবেন।

গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল আজিজ মাষ্টার বলেন, আমাদের পছন্দের প্রার্থী জসিম ভাই। আমরা তাঁর মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে আশাবাদী।

সাধারণ সম্পাদক এবিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, দুয়েক দিনের মধ্যে আমরা বর্ধিত সভা করে এ বিষয়ে তৃনমূলের সিদ্ধান্ত জানাবো ইনশাআল্লাহ। গোটা তৃনমুল জসিম সাহেবের পক্ষে। উনি দুঃসময়ের কান্ডারী। কোনো হাইবিড্র কাউয়ার টাকার বিনিময়ে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা জসিম সাহেবের সঙ্গে বেঈমানী করবেনা এটা বর্ধিত সভায় প্রমানীত হবে।