ধনকুবের ও মোড়লদের বাধায় ঝুঁলে গেলো বিএনপির ১০টি ইউনিট কমিটি গঠন!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

করোনাকালে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন থানা/উপজেলা ও পৌরসভার ১০টি ইউনিট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তারা সার্চ কমিটিও গঠন করেছিলেন। কিন্তু জেলায় বিএনপির বেশকজন ধনকুবের নেতা ও মোড়লদের বাধায় আটকে গেছে এসব কমিটি গঠন। এসব নেতারা চাচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচিত আসনে নিজ নিজ পছন্দের ব্যক্তিদের হাতে পকেট কমিটি তুলে দিক তৈমূর আলম ও মামুন মাহামুদ। এদের মধ্যে কেউ কেউ তৈমূর আলমকে ম্যানেজ করেছেন আবার কেউ কেউ মামুন মাহামুদকে ম্যানেজ করেছেন। কেউ কেউ জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে লন্ডনের ভয় দেখাচ্ছেন। ফলে কমিটি ঘোষণা হবে হচ্ছে করেও আর হলো না।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, ফতুল্লা থানা, রূপগঞ্জ উপজেলা, সোনারগাঁও উপজেলা, আড়াইহাজার উপজেলা, সোনারগাঁও পৌরসভা, তারাবো পৌরসভা, কাঞ্চন পৌরসভা, আড়াইহাজার পৌরসভা, গোপালদী পৌরসভা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন তৈমূর আলম খন্দকার ও মামুন মাহামুদ। সার্চ কমিটি গঠন করে তথ্য উপাত্ত্য সংগ্রহও করা হয়। কিন্তু কার্যত কমিটি গঠনে জেলা বিএনপি কিংবা জেলা বিএনপির সার্চ কমিটির তথ্য উপাত্তের কোনো মূল্যই থাকছেনা বিএনপির ধনকুবের নেতা ও মোড়লদের বাধায়।

সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান চাচ্ছেন একক কর্তৃত্ব। মান্নানের অর্থের কাছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরকে আগেই মাইনাস করে দিয়েছে জেলা বিএনপি। অথচ ১/১১ এর সময় জেলা বিএনপির হালদারদের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিলেন আবু জাফর। মান্নানকেই আহ্বায়ক পদটি চূড়ান্ত করে রেখেছেন তৈমূর আলম ও মামুন মাহামুদ। কিন্তু বাধ সেধেছে সদস্য সচিব পদটি নিয়ে। আহ্বায়ক পদটি তৈমূর আলমের পছন্দে মান্নান ও সদস্য সচিব পদটি মামুন মাহামুদের পছন্দে মোশারফ হোসেনকে দেয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মান্নান চাচ্ছেন সদস্য সচিব পদটিও মান্নান অনুগামী সেলিম হক রুমীকে। একইভাবে সোনারগাঁও পৌর কমিটিও নিয়ে নিচ্ছেন মান্নান।

আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির কমিটির একক কর্তৃত্ব চাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন। সুমন নিজেই চাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হতে। আজাদ চাচ্ছেন তার অনুগামীদের হাতে ওঠুক আড়াইহাজারের তিনটি ইউনিট কমিটি। একইভাবে সুমনও চাচ্ছেন সবগুলো কমিটিতে নিজের একক কর্তৃত্ব। এরি মাঝে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার চাচ্ছেন শীর্ষ দুটি পদের একটি ভাগিয়ে নিতে। ফলে সেখানেও আটকে যায় কমিটি।

রূপগঞ্জের তিনটি ইউনিয়ন কমিটি গঠনে নিজেদের সুবিধামত কমিটি গঠন আদায় করতে চান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বর্তমান আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। নিজ নিজ অনুগত নেতাদের হাতে তুলে দিতে চান বিএনপির কমিটি। এরি মাঝে নজরুল ইসলাম আজাদও তার পছন্দের লোককে রূপগঞ্জে শীর্ষ পদে বসাতে চান।

সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে পেছন থেকে হাত বসিয়ে রেখেছেন বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ শাহআলম। দুটি থানা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন। এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী গিয়াস ও শাহআলম। গিয়াসউদ্দীনের পারপার্স সার্ভ করতে চান তৈমূর আলম। দুটি থানায় গিয়াস অনুগামীদের হাতে কমিটি তুলে দিতে চান তৈমূর আলম। আবার সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে নিজের মত করে কমিটি দিতে চান মামুন মাহামুদ। ফতুল্লায় আবার তিনি চান মুহাম্মদ শাহআলমের অনুগামীদের হাতে কমিটি তুলে দিতে। যেখানে তৈমূর আলম মাঠে নেমেছেন গিয়াসউদ্দীনের লোকজনতের হাতে ফতুল্লা থানা কমিটি তুলে দিতে। ফলে আটকে গেছে এই ১০টি ইউনিট কমিটি গঠন।